সোমবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

দখল-দূষণে শেষ বংশী নদী

কেমন আছেন সাভারবাসী ২

মোস্তফা কাজল, সাভার থেকে ফিরে

দখল-দূষণে শেষ বংশী নদী

৬৫ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান গিলে খাচ্ছে রাজধানীর উপকণ্ঠের সাভারের বংশী নদী। এ নদীর বিরাট এলাকা প্রভাবশালীদের দখলে থাকলেও উদ্ধারে উদ্যোগ নেই। সরকারিভাবে নদী দখলদারদের ৬৫ জনের তালিকা প্রস্তুত করে নোটিস দেওয়া হলেও তারা এতে কর্ণপাত করছেন না। বরং নদীর দুই পাড়ে সমান তালে চলছে দখল ও ভরাট। পাশাপাশি বিভিন্ন কল-কারখানার বর্জ্য নদীতে পড়ায় দূষণ বাড়ছে। নির্মাণ করা হচ্ছে অবৈধ স্থাপনা। নদীর মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে দেদার। এসব কারণে ভালো নেই সাভার উপজেলার ৪০ থেকে ৪২ লাখ বাসিন্দা। অনেকে বলছেন, একদিকে দূষণ, অন্যদিকে দখলের প্রতিযোগিতায় আজ বংশী নদী হুমকির মুখে। নদীর সাভার থানা ঘাট থেকে শুরু করে নামাবাজার হয়ে বাঁশপট্টি পর্যস্ত অংশ এখন দখলদারদের নিয়ন্ত্রণে। এসব নিয়ে পরিবেশবাদীরা আন্দোলন করলেও সুফল মিলছে না। গত বছর ২৭ সেপ্টেম্বর সাভার ভূমি অফিসের সর্বশেষ ৬৫ জন নদী দখলদারের তালিকায় নাম রয়েছে। ঢাকার উত্তরের বিশাল এলাকাজুড়ে প্রবাহিত এ নদী এখন শিল্পবর্জ্য ও অবৈধ দখলদারের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে পরিত্যক্ত শিল্পবর্জ্য দূষণ ও অবৈধ দখলদারদের কারণে একসময়ের খরস্রোতা বংশী আজ হুমকির মুখে। বর্তমানে যেসব নদীর জলপ্রবাহ শুষ্ক মৌসুমে মরে যায় তার মধ্যে সাভার-আশুলিয়ার বংশী নদী অন্যতম। সাভার, ধামরাই, আশুলিয়া ও সিংগাইরসহ বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে প্রবাহিত বংশী নদী ঘিরে হাজার হাজার মানুষ একসময় জীবিকা নির্বাহ করত। ঐতিহ্যবাহী এ নদীটি শিল্পবর্জ্য ও দখলদারের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হওয়ায় বেঁচে থাকার আশায় যেন চিৎকার করে কাঁদছে। এ দেশের রপ্তানি আয়ের অজুহাতে অপরিকল্পিত শিল্প-কারখানা স্থাপনের পর এসব শিল্পের বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলে লাখ লাখ মানুষের বেঁচে থাকার অবলম্বন বংশী নদীকে দিনে দিনে গলাটিপে হত্যা করা হচ্ছে। অনেক শিল্প-কারখানায় পানি শোধনাগার থাকলেও রীতিমতো তারা তা ব্যবহার করছে না। সরাসরি দূষিত পানি নদীতে ফেলে দিচ্ছে। সরেজমিন দেখা যায়, সাভারের আমিন বাজারের তুরাগ নদীর প্রান্ত থেকে ধামরাই এলাকাজুড়ে বিস্তীর্ণ প্রায় ৪০ কিমি দীর্ঘ এ বংশী নদী। বিগত কয়েক বছর ধরে অবৈধ দখলদাররা নদী দখলের মহোৎসবে মেতে উঠেছে। বিভিন্ন সরকার নদীদূষণ রোধে শিল্প-কারখানাগুলোকে বর্জ্য ফেলতে নিজস্ব ডাম্পিংয়ের ব্যবস্থা করতে বলেছে। পাশাপাশি যেসব কারখানা থেকে বর্জ্য নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে, তাদের বর্জ্য পরিশোধন প্লান্টের (ইটিপি প্লান্ট) মাধ্যমে দূষিত বর্জ্য পরিশোধন করে নদীতে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে। সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও প্রভাবশালী শিল্পমালিকরা তাদের শিল্পবর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলে পরিবেশ দূষণ করছে। হেমায়েতপুর থেকে সাভার পৌর এলাকা, নয়ারহাট, আশুলিয়ার শিল্পাঞ্চল, ডিইপিজেডসহ কয়েক শতাধিক গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা বিষাক্ত বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলছে। এর মধ্যে অল্প কিছু ডাইং ফ্যাক্টরি আছে, যাদের নিজস্ব ডাম্পিং ব্যবহারসহ বর্জ্য পরিশোধনের ব্যবস্থা রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, বর্জ্য পরিশোধন ব্যয়বহুল হওয়ায় কিছু ডাইং ইন্ডাস্ট্রির মালিক বর্জ্য পরিশোধন প্লান্ট (ইটিপি প্লান্ট) বসালেও তা ব্যবহার না করে অভিনব কায়দায় সরকারের চোখ ফাঁকি দিয়ে বিষাক্ত বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলছে। একটি ইটিপি প্লান্টে প্রতিদিন কয়েক হাজার ডলার মূল্যের ওষুধ ব্যবহার করতে হয়। একটি ডাইং ফ্যাক্টরিতে বর্জ্য পরিশোধন করতে মাসে প্রায় ৪০ লাখ টাকার ওষুধ ক্রয় করতে হয়। উৎপাদন ব্যয় কমাতে আর বেশি লাভের আশায় দেশের নদীকে ধ্বংস করছে তারা। সাভার নামাবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, নদীর তীর দখল করে কয়েকশ পাকা ও আধাপাকা বসতবাড়ি, দোকানপাট এবং স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এসব দখলদারের মধ্যে সরকারি ও বিরোধী দলের প্রভাবশালী নেতারাও রয়েছেন। তারা নদীর তীর দখল করে ইট, খোয়া, বালু ফেলে ছোট ছোট কারখানা গড়ে তুলেছেন। এ ছাড়া শিল্পবর্জ্যরে দূষণের কারণে বংশী নদীর পানি কালচে রং ধারণ করেছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর