শনিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা
মানবাধিকার কমিশনের তথ্য

পুলিশ মামলা না নেওয়ার কারণেই লিজার আত্মহত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা না নেওয়ায় থানা থেকে বেরিয়ে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যা করেন কলেজছাত্রী লিজা রহমান (২০)। মৃত্যুর আগে নিজের জবানবন্দিতে লিজা এ কথা জানিয়ে গেছেন। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) আল-মাহমুদ ফয়জুল কবির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাজশাহী মহানগরীর শাহমখদুম থানার বাইরে নিজের শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেন লিজা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় লিজা মারা যান। তার মৃত্যুর কারণ নিয়ে তদন্ত করছে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন। চার সদস্যের তদন্ত কমিটি ২ অক্টোবর রাজশাহীতে এসে প্রথম দফায় তদন্ত করে। পরে বৃহস্পতিবার তারা আবার রাজশাহী এসে শাহমখদুম থানার দুই পুলিশ সদস্য, পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের চারজন, ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী চারজন, লিজার কলেজের অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট আরও কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেন। গতকাল তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক আল-মাহমুদ ফয়জুল কবির নগরীর একটি রেস্ট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেন। তিনি জানান, লিজা রহমান ডাইং ডিক্লিয়ারেন্সে বলেছে, তার মামলা না নেওয়ার কারণে, পুলিশ নারাজ ছিল মামলা নেওয়ার ব্যাপারে, সে জন্যই সে এই পথ বেছে নিয়েছে। অবশ্য পুলিশের তদন্ত সে কথা বলছে না। লিজার গায়ে আগুন দেওয়ার পর রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার সালমা বেগমকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ব্যাপারে পুলিশের কোনো গাফিলতি নেই। আল-মাহমুদ ফয়জুল কবির বলেছেন, গরমিল আছে পুলিশের দেওয়া তথ্যে। শাহমখদুম থানার পুলিশ এবং ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের পুলিশের সরবরাহকৃত তথ্য-উপাত্ত যেমনÑ ভিডিও ফুটেজ, এজাহার, জিডির কপি এবং তাদের সাক্ষীর মধ্যে গরমিল রয়েছে। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার আবদুল লতিফ বিশ্বাসের পালিত মেয়ে লিজা রাজশাহী মহিলা কলেজের বাণিজ্য বিভাগের ছাত্রী ছিলেন। নগরীর পবাপাড়া এলাকার একটি মেসে থাকতেন। তার স্বামী সাখাওয়াত হোসেন (২০) চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার খানদুরা গ্রামের খোকন আলীর ছেলে। সাখাওয়াত রাজশাহী সিটি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। সাখাওয়াতও রাজশাহীতে একটি ছাত্রাবাসে থাকতেন। পরিবারকে না জানিয়েই লিজাকে বিয়ে করেন সাখাওয়াত। লিজার বাবা রাজনৈতিক মামলায় কারাগারে আছেন। এ অবস্থায় টাকা-পয়সার সংকটে তার লেখাপড়া বন্ধের উপক্রম হয়েছিল। অন্যদিকে স্বামীও তার দায়িত্ব নিতে চাইছিল না। ফলে দুজনের দেখা হলেই ঝগড়া হতো। সম্প্রতি স্বামী তাকে নির্যাতন করেন। এ নিয়ে থানায় অভিযোগ করতে গিয়েছিলেন লিজা। সেখানে ডিউটি অফিসার তার অভিযোগ রেকর্ড না করায় ওসির সঙ্গেও দেখা করেন লিজা।

কিন্তু ওসি তাকে পাত্তা না দিয়ে থানা চত্বরেই পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে গিয়ে অভিযোগ দিতে বলেন। পরে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে যান লিজা। সেখানেও কেউ তাকে পাত্তা দেননি। ফলে লিজা সেখান থেকেও বের হয়ে যান। এরপর থানা থেকে প্রায় ১০০ গজ দূরে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেন লিজা। এ ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলায় লিজার স্বামী সাখাওয়াত হোসেন, শ্বশুর মাহবুবুল হক খোকন ও শাশুড়ি নাজনীন আক্তারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

সর্বশেষ খবর