শুক্রবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা
বদলে যাচ্ছে হাওর শেষ

পর্যটকদের অসচেতনতায় হুমকিতে টাঙ্গুয়ার হাওর

মোস্তফা কাজল, সুনামগঞ্জ থেকে ফিরে

পর্যটকদের অসচেতনতায় হুমকিতে টাঙ্গুয়ার হাওর

ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকদের যত্রতত্র ঘুরে বেড়ানো। উচ্চ শব্দে গানবাজনার অনুষ্ঠান। আয়োজন করা হয় জ্যোৎস্না উৎসব। আর হাওরের পানিতে পর্যটকদের ব্যবহৃত পলিথিনসহ নানা ধরনের ময়লা আবর্জনা অবাধে ফেলা হয়। পরিবেশগত সংকটাপন্ন এ হাওরের ঐতিহ্যর দিকে খেয়াল না করে ঘুরে বেড়ান পর্যটকেরা। পরিবেশগত দিক থেকে সংকটাপন্ন অবস্থায় থাকা সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর দিন দিন আরও বিপন্ন হচ্ছে। পর্যটন বিকাশের নামে পরিবেশের প্রতি খেয়াল রেখে এখানে ইকো-ট্যুরিজম বিকাশের কথা থাকলেও ভ্রমণের নামে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক হাওরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এতে হুমকির মুখে পড়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি টাঙ্গুয়ার হাওর। জানা গেছে, ‘ছয় কুড়ি বিল, নয় কুড়ি কান্দা’ নিয়ে গঠিত টাঙ্গুয়ার হাওরের অবস্থান সুনামগঞ্জের সীমান্তবর্তী তাহিরপুর ও ধর্মপাশা উপজেলায়। কান্দাভর্তি সারি সারি হিজল, করচ আর নলখাগড়ার বন। হাওর ভর্তি মাছ, জলচর পাখি। মাছ, গাছ আর পাখি এই হলো টাঙ্গুয়ার হাওর। প্রায় ১০০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই জলাধারটির প্রধান আকর্ষণ জীববৈচিত্র্য। চারটি ইউনিয়নের ১৮টি মৌজা জুড়ে এর আয়তন ১২ হাজার ৬৫৫ হেক্টর। এ এলাকার ৮৮টি গ্রামের প্রায় ৬০ হাজার মানুষ হাওরের ওপর নির্ভরশীল। একেক মৌসুমে হাওরের রূপ একেক রকম। কখনো সবুজ, কখনো রুক্ষ। মৌসুমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হাওরপাড়ের মানুষের জীবনও বদলায়। এই হাওরে প্রতিবছর আসে হাজারো পরিযায়ী পাখি। পাখির কলকাকলিতে মেতে উঠে হাওরের আকাশবাতাস। সুউচ্চ মেঘালয় পাহাড়ঘেঁষা দৃষ্টিনন্দন এই জলাভূমিতে রয়েছে ২৫০ প্রজাতির পাখি, ১৪০ প্রজাতির মাছ, ১২ প্রজাতির ব্যাঙ, ১৫০ প্রজাতির সরীসৃপ এবং হাজারেরও বেশি প্রজাতির অমেরুদ ী প্রাণী। প্রতি বছর শীতকালে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে ৫১ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি আসে এই হাওরে। ১৯৯৯ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরকে ‘পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা’ চিহ্নিত করা হয়েছে। ২০০০ সালের ২০ জানুয়ারি এ হাওরকে ‘রামসার সাইট’ হিসেবে ঘোষণার পর বিশেষ ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে এই হাওরকে আসতে হয়। তবে সবাই এই নিয়ম ঠিকভাবে মানছে না বলে হাওরটি বিপন্নের দিকে যাচ্ছে। সুনামগঞ্জ জেলার ব্যবসায়ী গোলাম কিবরিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে গিয়ে অসচেতন পর্যটকেরা হাওরটিকে আরও বিপন্ন করে তুলছেন।

 গত কয়েক বছর আগে টাঙ্গুয়ার হাওরের চারপাশের মানুষের বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যে পর্যটন শিল্প বিকাশের জন্য সরকারি,  বেসরকারি উদ্যোগ নেওয়া হয়। হাওরের প্রাকৃতিক  সৌন্দর্য উপভোগ করতে বর্ষা ও শীত মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন হাজারো পর্যটক আসছে। পরিবেশগত সংকটাপন্ন এই হাওরের বৈচিত্র্যের দিকে খেয়াল না করে বিষাক্ত দ্রব্য পড়ছে হাওরের পানিতে। এতে দিন দিন হাওরের পানি স্বচ্ছতা হারিয়ে দূষিত হচ্ছে। ক্রমাগত বিলুপ্ত হচ্ছে দেশীয় প্রজাতির অনেক সুস্বাদু মাছও। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাসহ সব জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারকে আরও কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকার মানুষ। টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এখানে ঘুরতে আসা পর্যটকদের নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে রাখার দাবি জানান সুনামগঞ্জ হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায়। সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরকে ইকো-ট্যুরিজমের আওতায় নিয়ে এসে এটিকে সংরক্ষণ করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। শিগগিরই বদলে যাবে এ হাওর। সব ধরনের নৌকা চলাচলে বিধি নিষেধ আরোপ করা হবে। হাওরের তীর এলাকায় বিশ্রামের জন্য শেড নির্মাণ করা হবে। পাশাপাশি রামসার সাইট নামক এই টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ইকো-ট্যুরিজম পরিবেশবান্ধব পর্যটন শিল্প বিকাশের পথে এগিয়ে যাবে এ হাওর। পাশাপাশি পর্যটকের আগমন বেড়ে যাবে।

সর্বশেষ খবর