সোমবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করবে জাম্বিয়া

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা করবে জাম্বিয়া

রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে (আইসিজে) মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে জাম্বিয়া। এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে এরই মধ্যে আইনজীবীদের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কান্ট্রিজ (ওআইসি) এর পক্ষে জাম্বিয়ার বিচার মন্ত্রণালয়ের আইন বিভাগ আইসিজেতে এই মামলা করবে। এটিই হবে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে প্রথমবারের মতো মিয়ানমারকে অভিযুক্ত করার প্রথম ঘটনা। শুক্রবার নেদারল্যান্ডসের হেগে ‘রোহিঙ্গাদের জন্য বিচার এবং জবাবদিহিতা’ শীর্ষক সেমিনারে জাম্বিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল এবং বিচারমন্ত্রী আবুবাক্কার এম তামবাদু এ কথা বলেন। হেগের ইরাসমাস ইউনিভার্সিটিতে ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল স্টাডিজ এই সেমিনারের আয়োজন করে। এর সহ-আয়োজক ছিল এশিয়া জাস্টিস কোয়ালিশন এবং বাংলাদেশের ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার অব পিস অ্যান্ড জাস্টিস। সেমিনারে তামবাদু বলেন, আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে এই মামলা করার জন্য গত ৪ অক্টোবর আমি আইনজীবীদের নির্দেশনা দিয়েছি। আমি যখন কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শনে যাই, তখন দূর থেকেই গণহত্যার দুর্গন্ধ পেয়েছি। রুয়ান্ডায় চালানো গণধর্ষণ, হত্যা এবং গণহত্যার এক দশক পর রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো গণহত্যার এই দুর্গন্ধ আমার কাছে পরিচিতই মনে হয়েছে।’ তিনি বলেন, নুরেমবার্গ ট্রায়ালে করা ‘আর কখনই না’ প্রতিজ্ঞার ৭৫ বছর পর মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো অপরাধ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতারই চিত্রায়ণ।

রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত অপরাধের জন্য মিয়ানমারকে জবাবদিহি করার প্রয়োজনীয়তার কথা সেমিনারে তুলে ধরেন মিয়ানমারে নিযুক্ত কানাডার বিশেষদূত বব রাই। ওই সেমিনারে বিভিন্ন দেশের ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা, শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মী এবং রোহিঙ্গা নেতাসহ শতাধিক ব্যক্তি আলোচনায় অংশ নেন। অন্যদিকে, গত বুধবার নিউইয়র্কে বাংলাদেশের দূতাবাসে কূটনীতিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে এম মোমেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে মিয়ানমারের বাণিজ্যিক সম্পর্কের বিষয়ে সমালোচনা করেন। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সহানুভূতিশীল হলেও মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কেউ তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। উপরন্তু কয়েকটি দেশ বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও বেড়েছে মিয়ানমারের। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে দেশটিকে যে চাপে রাখার দরকার ছিল- তা কেউই করেনি বলেও অভিযোগ করেন ড. মোমেন।

মিয়ানমারকে চাপ দিতে জাপানের প্রতি আহ্বান : মিয়ানমারকে চাপ দিতে জাপানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচও। মিয়ানমারে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে গতকাল জাপানের টোকিওতে এক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির। গতকাল মানবাধিকার সংস্থাটির এক বিবৃতিতে, রোহিঙ্গা গণহত্যার দায়ে মিয়ানমারকে অভিযুক্ত করে দেশটিতে বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থাকতে জাপানের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। জাপানের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে অং সান সু চির বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট তুলে ধরারও আহ্বান মানবাধিকার সংস্থাটির।

সর্বশেষ খবর