বুধবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ডিসেম্বরে জাতীয় পার্টির সম্মেলন

লক্ষ্য এরশাদের অবর্তমানে দলকে শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ রাখা

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির জাতীয় সম্মেলন ২৮ ডিসেম্বর। বরাবরের মতো এবারও রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের বাইরে এ সম্মেলনে হবে। পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মরহুম এইচ এম এরশাদের অবর্তমানে দলকে আরও শক্তিশালী এবং ঐক্যবদ্ধ রাখার প্রয়াসে সম্মেলন ঘিরে ব্যস্ত সময় পার করছেন নেতা-কর্মীরা। এদিকে কাউন্সিলে শৃঙ্খলা ধরে রাখার জন্য শুধু চেয়ারম্যান ও সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান পদ ঘোষণা দিতে চায় জাতীয় পার্টি। চেয়ারম্যান হিসেবে জি এম কাদের ও সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান হিসেবে রওশন এরশাদই থাকছেন বলে সূত্রে জানা গেছে। তবে মহাসচিবসহ অন্যান্য পদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে কাউন্সিলের পর। কাউন্সিলে কণ্ঠভোটের মাধ্যমে এসব প্রস্তাব অনুমোদন করিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

জানতে চাইলে জি এম কাদের বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সম্মেলন বর্ণিল আয়োজনের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে। বিশ্বাস করি সম্মেলনের মধ্য দিয়ে পার্টি নতুন করে ঘুরে দাঁড়াবে। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী জাতীয় পার্টি সংসদে ও রাজপথে জনগণের অধিকার আদায়ে সচেষ্ট থাকবে।’

জানা যায়, মহাসচিব পদ নিয়ে যদি কাউন্সিলে কোনো ঘোষণা আসে তাহলে পেশিশক্তির মহড়া হতে পারে। এইচ এম এরশাদের মৃত্যুর পর প্রথম কাউন্সিলে এই ঝুঁকি নিতে চাইছেন না সিনিয়র নেতারা। তারা চাইছেন শান্তিপূর্ণভাবে কাউন্সিল শেষ করতে। পরে দেবর-ভাবি বসে চূড়ান্ত করুক সবকিছু। মহাসচিব পদে বর্তমান মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা, জাতীয় পার্টির সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে মহাসচিবের দায়িত্বে থাকা এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার, সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু ও প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদের নাম আলোচনায় রয়েছে। পার্টির সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করার জন্য নেতা-কর্মীরা এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব পদে ফিরিয়ে আনার জন্য জি এম কাদের ও রওশন এরশাদের বাসায় যোগাযোগ করছেন। এদিকে কয়েক দফা তারিখ পরিবর্তনের পর ২৮ ডিসেম্বর কাউন্সিলের তারিখ চূড়ান্ত করা হলেও ৩৫টি জেলা কমিটির মেয়াদ ইতিমধ্যে উত্তীর্ণ রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সম্মেলন করা কঠিন হবে। কাউন্সিল নিয়ে খুব একটা তোড়জোড়ও দেখা যাচ্ছে না পার্টির অভ্যন্তরে। স্বাভাবিকভাবে কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণার মাসখানেক পেরিয়ে গেলেও এখনো প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়নি। পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, ‘এবার সম্মেলন হবে বর্ণিল ও বর্ণাঢ্য। সারা দেশ থেকে লক্ষাধিক নেতা-কর্মী সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্বে অংশ নেবেন।’ প্রেসিডিয়াম সদস্য এ টি ইউ তাজ রহমান বলেন, ‘এইচ এম এরশাদের শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। এর পরও সাবেক এই রাষ্ট্রপতির অপূর্ণ কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্য সংগঠনকে ঢেলে সাজানোর সব উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করি সফল সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন নেতৃত্ব জাতীয় পার্টিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।’ আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন বলেন, ‘দেশের রাজনৈতিক শূন্যতায় মানুষ এখন জাতীয় পার্টির দিকে তাকিয়ে আছে। আমরা সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করে আগামীতে সরকার গঠন করে দেশবাসীর স্বপ্নের দেশ গঠন করব ইনশা আল্লাহ।’ নেতা-কর্মীরা বলছেন, এরশাদবিহীন প্রথম কাউন্সিলে তারা নানা শঙ্কার মধ্যে রয়েছেন। এখানে সিদ্ধান্তে ভুল হলে চরম মাশুল দিতে হতে পারে। বিশেষ করে রওশন ও কাদেরপন্থিরা ঐকমত্যে না আসতে পারলে মারাত্মক কিছু ঘটে যেতে পারে। কেউ কেউ শঙ্কা করছেন সমঝোতা না হলে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়তে পারে পার্টি।

সর্বশেষ খবর