শিরোনাম
সোমবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

তোপের মুখে মেনন বললেন ষড়যন্ত্র

নিজস্ব প্রতিবেদক

তোপের মুখে মেনন বললেন ষড়যন্ত্র

দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের তোপের মুখে পড়েছেন ‘ক্যাসিনোকান্ডে বিতর্কিত’ ১৪-দলীয় জোটের অন্যতম নেতা বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি। রাজনীতির কাঠগড়ায় তির্যক সমালোচনায় বিদ্ধ মেনন অকপটে নিজের ভুলত্রুটি স্বীকার করেছেন। আবেগতাড়িত কণ্ঠে ক্ষমা চেয়ে প্রবীণ এই বামপন্থি নেতা বলেছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। আমি ক্যাসিনোকান্ডে জড়িত নই।’ আগামী ২ নভেম্বর চার দিনব্যাপী দশম কংগ্রেস সামনে রেখে আবারও ভাঙতে শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ মিত্র বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। কংগ্রেসের আগে দলের ভাঙন ঠেকাতে গতকাল শেষ হওয়া দুই দিনব্যাপী কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় মেনন তার ভুলত্রুটি স্বীকার করেন। এ প্রসঙ্গে রাশেদ খান মেনন গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কমিটির সভা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। যেসব ঝামেলা ছিল, সেগুলো সুন্দরভাবে নিরসন করতে সক্ষম হয়েছি। কংগ্রেস নিয়ে আর কোনো ঝামেলা নেই। কারণ কংগ্রেস নিয়ে মত ও ভিন্নমতের সবাই কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় অংশ নিয়েছিলেন।’ তবে সভায় অংশ নেওয়া দলটির একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে বলেন, সভার শুরুতে ওয়ার্কার্স পার্টির অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা দাবি করেন, মেনন বরিশালে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা অত্যন্ত সঠিক ও যৌক্তিক। দলের সভাপতি হিসেবে মেননের ইউটার্ন নেওয়া ঠিক হয়নি। দলীয় প্রধান হিসেবে তিনি তো সত্য বলেছেন। ১৪ দল মেননকে শোকজ দিতে পারে না। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাশেদ খান মেনন বলেন, এ নিয়ে তেমন গুরুত্বপূর্ণ কোনো আলোচনা হয়নি। সূত্র জানায়, ওয়ার্কার্স পার্টির ওই আলোচনায় আরও ওঠে আসে দলীয় শৃঙ্গলা ভঙ্গে মেননের কর্মকান্ডের বিষয়টি। ফ্রি-স্টাইলে সদস্যপদ প্রদান, অনিয়ম ও দুর্নীতি ইস্যুতে আলোচনায় কেন্দ্রীয় নেতাদের তোপের মুখে পড়েন মেনন। এর সঙ্গে সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের ক্যাসিনোকান্ডে নাম আসা নিয়েও তুমুল সমালোচনা হয়েছে। এসব সমালোচনার জবাবে আবেগঘন স্মৃতিকাতর বক্তব্যের আশ্রয় নিয়ে রাশেদ খান মেনন দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তিনি ক্যাসিনোর সঙ্গে জড়িত নন। মেননের আহ্বান ছিল, ‘আসুন, আমরা আমাদের পার্টিকে ধরে রাখি। কংগ্রেস সফল করি।’ সভায় অংশ নেওয়া ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর অন্যতম নেতা ইকবাল কবির জাহিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা বলেছি, কংগ্রেস ঘিরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি স্টাইলে সদস্যপদ দেওয়া হয়েছে। পার্টির অস্তিত্ব সংকট, লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়া, সুবিধাভোগী চক্র গড়ে ওঠা, সরকারের লেজুড়বৃত্তি, জনস্বার্থ পরিপন্থী কর্মকা- নিয়ে জনবিচ্ছিন্নতার প্রতিবাদ করেছি।’ একই কথা বলেছেন অন্য একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা। জবাবে রাশেদ খান মেনন স্বভাবগত কারণেই একটি আবেগঘন বক্তব্য দিয়েছেন। এর আগে ওয়ার্কার্স পার্টিতে আদর্শবিরুদ্ধ কর্মকা-, কৌশলের নামে নীতিকে জলাঞ্জলি, গণতন্ত্রের চর্চার নামে অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে দল চালানোর অভিযোগ এনে ২২ অক্টোবর নিজের প্রাথমিক সদস্যপদ প্রত্যাহার করেন দলটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পলিটব্যুরোর প্রভাবশালী সদস্য বিমল বিশ্বাস। তিনিও নতুন করে কমিউনিস্ট ও বাম ঐক্য গড়ে তোলার ডাক দিয়েছেন। মূলত দশম কংগ্রেস সামনে রেখে দুর্নীতি, আর্থিক অনিয়ম, সুবিধাবাদ ও ক্ষমতা ভাগাভাগির দ্বন্দ্বে আবারও ওয়ার্কার্স পার্টির এই ভাঙন দৃশ্যমান হয়েছে দুই পক্ষের পৃথক রাজনৈতিক দলিলে। মেনন দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে স্ত্রীকে এমপি বানিয়ে সবচেয়ে বেশি সমালোচনায় বিদ্ধ হয়েছেন। দলে আছে দ্বন্দ্ব-বিভক্তি। হতাশ ত্যাগীরা। প্রকাশ্যে এসেছে মতানৈক্য, কোন্দল।

এ প্রসঙ্গে ওয়ার্কার্স পার্টিকে সদ্য বিদায় জানানো বিমল বিশ্বাসের দাবি, ওয়ার্কার্স পার্টির মূল নেতৃত্ব আওয়ামী লীগের সঙ্গে কৌশলগত ঐক্যকে কাজে লাগিয়েছে এমপি ও মন্ত্রী হওয়ার জন্য। অগণতান্ত্রিক পথেই পার্টি পরিচালিত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে যে আদর্শিক, রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক পার্থক্য, তা দূরীভূত হওয়ার নয়।

চিঠির জবাব দিলেন মেনন : ১৪-দলকে চিঠির জবাব দিয়ে সম্প্রতি বরিশালে দেওয়া বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। গতকাল সন্ধ্যায় প্রতিনিধির মাধ্যমে বিস্তারিত তুলে ধরে ১৪-দলের সমন্বয়ক আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের ধানমন্ডির বাসায় চিঠির জবাব পাঠান তিনি। এর সত্যতা স্বীকার করে মেনন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আমার এক বক্তব্যের ব্যাখ্যা চেয়েছিলেন ১৪ দলের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিম। গতকাল আমি চিঠির জবাবে আমার অবস্থান পরিষ্কার করেছি।’

মেননের আসন শূন্য ঘোষণা করে পুনর্নির্বাচন দাবি : রাশেদ খান মেননের সংসদ সদস্য পদ বাতিল করে ঢাকা-৮ আসনের পুনর্নির্বাচন দাবি করেছেন ন্যাশনাল কংগ্রেস বাংলাদেশের (এনসিবি) চেয়ারম্যান ছাবের আহাম্মদ ওরফে কাজী ছাব্বীর। গতকাল রাজধানীর মুগদায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান। এ সময় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মো. ইউসুফ আলী চৌধুরী, মাহফুজা আক্তার বীণাসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা-৮ আসনে পুনরায় নির্বাচন দিয়ে সংবিধানের আলোকে জনগণের প্রত্যাশিত প্রতিনিধি নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য স্পিকার ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের প্রতি আহ্বান জানান এনসিবি চেয়ারম্যান।

সর্বশেষ খবর