রবিবার, ২০ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিদ্যুতের স্মার্ট প্রিপেইড মিটার তৈরি হতে যাচ্ছে দেশেই

নিজামুল হক বিপুল

প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে বিদ্যুতের স্মার্ট প্রিপেইড মিটার উৎপাদন হতে যাচ্ছে। এই মিটার উৎপাদন করবে সরকারি মালিকানাধীন ‘বাংলাদেশ স্মার্ট ইলেকট্রিকাল কোম্পানি লিমিটেড’। খুলনায় স্থাপিত এ কারখানায় উৎপাদন কাজ শুরু হবে চলতি মাসেই। এর মধ্য দিয়ে কর্মসংস্থান হবে স্থানীয় বহু মানুষের। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) এবং বিশ্বের অন্যতম স্মার্ট মিটার ও আনুষঙ্গিক প্রযুক্তির প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান চীনের হেক্সিং ইলেকট্রিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে হয়েছে মিটার তৈরির এই কারখানা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মিটার কারখানা স্থাপনের জন্য ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিসভা ফ্যাক্টরি গঠনের অনুমোদন দেয়। ফ্যাক্টরির অনুমোদিত মূলধন হচ্ছে বাংলাদেশি অর্থে ৫০০ মিলিয়ন টাকা। পরিশোধিত মূলধন ২৮৬ মিলিয়ন টাকা। সিঙ্গেল শিফট বিবেচনা করলে এই কারখানা থেকে বছরে অর্ধ মিলিয়ন অর্থাৎ ৫ লাখ পিস মিটার উৎপাদন হবে। ফলে বাংলাদেশকে দেশের বাইরে থেকে আর মিটার ক্রয় করতে হবে না। এই ফ্যাক্টরি মিটারের পাশাপাশি বিভিন্ন বৈদ্যুতিক পণ্য এবং সরঞ্জাম বানাবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, সারা দেশকে শতভাগ বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসার অংশ হিসেবে প্রিপেইড মিটারের কার্যক্রম হাতে নেয় সরকার। এরই অংশ হিসেবে সিস্টেম লস বন্ধ ও বিদ্যুৎ বিল আদায়ের লক্ষ্যে পুরনো পোস্টপেইড মিটারের বদলে প্রিপেইড মিটার বসানো হচ্ছে। সারা দেশে প্রতিটি বিদ্যুৎ গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারের আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, ডিপিডিসি, ডেসকো, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এই প্রিপেইড মিটার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রিপেইড মিটার ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের অপচয় কমিয়ে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে ভূমিকা রাখা যাবে। প্রিপেইড মিটারের সুবিধার কথা তুলে ধরে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গ্রাহক নিজে তার বিদ্যুতের ব্যবহার এবং বিল সম্পর্কে জানতে পারেন। সেই অনুযায়ী বিদ্যুতের অপচয় কমিয়ে নিজের বিদ্যুৎ বিল নিজেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। বিল পরিশোধে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানোর পরিবর্তে রিচার্জের মাধ্যমে এই ভোগান্তি থেকে রেহাই পাবেন। রিচার্জ করা যাবে বিভিন্ন ভেন্ডিং স্টেশন, ব্যাংকের এজেন্ট পয়েন্টে ও মোবাইলের অ্যাপের মাধ্যমে গ্রাহক তার বিদ্যুৎ মিটারের বিল রিচার্জ করতে পারবেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং রাতে ফ্রেন্ডলি আওয়ারের সুবিধা থাকবে। মিটার রিডারদের দৌরাত্ম্য এবং ভুতুড়ে বিলের হাত থেকেও তারা রেহাই পাবেন। বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন, শিল্পনগরী খুলনায় বাংলাদেশ স্মার্ট ইলেকট্রিকাল কোম্পানি লিমিটেডের কারখানা স্থাপন হওয়ায় খুলনা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার কমপক্ষে ২০০ মানুষের কর্মসংস্থান হবে এ ফ্যাক্টরির মাধ্যমে। বাংলাদেশ স্মার্ট ইলেকট্রিকাল কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইঞ্জিনিয়ার শফিক উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এই কারখানা দেশের প্রযুক্তি খাতে একটি নতুন সংযোজন। দেশের প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রতিটি ডিস্ট্রিবিউশন ইউটিলিটিকে তাদের চাহিদা অনুযায়ী মানসম্পন্ন পণ্য তাদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, দেশের চাহিদা মিটিয়ে পরবর্তীতে দেশের বাইরেও মিটার রপ্তানির পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।

সর্বশেষ খবর