বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০১৯ ০০:০০ টা

লেপ কাঁথা নিয়ে ভিসির বাসার সামনে ছাত্ররা

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে গণরুম প্রথা বিলুপ্ত করে প্রথম বর্ষ থেকে বৈধ সিটের দাবিতে গতকাল সকালে উপাচার্য ভবনের সামনে অবস্থান নেন গণরুমের শিক্ষার্থীরা। ডাকসুর সদস্য তানভীর হাসান সৈকতের নেতৃত্বে তোশক-বালিশ নিয়ে প্রায় তিন ঘণ্টা সেখানে অবস্থানের পর উপাচার্যের প্রতিশ্রুতির পরিপ্রেক্ষিতে সরে যান তারা। তবে হলগুলোর আবাসন সংকটের অচিরেই দৃশ্যমান কোনো সমাধান দেখা না গেলে আবারও আন্দোলনে ফেরার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে সকাল ১০টা থেকে তানভীর হাসান সৈকতের নেতৃত্বে উপাচার্য ভবনের সামনে আসেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় বাসভবনে প্রবেশ করতে চাইলে সেখানে দায়িত্বরত নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা তাদের বাধা দেন। পরে আন্দোলনকারীরা বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় তাদের ‘যাচ্ছি পচে গণরুমে, এখানে নাকি স্বপ্ন জমে’, ‘গণরুমের বঞ্চনা, মানি না মানব না’, ‘গণরুমে আমরা থাকি, প্রশাসন খায়-দায় ঘুমায় নাকি’, ‘আমরা এখন চুপসে গেছি, জ্ঞানশূন্য কালো মাছি’ প্রভৃতি লেখা প্লাকার্ড প্রদর্শন করতে দেখা যায়। একপর্যায়ে হল থেকে নিজেদের তোশক-বালিশ নিয়ে এসে বাসভবনের গেটের সামনে বিছিয়ে অবস্থান করতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। তবে উপাচার্য এ সময় বাসভবনে ছিলেন না।

আন্দোলনকারীরা বলেন, ‘গণরুমে থাকার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আমরা উপাচার্যের বাসায় উঠতে এসেছি। তিনি না থাকায় বাধ্য হয়ে বাসভবনের সামনেই অবস্থান নিয়েছি। আমরা গণরুম বন্ধ করে শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা সমাধানের দাবি জানাচ্ছি।’ অবস্থানকালে সহকারী প্রক্টর সীমা ইসলামের সঙ্গে মৃদু বাক্যবিনিময় হয় বিক্ষোভকারীদের। একপর্যায়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে তার কার্যালয়ে আলোচনায় বসে আন্দোলনকারীদের ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদল। সেখানে তাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরে বক্তব্য দেন তানভীর হাসান সৈকত। বৈঠক থেকে ফিরে অবস্থান কর্মসূচি থেকে সরে আসার ঘোষণা দেন তিনি। সৈকত বলেন, ‘উপাচার্য আমাদের একটি ডেটলাইন দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এ বছর প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের গণরুম নামক সংস্কৃতিতে থাকতে হবে না। গণরুমে ব্যাংক বেডের ব্যবস্থা করা হবে। হল প্রশাসনই শিক্ষার্থীদের যাবতীয় সিট বণ্টনসহ সবকিছু ঠিক করবে। অছাত্রদের হল থেকে বিতাড়িত করে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের জায়গা করে দেবে।’ সৈকত বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, গণরুম সমস্যার রাতারাতি পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। তাই উপাচার্য যে ডেটলাইন দিয়েছেন, আমরা সে পর্যন্ত, অর্থাৎ নবীন শিক্ষার্থীদের ভর্তি কার্যক্রম শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চাই। সময়টা হতে পারে ১৫-২০ দিন। যদি এর পরও কোনো সমাধান না দেখি, তাহলে আমরা আরও বড় আন্দোলন গড়ে তুলব।’ উপাচার্যের বক্তব্য : দুপুরে কেন্দ্রীয় ভর্তি অফিসে ঘ ইউনিটের ফল ঘোষণার পর নানা বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। এ সময় তিনি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোকে ‘যৌক্তিক’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘এগুলো দীর্ঘ প্রক্রিয়ার ব্যাপার। আমরা ১৩ বছর পর এ নিয়ে একটি বৈঠক করেছি। কয়েকটি হল বৃদ্ধি এবং পুরনো হলগুলোতে নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছি। এরই মধ্যে কাজ শুরু হয়ে গেছে। নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে সব কাজ করা হবে।’ হল থেকে বহিরাগত ও অছাত্র উচ্ছেদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমাদের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই।’ ‘রাব্বানী ও ৩৪ ছাত্রলীগ নেতার ভর্তি প্রক্রিয়া অস্বচ্ছ নয়’ : ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানী ও ছাত্রলীগের ৩৪ জন নেতার অবৈধ ভর্তির বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘এটি অস্বচ্ছ নয়।’ তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে কেউ কোনো তথ্য গোপন করেনি। এখানে অসত্য বা অপতথ্যের কোনো জায়গা নেই।’ রাব্বানীর ভর্তি ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘যেটা হয়েছে সেটা হলো, বোর্ড অব অ্যাডভান্সড স্টাডিজ অনুমোদিত হয়েছে। এরপর একাডেমিক কাউন্সিলে অনুমোদিত হয়েছে, পরবর্তী সময়ে একাডেমিক কাউন্সিলে সেটি নিশ্চিত হয়েছে। তবে ফ্যাকাল্টি হয়নি, এটা সত্য।’ ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে নিয়মের পরিপন্থী কাজ হওয়ার সুযোগ খুব ক্ষীণ বলেও বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

সর্বশেষ খবর