শনিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

সচিবালয়ে ভুয়া চাকরির ভাইভা

আট প্রতারক আটক

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাঁকজমকপূর্ণ ভিআইপি এলাকায় অফিস। চোখ ধাঁধানো ডেকোরেশন। অফিসের বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগ করা হবে জানিয়ে গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রকাশ। চাকরি প্রত্যাশীদের শত শত আবেদন। ভুয়া কর্মকর্তারা নেন সাক্ষাৎকার। বিভিন্ন শর্ত দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি। রাজি হলে চাকরি প্রার্থীকে সচিবালয়ের ভিতরে নিয়ে মৌখিক পরীক্ষা শেষ করেন। চুক্তি অনুযায়ী সব টাকা দিলে নিয়োগপত্র প্রদান করেন। ২/১ মাস চাকরি করার পর চাকরি প্রার্থীরা বুঝতে পারেন তাদের নিয়োগপত্র এবং চাকরি উভয়ই ভুয়া। তারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এভাবেই প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে নিঃস্ব হচ্ছেন চাকরি প্রার্থী শত শত বেকার যুবক। গত বৃহস্পতিবার       রাজধানীর উত্তরার সেক্টর-৪ থেকে এমনই একটি প্রতারক চক্রের ৮ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গত কয়েক বছরে তারা তিন কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নিয়েছেন। র‌্যাব-৪ এর সিনিয়র এএসপি মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম সজল জানান, বৃহস্পতিবার উত্তরা থেকে ভুয়া চাকরি প্রতারক চক্রের ৮ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন- গিয়াসউদ্দিন পিন্টু ওরফে আকাশ, মো. হাসান গাজী, মো. বিল্লাল শেখ, শেখ শের আলী রাজু, গনেশ প্রসাদ সাধন, মো. সোহাগ, মো. আজাদুল ইসলাম ও রশি আক্তার।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ভুয়া নিয়োগপত্র, মানি রিসিট, কম্পিউটার, ল্যাপটপসহ প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। প্রতারক চক্রের প্রত্যেক সদস্য নিখুঁত ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেন। চক্রটি অফিসের বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগের জন্য গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেয়। চাকরির জন্য শত শত বেকার যুবক আবেদন করেন। ভুয়া কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করেন।

এরপর কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে চাকরির বিষয়ে বিভিন্ন শর্ত আরোপ করেন। শর্তের বিষয়ে রাজি হলে চাকরির বিনিময়ে মোটা অঙ্কের টাকার বিষয়ে মৌখিক বা লিখিত চুক্তি সম্পন্ন করেন। পরে চাকরি প্রার্থীকে সচিবালয়ের ভিতরে নিয়ে মৌখিক পরীক্ষার কাজ শেষ করেন। চাকরি প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণসহ ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়ে চুক্তি অনুযায়ী সব টাকা গ্রহণ করেন। চাকরি প্রার্থীদের হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়, স্বাস্থ্য সহকারী, স্বাস্থ্য সেবিকা, তাদের অফিসের আঞ্চলিক ম্যানেজার এবং বিভিন্ন ধরনের চুক্তিভিত্তিক, অস্থায়ীভিত্তিক, মাস্টার রোলে ভুয়া চাকরিতে ২/১ মাসের জন্য নিয়োগ এবং বেতন দেন। পরবর্তীতে চাকরি প্রার্থীরা জানতে পারেন তাদের নিয়োগপত্র এবং চাকরি উভয়ই ভুয়া এবং তারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

র‌্যাব আরও জানায়, অভিযানে গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অফিস সহকারী পদে ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে যোগদানের ভুয়া নিয়োগপত্র, এপি ফাউন্ডেশনের মানি রিসিট, গোল্ডেন লাইন মেডিকেল সেন্টারের সিলযুক্ত খালি মেডিকেল চেক-আপ ফরম, এপি ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেডের বাঁধাই করা প্রজেক্ট প্রোফাইল উদ্ধার করা হয়।

প্রতারক চক্রটি এপি ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেডের নকল লোগো ব্যবহার করে এপি ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেডের অধীনে এপি এক্সপোর্ট অ্যান্ড ইমপোর্ট, এপি ফিশারিজ অ্যান্ড এগ্রিকালচার, এপি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, এপি সিকিউরিটি ফোর্স অ্যান্ড ক্লিনার সার্ভিস, এপি ফাউন্ডেশন, এপি ফ্যাশন নামে বিভিন্ন ভুয়া প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে আসছে।

খোদ রাজধানীর উত্তরায় প্রতারণা কাজে ব্যবহারের জন্য তাদের জাঁকজমকপূর্ণ ২টি অফিস এবং জামালপুরে লোক দেখানো ভুয়া ট্রেনিং সেন্টার রয়েছে। চক্রটি গত ৩/৪ বছর ধরে সরলতার সুযোগ নিয়ে শত শত বেকার যুবকের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে। প্রতারণার মাধ্যমে তারা ৩ কোটি টাকারও বেশি হাতিয়ে নিয়েছেন। চক্রের অন্য সদস্যদের ধরতে অভিযান চলছে।

সর্বশেষ খবর