সোমবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বেগুন-মুলায় সয়লাব সাতমাইল হাট

ফলন ও দামে খুশি চাষিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর

বেগুন-মুলায় সয়লাব সাতমাইল হাট

মঙ্গলবার সকালে সদর উপজেলার আমবটতলা বেলেরমাঠ এলাকার অহিদুল ইসলাম তার খেতের বেগুন ও মুলা বিক্রির জন্য এনেছেন সাতমাইল হাটে। রোদ ওঠার আগেই তার সবজি বিক্রি শেষ। মুখে সব সময় হাসি লেগে থাকা অহিদুল বললেন, শীত আসার আগেই বিক্রির জন্য আট বিঘা জমিতে বেগুন ও মুলা চাষ করেছিলেন। ফলন খুবই ভালো হয়েছে। সকালে বেগুন ৪০ টাকা ও মুলা ১৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন পাইকারদের কাছে। মুলার দাম আরেকটু বেশি পাবেন বলে আশা করেছিলেন। তবে বেগুনে বিঘাপ্রতি এক থেকে দেড় লাখ টাকা লাভ থাকবে বলে জানালেন। বললেন, মুলা ও বেগুনের পর তিনি তার খেতে ফুলকপি, বাঁধাকপি, লালশাক, ডাঁটাশাক ও মসুর চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সদর উপজেলার মথুরাপুর গ্রামের বশিরউদ্দিন এদিন হাটে তুলেছেন পেঁপে, মুলা ও বেগুন। এবার তিনি আড়াই বিঘা জমিতে পেঁপে, দেড় বিঘা জমিতে মুলা ও এক বিঘা জমিতে বেগুনের চাষ করেছেন। মঙ্গলবারের হাটে তিনি বেগুন ৩৫ টাকা, পেঁপে ৯ টাকা ও মুলা ১৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। সবজির এ দামে খুশি বশিরউদ্দিনও। বললেন, ‘গতবারের তুলনায় এবার ফলন অনেক ভালো হয়েছে। এখন একই জমিতে পটোল চাষের প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ তীরের হাট গ্রামের সবজিচাষি তরিকুল ইসলামও হাটে তুলেছেন বেগুন ও মুলা। ১৪ কাঠা জমিতে বেগুন ও দেড় বিঘায় মুলা চাষ করেন তিনি। তিনি বেগুন বিক্রি করেছেন ২৮ টাকা এবং মুলা ২০ টাকা কেজি দরে। একই গ্রামের মোহাম্মদ বিল্টু বেগুন ও মুলার পাশাপাশি হাটে তুলেছেন পটোল ও ধনেপাতা। এবার তিনি বিঘাপ্রতি ৩০ মণ বেগুন পেয়েছেন। বললেন, কিছুদিনের মধ্যেই এই একই জমিতে তিনি পিয়াজ, রসুন, মসুরি ও কচু চাষ করবেন। গওহরপাড়ার ইসমাইল হোসেন হাটে তুলেছেন মরিচ, বেগুন ও শিম। মঙ্গলবার সকালে সদর উপজেলার সাতমাইল হাটে গিয়ে দেখা যায়, শীতের আগেই এসব সবজিতে সয়লাব হয়ে গেছে হাট। সবজির মধ্যে বেগুন ও মুলার আধিক্যই বেশি। হাটবার রবি ও বৃহস্পতিবারে তো এখানে বেগুন, মুলার পাহাড় জমে যায়। অন্য দিনগুলোতেও থাকে নানা রকম সবজির স্রোত। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার আগাম শীতের সবজির ফলন হয়েছে খুবই ভালো। অন্যান্যবারের তুলনায় এবার মোটামুটি ন্যায্য দাম পেয়ে খুশি চাষিরা।

কয়েক দশক ধরেই সবজি উৎপাদনে শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে যশোর জেলা। এখানকার সদর, চৌগাছা, মণিরামপুর, শার্শা ও বাঘারপাড়া উপজেলায় সারা বছরই চাষ হয় ২০ রকমেরও বেশি সবজি, যা যশোর ও আশপাশ এলাকার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্তত ২০টি জেলায় পাঠানো হয়।

সাতমাইল হাটের ব্যবসায়ী চৌগাছার হারুন হোসেন চাষিদের কাছ থেকে সবজি কিনে ট্রাক বোঝাই করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠান। তিনি বলেন, ‘সোম, মঙ্গল, শুক্র এই তিন দিন সাতমাইল হাটে সবচেয়ে বেশি সবজি কেনাবেচা হয়। এই কদিন শতাধিক ট্রাক সবজি সাতমাইল হাট থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। এ ছাড়া প্রতিদিনই ১৫ থেকে ২০ ট্রাক সবজি যায় যশোরের বাইরে। আরেক পাইকার শরীয়তপুরের জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সাতমাইল হাট থেকে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও শরীয়তপুর, মাদারীপুর, সিলেট, বরিশাল, খুলনা, রাজশাহী, গোপালগঞ্জসহ আরও অনেক জেলায় সবজি যায়। কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, যশোরে সবচেয়ে বেশি সবজি চাষ হয় সদর, বাঘারপাড়া ও চৌগাছা উপজেলায়। এসব উপজেলার হাজারো কৃষক সারা বছর ৫ থেকে ৬ লাখ মেট্রিক টন নানা জাতের সবজি উৎপাদন করেন। যশোর ও আশপাশ এলাকায় ৩ থেকে ৪ লাখ মেট্রিক টন সবজির চাহিদা রয়েছে। বাকি সবজি দেশের বিভিন্ন জেলায় চলে যায়। সদর উপজেলার সাতমাইল, বারিনগর, মানিকদিহি, হৈবতপুর, তীরেরহাট, চূড়ামনকাটি, আমবটতলাসহ কয়েক শ গ্রাম মাঠের পর মাঠ সবজিতে ভরা থাকে সব সময়। যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক এমদাদ হোসেন বলেন, যশোরে এবার ৬ হাজার হেক্টর জমিতে নানা রকম আগাম শীতের সবজি চাষ করেছেন চাষিরা। ইতিমধ্যে শীতকালীন সবজি চাষের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। এবারের শীতে ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে নানা রকম সবজির চাষ হবে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর আশা করছে।

সর্বশেষ খবর