রবিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

আবর্জনার ডাম্পিং জোন মহাসড়ক

কেমন আছেন সাভারবাসী ১

মোস্তফা কাজল, সাভার থেকে ফিরে

আবর্জনার ডাম্পিং জোন মহাসড়ক

ময়লা-আবর্জনার ডাম্পিং জোনে পরিণত হয়েছে সাভারের ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক। এ সড়কে চলাচলকারী হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এসব ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। এ মহাসড়কের পাশে সাভার উপজেলার অবস্থান। এ কারণে রাজধানীর উপকণ্ঠের সাভার পৌরসভা ও উপজেলা যেন ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। ময়লা ফেলার নির্ধারিত জায়গা ও ডাস্টবিনের অভাবে আবর্জনার স্তূপ তৈরি হয়েছে সেসব জায়গায়। নিয়মিত পরিষ্কার না করায় দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ সাভারবাসী। এ অঞ্চলের মানুষকে নাকে রুমাল দিয়ে চলাচল করতে হয়। এভাবে সাভারের ঢাকা-আরিচা, নবীনগর-চন্দ্রা ও আবদুল্লাহপুর-বাইপাইল মহাসড়কের পাশে গড়ে উঠেছে অর্ধশতাধিক ময়লার ভাগাড়। দিন যত যাচ্ছে মহাসড়কের দুই পাশে ময়লার স্তূপ তত বড় হচ্ছে। স্থানীয় হাটবাজার, পাড়া-মহল্লা, এমনকি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বর্জ্য ফেলার স্থান হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে মহাসড়ককে। ফলে সড়কের দুই পাশের বাতাস হয়ে উঠছে বিষাক্ত। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে উৎকট গন্ধে। এতে ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য। বিশেষ করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাসহ পথচারীদের চরম ভোগান্তি পোহোতে হচ্ছে। সাভার পৌরসভার অব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিদিন শত শত টন ময়লা-আবর্জনা ফেলা হচ্ছে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ওপর। এ অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হলেও ময়লা-আবর্জনা সরানোর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না প্রথম শ্রেণির মর্যাদাপ্রাপ্ত সাভার পৌরসভা। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, প্রতিদিন সকালে পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং বাসাবাড়ির লোকজন বিভিন্ন এলাকার মার্কেট ও মহল্লা থেকে এসব ময়লা-আবর্জনা এনে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের দুই পাশ কর্ণপাড়া, উলাইল, ডিপজল ফুডের সামনে, সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের রাজ্জাকের কাঁচাবাজারের সামনে মহাসড়কের ওপর, রাজালাক ফার্মের পুকুরে, ব্যাংক টাউন ব্রিজের গোড়ায়, গেন্ডা, পাকিজা, শিমুলতলা, রেডিও কলোনি, সিএনবি এলাকায় মহাসড়কের ওপর ফেলছে ময়লা। এ ছাড়া বিরুলিয়া রোডের আইচা-নোয়াদ্দা ব্রিজের গোড়ার দুই পাশসহ পৌর এলাকার ভিতরের আরও বিভিন্ন সড়কের পাশে এসব আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। ফলে ওই সব এলাকাসহ মহাসড়কের ওপরে এসব ময়লা-আবর্জনার স্তূপ থেকে দুর্গন্ধে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন পথচারীসহ বিভিন্ন যানবাহনে চলাচলরত যাত্রী এবং এসব এলাকার বসবাসকারী ও গার্মেন্টস শ্রমিকরা। দুর্গন্ধের কারণে ডায়রিয়াসহ অন্যান্য পেটের পীড়া হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আমজাদুল হক। সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের দিলখুশা সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম তালুকদার জানান, এ মার্কেটের পাশে রাজ্জাক মিয়া কাঁচাবাজারের সামনে ময়লা-আবর্জনার স্তূপ রয়েছে। দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ আগত নারী-পুরুষ সবাই। ফলে ক্রেতারা মার্কেটে প্রবেশ করতে চান না। কমে গেছে বেচা-বিক্রি। তিনি সংশ্লিষ্টদের নিয়মিত ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার রাখার অনুরোধ জানান। পোশাকশ্রমিক বেগম জোছনা বানু বলেন, চৌরঙ্গী মার্কেটের সামনে সড়কে স্তূপ করে রাখা ময়লা-আবর্জনা ও মরা মুরগির গন্ধে চলাচল করতে কষ্ট হয়। মুখ চেপে শ্বাস বন্ধ করে হাঁটতে হয়। তিনি বলেন, ‘সকালে হাজার হাজার পোশাকশ্রমিক এখান দিয়ে চলাচল করে। আমরা দুর্গন্ধ থেকে পরিত্রাণ চাই। আবর্জনার পাশে হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাটবাজার, আবাসিক এলাকাসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা থাকলেও এটা নিয়ে পৌরসভার সংশ্লিষ্টদের কোনো মাথাব্যথা নেই।’ পৌরবাসীরা জানান, এসব সরানোর জন্য পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কাছে বহুবার আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু তাতে পৌর কর্তৃপক্ষের কোনো সাড়া বা অপসারণের কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। তবে মহাসড়ক দিয়ে যখন কোনো মন্ত্রী যাতায়াত করেন তখন অথবা বিশেষ বিশেষ দিনে ময়লা-আবর্জনা অন্যত্র সরিয়ে নিতে দেখা গেছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, যারা ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের কাজে নিয়োজিত আছেন, তাদের নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা ফেলতে বলা হয়েছে। কিন্তু তারা সব আবর্জনা নির্দিষ্ট স্থানে না ফেলে মহাসড়কের পাশে স্তূপ করছেন। প্রতিদিন যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে সড়কে চলাচল করতে অনেক সমস্যা হয় এলাকাবাসীর। গাড়িতে চলাচল করতে হলেও নাক-মুখ চেপে রাখতে হয়। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন পৌর ও উপজেলার বাসিন্দারা। জানতে চাইলে সাভার পৌরসভার মেয়র হাজী আবদুল গনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পৌরসভা এলাকায় প্রায় ১০ লাখ লোকের বসবাস। পৌরসভায় নেই কোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। থাকলে হয়তো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেত। এ ছাড়া পৌরসভায় ময়লা ফেলার গাড়ি ও জনবল সংকট থাকার কারণে ডাম্পিং জোনে ময়লা ফেলা হচ্ছে না। নির্দিষ্ট স্থানে ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য পৌরবাসীকে পরামর্শ দেন তিনি।

সর্বশেষ খবর