শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

রংপুরেও ভয়ঙ্কর কিশোর গ্যাং

সক্রিয় ৪০টির বেশি অপরাধী চক্র

রংপুর প্রতিনিধি

রংপুরেও ভয়ঙ্কর কিশোর গ্যাং। বিভিন্ন পাড়া, মহল্লা ও বস্তিতে গড়ে উঠেছে এসব কিশোর গ্যাং। নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডের ৪০টির বেশি গ্যাং কালচার সক্রিয়। এর বড় একটি অংশ মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ ছাড়াও চুরি, ছিনতাই ও ইভ টিজিংসহ নানা অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে র‌্যাবের অভিযানে ছিনতাইয়ের অভিযোগে দুই কিশোরকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেওয়া হয়। নগরীর ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাদকের টাকা জোগাড় করতেই নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে এসব কিশোর। পড়াশোনা থেকে ঝরে পড়া এসব কিশোর স্কুল-কলেজের মোড়ে দলবেঁধে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করে থাকে। বিভিন্ন বাসা-বাড়ি-দোকানে চুরি, রাস্তায় ছিনতাইয়েও ঘটছে এসব কিশোরদের দ্বারা। এদের খপ্পরে পড়া অধিকাংশ মানুষই ঝামেলা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে কোনো অভিযোগ করেন না।

সূত্র জানায়, নগরীর লালবাগ, আসরতপুর, মাহিগঞ্জ, জুম্মাপাড়া, হনুমানতলা, মিস্ত্রীপাড়া, ধাপসহ বিভিন্ন এলাকায় ৪০টিরও বেশি কিশোর গ্যাং রয়েছে। এদের বেশিরভাগই বেড়ে ওঠা নিম্ন আয়ের পরিবারে। পাড়ার বখাটেদের সঙ্গে মিশে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে তারা। এদের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ মাদকাসক্ত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী জানান, মাদকাসক্ত এসব কিশোররা রাতের আঁধারে বাড়ির গ্রিল কিংবা দোকানের সাটার খুলে চুরি করছে। ছোটখাটো চুরি হওয়ায় অনেকেই ঝামেলা মনে করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দ্বারস্থ হয় না। একই অবস্থা ছিনতাইয়ের বেলায়ও। ছিনতাইয়ের শিকার ব্যক্তিরাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে যেতে আগ্রহ দেখায় না। ফলে এদের অপরাধের কোনো পরিসংখ্যান নেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। এরা রাস্তার পাশে কিংবা অফিস পাড়ায় মোটরসাইকেল চোরদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

গত মাসের শেষে নগরীর এক চিকিৎসকের বাসায় স্বর্ণালঙ্কারসহ সাড়ে ৮ লাখ টাকার মালামাল চুরি হয়। পুলিশ ধারণা করে- কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা চুরির সঙ্গে জড়িত। র‌্যাব-১৩-এর রংপুরের সিপিসি কোম্পানি কমান্ডার মোতাহার হোসেন বলেন, ছিনতাইয়ের অভিযোগে দুই কিশোরকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালতে দেওয়া হয়েছে। রংপুর নগরীর কিশোর অপরাধীদের তৎপরতা দমনে র‌্যাবের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। অপরাধীদের অধিকাংশই বস্তি ও নিম্ন আয়ের মানুষের সন্তান। রংপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (সিটি এসবি) শামিমা পারভিন জানান, কিশোর অপরাধ দমনে আমরা সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছি। যে কোনো অভিযোগে আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। এ ছাড়া কিশোর অপরাধ দমনে নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও মনিটরিং করছি। রংপুর জেলা সুজনের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আকবর হোসেন বলেন, কিশোরদের অপরাধ বন্ধে প্রথমে অভিভাবকদের দায়িত্বশীল হতে হবে। অভিভাবকদের কড়া নজরদারি সন্তানদের বিপথে চলা থেকে রোধ করতে পারে। সন্তান কী করে কোথায় যায় এ বিষয়ে অভিভাবকের কঠোর মনিটরিং দরকার। পাশাপাশি স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

সর্বশেষ খবর