বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

দরপতনে শেয়ারবাজারে হতাশা

আলী রিয়াজ

কয়েক মাস ধরে চলা টানা দরপতনে চরম হতাশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীরা। বাজারসংশ্লিষ্টদের সব ধরনের উদ্যোগ ব্যর্থতায় পরিণত হয়েছে। আগের দিন ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) বিনিয়োগের ঘোষণায় বড় উত্থান হয় শেয়ারবাজারে। তবে সে উত্থানের পরদিনই গতকাল বড় ধরনের দরপতন হয়েছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই)। কমেছে  লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দর। সেই সঙ্গে কমেছে টাকার অঙ্কে লেনদেনের পরিমাণ। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আস্থাহীনতাই বিনিয়োগকারীদের হতাশাগ্রস্ত করছে। তারল্য সংকটকেও দায়ী করেছেন কেউ কেউ।

জানা গেছে, শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে জুলাই মাস থেকে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা আন্দোলন করছেন। শেয়ারবাজারে অস্বাভাবিক পতনের কারণ অনুসন্ধানে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তদন্ত কমিটি গঠন করে। সর্বশেষ গত সোমবার ডিএসই ব্রোকারস অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) ও আইসিবি কর্মকর্তারা বৈঠক করেন দরপতনের কারণ অনুসন্ধানে। এ ছাড়া মঙ্গলবার ডিএসই, ডিবিএ ও শীর্ষ ব্রোকারেজ প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠক হয়। বৈঠকে একাধিক কারণ চিহ্নিত করে আইসিবি বিনিয়োগের ঘোষণা দেয়। এই খবরে মঙ্গলবার ডিএসইর সূচক ১১০ পয়েন্টের বেশি বাড়ে। এতে কিছুটা আশার সঞ্চার হয়েছিল বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। কিন্তু সেটি টেকেনি। গতকালের লেনদেন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪০ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭৮২ পয়েন্টে। লেনদেন হয়েছে ৩২৪ কোটি ৫৭ লাখ টাকার শেয়ার। লেনদেনে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৫টির শেয়ার দর  বেড়েছে। দর কমেছে ২৫৯টির এবং ৩০টির দর অপরিবর্তিত ছিল। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৭৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৪ হাজার ৫৬৯ পয়েন্টে। সিএসইতে হাতবদল হওয়া ২৪৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দর  বেড়েছে ৬৬টির, কমেছে ১৫৯টি ও অপরিবর্তিত ছিল ২২টির দর। লেনদেন হয়েছে ১৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।

এদিকে, আইসিবি, ডিএসই ও ডিএসই ব্রোকারেজ মালিকদের সঙ্গে দুই বৈঠকে বিগত দিনে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) আসা  কোম্পানিগুলোর দর তলানিতে নেমে যাওয়া নিয়ে আলোচনা হয়। এসব কোম্পানির মান নিয়ে বৈঠকে প্রশ্ন ওঠে। এসব কোম্পানি বাজারে আসার আগে আর্থিক প্রতিবেদন ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে  দেখালেও তালিকাভুক্তির পর তাদের প্রকৃত চিত্র উঠে আসছে। এসব কারণে বাজারে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বাজারের প্রতি আস্থা হারাচ্ছে বিনিয়োগকারীরা। এভাবে বাজারে পতন দীর্ঘায়িত হচ্ছে বলে মনে করছেন তিন প্রতিষ্ঠানের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা। বৈঠকে কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনে আরও স্বচ্ছতা, সুশাসন নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। তাছাড়া ডিএসইকে বার বার ব্যর্থ বলে মন্তব্য করার কারণেও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের আস্থার সংকট সৃষ্টি হচ্ছে বলেও আলোচনা হয়েছে। শেয়ারবাজার পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, শেয়ারবাজারে দরপতনের বড় কারণ বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতা। ব্যাংক খাতের ঋণ সরবরাহ কমে গেছে। এতে অনেক বিনিয়োগকারী ঋণ পাচ্ছেন না। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সাম্প্রতিক অবস্থাও খুব একটা সুবিধাজনক নয়। এ বিষয়গুলোও বাজারে নেতিবাচক প্রভাব  ফেলছে। অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, কারসাজিকারীদের বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষ কোনো শাস্তিমূলক পদক্ষেপ না নেওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছে।

সর্বশেষ খবর