শিরোনাম
রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বঙ্গবন্ধু নদী পদক নিয়ে মন্ত্রণালয় ও কমিশন মুখোমুখি

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

নদীর অবৈধ দখল ও দূষণ রোধে অবদানের জন্য জাতীয় পর্যায়ে ‘বঙ্গবন্ধু নদী পদক’ দিতে চাইছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, যেখানে ভেটো দিয়েছে এ-সংক্রান্ত কমিশন। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন বলছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর মতো সর্বকালের সর্বোচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিত্বের নামে নৌ পদক প্রদানে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। তাড়াহুড়া করে এ ধরনের মহামূল্যবান ও মর্যাদাসম্পন্ন পুরস্কার প্রবর্তন সময়োচিত হবে না বলে মনে করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। বুড়িগঙ্গা, তুরাগসহ রাজধানীর চারপাশের নদ-নদীগুলো অবৈধ দখলমুক্ত করতে নানা ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি সারা দেশের নদ-নদীগুলোর নাব্য বজায় রাখতে ড্রেজিংয়ের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে বুড়িগঙ্গার সদরঘাট ও সংলগ্ন এলাকা দখলমুক্ত করা হয়েছে। নদীর পানিতে ও তীরবর্তী এলাকায় ময়লা-আবর্জনা ফেলায় নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি দূষণ ঠেকাতে লঞ্চ ও স্টিমারের ভিতরে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এসব উদ্যোগকে আরও চাঙা করতেই বঙ্গবন্ধু নদী পদক দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। নৌপরিবহন সচিব আবদুস সামাদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেশের নদ-নদীগুলো রক্ষায় বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এখন এই নদ-নদীগুলো দূষণ ও অবৈধ দখলদারিত্ব থেকে রক্ষা করতে সারা বছর পুলিশ ও সেনাবাহিনী দিয়ে পাহারা দেওয়া যাবে না। নদ-নদী দেশের প্রাণ, এর প্রতি মানুষের ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তুলতে হবে। আমরা মনে করি যেসব ব্যক্তি বা সংস্থা নদী রক্ষায় অবদান রাখবে তাদের এ দায়িত্ববোধ ও ভালোবাসা জাগিয়ে রাখতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নামে জাতীয় পদক দেওয়ার চেয়ে সেরা আর কিছু হতে পারে না। এ কারণে আমরা এ ধরনের উদ্যোগের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এখন নদী রক্ষা কমিশন কেন এর বিরোধিতা করছে তা তারাই ভালো বলতে পারবে।’ গত ১৯ আগস্ট নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন পদকের বিরোধিতা করে যে যুক্তিগুলো দিয়েছে তা হচ্ছে : নদী রক্ষায় এখনো কোনো সেক্টরে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি অর্জন করা কোনো সংস্থা/দফতর/ব্যক্তির পক্ষে সম্ভব হয়নি। তাই এত দ্রুত এ ধরনের পুরস্কার দেওয়া সময়োচিত হবে না। নদী রক্ষার জন্য কমিশন সৃষ্টির পর কার্যক্রম শুরু হয়েছে মাত্র। এখনই নদী রক্ষা পুরস্কার প্রবর্তন করলে জনমনে এ পুরস্কারের বিষয়ে সংশয়, সন্দেহ ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারে। কমিশন কর্তৃক গঠিত উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় নদী রক্ষা কমিটি বর্তমানে সারা দেশে কার্যকর রয়েছ। কার্যকর মূল্যায়নে দেখা যায়, এসব কমিটি এখনো সারা দেশে নদীর অবৈধ দখল, উচ্ছেদ ও উদ্ধার, পুনরুদ্ধার, পানি ও পরিবেশের দূষণ রোধে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। এ-সংক্রান্ত কার্যক্রম মূল্যায়ন হতে আরও কিছু সময় লাগবে। বঙ্গবন্ধু নদী পদক নিয়ে এ ধরনের মতামত দিয়েই শুধু ক্ষান্ত হয়নি কমিশন। মন্ত্রণালয় পদক প্রবর্তনের নির্দেশাবলি দিয়ে জাতীয় বা কেন্দ্রীয় পর্যায়ে যে কমিটির রূপরেখা দিয়েছিল, সেখানেও কমিশনের চেয়ারম্যান, সদস্য ও প্রতিনিধি যাতে না রাখা হয় সে বিষয়ে অনুরোধ জানিয়েছে। বঙ্গবন্ধু নদী পদকের বিষয়ে এ ধরনের নেতিবাচক মত দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সচিব আমিনুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয় জাতীয় পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর নামে যে পদক দিতে চাইছে তা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি বলে কমিশন মনে করছে।’

সর্বশেষ খবর