শুক্রবার, ১ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

আবরার হত্যার চার্জশিট এ সপ্তাহে

২১ জনের বিরুদ্ধে প্রমাণিত হয়েছে অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

আবরার হত্যার চার্জশিট এ সপ্তাহে

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই আদালতে তার চার্জশিট জমা দেওয়া হবে। হত্যায় ২১ জনের জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন।

তিনি বলেন, বুয়েটে আবরার ফাহাদকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে অভিযোগপত্র দেওয়ার কথা বলেছিলাম। আমরা এ লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের তদন্ত কাজ প্রায় সম্পন্ন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হবে। এক প্রশ্নের উত্তরে আবদুল বাতেন বলেন, মোটিভ যাই থাকুক, কাউকে হত্যা করার অধিকার কারও নেই। আমরা এখন পর্যন্ত যা পেয়েছি, শিবির সন্দেহে আবরার ফাহাদকে মারধর করা হয়েছিল। এ পর্যন্ত মামলার এজাহারভুক্ত ১৯ আসামির মধ্যে ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এজাহার বহির্ভূত ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এজাহারের বাকি তিনজনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। গ্রেফতার ২১ জনের মধ্যে ৮ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। ইতোমধ্যে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের ক্যান্টিন বয়, শিক্ষক, গার্ডসহ কয়েকজন ১৬১ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলার বস্তুগত সাক্ষ্য এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। মামলার তদন্তে যেসব প্রক্রিয়া অবলম্বন করা দরকার, তা সম্পন্ন করা হয়েছে। গ্রেফতার ২১ জনের বিরুদ্ধেই প্রাথমিকভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। 

ডিবি পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, আবরার হত্যা মামলার সম্ভাব্য চার্জশিটে যাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত  তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, ইফতি মোশাররফ সকাল, উপ-সমাজসেবা সম্পাদক মোজাহিদুল ইসলাম ওরফে মোজাহিদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন, বুয়েট ছাত্রলীগ নেতা মনিরুজ্জামান মনির, ইশতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত, এ এস এম নাজমুস সাদাতসহ আরও অন্তত ১০ জন। গত ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হলের একটি কক্ষে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নির্যাতনে মারা যান ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ। তিনি শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন। এ ঘটনায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেলসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। তদন্তে নেমেই আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার প্রমাণ পায় পুলিশ। একাধিক ভিডিও ফুটেজও জব্দ করে। আবরার হত্যায় আদালতে জবানবন্দি দেওয়া ৮ আসামি হলেন- অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, মেহেদী হাসান রবিন, মনিরুজ্জামান মনির, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ এবং এ এস এম নাজমুস সাদাত। জবানবন্দিতে তারা জানিয়েছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরকারবিরোধী পোস্ট দেওয়ায় আগেই টার্গেট করা হয় আবরার ফাহাদকে। এরই সূত্র ধরে ৪ অক্টোবর বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রবিন শেরেবাংলা হল ছাত্রলীগের একটি মেসেঞ্জার গ্রুপে নির্দেশনা দেন যে, আবরার শিবির করে, তাকে ধরতে হবে।

এরপর মেসেঞ্জার গ্রুপে সাড়া দেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা। আবরার তখন বাড়িতে থাকায় তিনি ইফতিকে জানিয়েছিলেন- ‘ওকে বাড়ি থেকে ফিরতে দেন। এর একদিন পর ৬ অক্টোবর বিকালে গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া থেকে বুয়েটের শেরেবাংলা হলে ফেরেন আবরার। ওই রাতেই ২০১১ নম্বর কক্ষে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

সর্বশেষ খবর