শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বাংলাদেশ থেকে ধান কিনবে ভুটান

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বাংলাদেশ থেকে ধান কিনবে ভুটান

খাদ্যে উদ্বৃত্ত বাংলাদেশ থেকে এবার ধান ও চাল আমদানির বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে ভুটান। দেশটি ৬০ থেকে ৭০ হাজার মেট্রিক টন ধান ও ৭০ মেট্রিক টন জিঙ্ক সমৃদ্ধ চাল আমদানির প্রস্তাব দিয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় খাদ্য রপ্তানির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। গত ৯ অক্টোবর এ চিঠি পাঠানো হয়।

ধান ও চাল রপ্তানির এই প্রস্তাবটি ইতিবাচক উল্লেখ করে বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশ খাদ্যে উদ্বৃত্ত দেশ। এ ছাড়া আমরা দেশ থেকে সুগন্ধি চাল রপ্তানি করছি। এ অবস্থায় সার্কভুক্ত ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বিবেচনা করে দেশটিতে ধান ও চাল রপ্তানির অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। সূত্র জানায়, গত ২৪ থেকে ২৭ জুন সার্কভুক্ত দেশগুলোর কৃষিমন্ত্রী পর্যায়ের ৪র্থ সভা অনুষ্ঠিত হয় ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে। ওই সভার সাইডলাইন বৈঠকে ভুটানের কৃষি ও বনমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে ধান ও চাল আমদানির প্রস্তাব দেন। ওই প্রস্তাবের বিষয়টি উল্লেখ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে কৃষি মন্ত্রণালয় বলেছে, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চাল উৎপাদনে ঊর্ধ্বমুখী ধারা অব্যাহত রয়েছে। চাহিদার চেয়েও চালের উৎপাদন উদ্বৃত্ত থাকছে। কৃষি মন্ত্রণালয় জানায়, বর্তমানে দেশে চালের চাহিদা ৩৩৮ দশমিক ২৩ লাখ মেট্রিক টন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে চাউল উৎপাদন হয়েছে ৩৬২ দশমিক ৭৯ লাখ মেট্রিক টন। উদ্বৃত্ত চালের পরিমাণ ২৪ দশমিক ৫৬ লাখ মেট্রিক টন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২৫ হাজার মেট্রিক টন চাল রপ্তানি করে বাংলাদেশ। এ ছাড়া নেপালে ভূমিকম্পের পর খাদ্য সহায়তা হিসেবে ১০ হাজার মেট্রিক টন চাল অনুদান দেয় সরকার। ভুটানের খাদ্য আমদানির প্রস্তাবটি এমন সময়ে এসেছে যখন বাংলাদেশও চাল রপ্তানির চিন্তা-ভাবনা করছে। গত মৌসুমে দাম না পেয়ে খেতের ধানে আগুন লাগিয়ে দেয় একাধিক জেলার কৃষক। অনেকে উৎপাদন খরচ না পেয়ে খেত থেকে ধান না কাটার সিদ্ধান্ত নেয়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনার উদ্যোগ নেয় সরকার। ওই সময় কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক চাল রপ্তানির বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনা ও রপ্তানিতে উৎসাহ দিতে ২০ শতাংশ প্রণোদনার কথা জানিয়েছিলেন। গত মে মাসে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার সিরাজগঞ্জ সফরে গিয়েও চাল রপ্তানির বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন।

আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (ইফপ্রি) প্রতিবেদন অনুযায়ী, বৈশ্বিকভাবে উৎপাদিত চালের মাত্র ৮ শতাংশ (সাড়ে ৩ কোটি থেকে ৩ কোটি ৭০ লাখ টন) আন্তর্জাতিক বাজারে বেচাকেনা হয়। বৈশ্বিক চালের বাজারে সবচেয়ে বড় বিক্রেতা ভারত। এককভাবে দেশটি প্রায় ৩৪ শতাংশ চাল রপ্তানি করে। এরপর থাইল্যান্ড প্রায় ২৮ শতাংশ, ভিয়েতনাম ১৯ শতাংশ, পাকিস্তান ১১ শতাংশ ও যুক্তরাষ্ট্র প্রায় ৯ শতাংশ চাল রপ্তানি করে। বিশ্ববাজারে বিক্রি হওয়া বেশির ভাগ চালই আতপ ও আঠাযুক্ত। বাংলাদেশে উৎপাদিত চালের ৯৫ শতাংশ সিদ্ধ শক্ত চাল। আন্তর্জাতিক বাজারে এই চালের চাহিদা কম। তবে বাংলাদেশ প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার টন সুগন্ধি চাল মধ্যপ্রাচ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারে রপ্তানি করে।

সর্বশেষ খবর