বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা
রংপুরে হাজতে আসামির মৃত্যু

পুলিশ-এলাকাবাসী ব্যাপক সংঘর্ষ

রেজাউল করিম মানিক, রংপুর

রংপুরের পীরগঞ্জের ভেন্ডাবাড়ী পুলিশফাঁড়ির হাজতখানায় শামসুল হক (৫৫) নামে এক আসামির মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ-এলাকাবাসী সংঘর্ষে ফাঁড়ি এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ২৫ রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ে। সংঘর্ষে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল এবং ভিক্ষুকসহ অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছে। গতকাল সকালে মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর এলাকাবাসী থানা ঘেরাও করলে এ সংঘর্ষ বাধে।

নিহতের পরিবারের দাবি, শামসুলকে  মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে গ্রেফতার করে ২ লাখ টাকার চাঁদা চায় পুলিশ। দাবি পূরণ না করায় তাকে পিটিয়ে হত্যা করে গামছা দিয়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখা হয়। এ ঘটনা তদন্তে দুই সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রত্যাহার করা হয়েছে ওই পুলিশফাঁড়ির পাঁচ সদস্যকে। পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, ভে াবাড়ী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ এসআই আমিনুল ইসলাম মিঠাপুকুর উপজেলার শান্তিপুর গ্রামের পশু ব্যবসায়ী শামসুল ইসলামকে বড়দরগা থেকে মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার করেন। গতকাল সকাল ৯টার দিকে পুলিশ খবর দিয়ে জানায়, ফাঁড়ির হাজতখানার গ্রিলের সঙ্গে গামছা ও পাঞ্জাবি পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন শামসুল।

শামসুলের পরিবারের অভিযোগ, গ্রেফতারের পর এসআই আমিনুল তাদের কাছে ২ লাখ টাকা দাবি করেন। দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় পুলিশফাঁড়ির হাজখানায় শামসুলকে পিটিয়ে হত্যা করে গ্রিলের সঙ্গে গামছা ও পাঞ্জাবি পেঁচিয়ে রাখে। এ সময় শামসুলের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা দেখা দেয়। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী পুলিশফাঁড়ি ঘেরাও করে শামসুল হত্যার বিচার দাবি করেন। পুলিশ এলাকাবাসীকে নিবৃত করার চেষ্টা করলে এলাকাবাসী পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। এতে পুলিশের সঙ্গে এলাকাবাসীর তুমুল সংঘর্ষ বাধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ এলাকাবাসীকে বেধড়ক পিটুনি দেয় এবং রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এলাকাবাসী ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এ সময় রাবার বুলেটে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল হাসান, পুলিশের ডি সার্কেলের এএসপি হাফিজ উদ্দিন, ভিক্ষুকসহ অন্তত ৪০ জন আহত হন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাতে বড়দরগায় পুলিশ শামসুলকে ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে গ্রেফতার করলে এলাকাবাসী তাতে বাধা দেন। এ সময় এলাকাবাসী পুলিশকে জানান, তিনি মাদক ব্যবসায়ী নন, একজন পশু ব্যবসায়ী। এর পরও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়।

এ ব্যাপারে ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সকাল ৯টার দিকেও আমি শামসুলের সঙ্গে কথা বলেছি। কিছুক্ষণ পরই গিয়ে দেখি, থানা হাজতের গ্রিলের সঙ্গে গামছা ও পাঞ্জাবি গলায় পেঁচিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তাকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি। তার কাছে কোনো চাঁদাও চাওয়া হয়নি। তিনি মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।’

এ ব্যাপারে রংপুরের পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, ‘ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন আছেন। সার্কেল এএসপি এ ঘটনায় আহত হয়েছেন বলে শুনেছি। আমিও ঘটনাস্থলে আছি। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি জানান, এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মারুফ হোসেনের নেতৃত্বে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। লাশের ময়নাতদন্তের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর