শুক্রবার, ১ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

কর্মযজ্ঞে বদলে যাচ্ছে পায়রা

চলছে ড্রেজিং, আসছে কয়লাবাহী মাদার ভ্যাসেল

জিন্নাতুন নূর, পটুয়াখালীর কলাপাড়া থেকে ফিরে

কর্মযজ্ঞে বদলে যাচ্ছে পায়রা

বাংলাদেশের দক্ষিণের জেলা পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের গ্রামগুলো চার-পাঁচ বছর আগেও ছিল অবহেলিত। কাঁচা সড়ক ও টিনের ঘর ছাড়া আশপাশে উঁচু দালানকোঠা তেমন চোখে পড়ত না। কিন্তু বর্তমানে সেই এলাকার দৃশ্যপট আমূল বদলে গেছে। কারণ, দেশের সবচেয়ে বড় পায়রা কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণকে ঘিরে এ অঞ্চলে শুরু হয়েছে ব্যাপক কর্মতৎপরতা। এরই মধ্যে প্রকল্পটির গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো এখন ভালোভাবেই দৃশ্যমান। সুদূর ইন্দোনেশিয়া থেকে প্রকল্পটির জ্বালানির জন্য কয়লাবাহী বিশালাকৃতির মাদার ভ্যাসেল বা জাহাজ ভিড়তে শুরু করেছে প্রকল্পের নিজস্ব জেটিতে। নির্বিঘ্ন জাহাজ চলাচলের জন্য নদীতে চলছে ড্রেজিংয়ের কাজ। সকাল-বিকালে দেশি-বিদেশি শ্রমিকের কর্মতৎপরতাও চোখে পড়ার মতো। রাতে যখন এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে আলো জ্বলে তখন বিদ্যুৎবিহীন এলাকাটিও জ্বলজ্বল করে ওঠে। কেন্দ্রটির আশপাশের গ্রামবাসী সেই আলোর দিকে তাকিয়ে আশায় বুক বাঁধে, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে শিগগিরই অবহেলিত জনপদটি উন্নয়নের আলোয় আলোকিত হবে। সব মিলিয়ে পায়রা কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প ঘিরে বর্তমানে যে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে তা চোখে পড়ার মতো। আর নিজ এলাকায় এত আধুনিক স্থাপনা নির্মাণের ফলে বদলে যেতে শুরু করেছে সেই এলাকার মানুষের জীবনমান। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাওয়ায় খুশি স্থানীয় লোকজনও। কয়েক বছর আগেও কৃষিকাজ ছাড়া ধানখালী ও আশপাশের গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের জীবিকা নির্বাহের তেমন কোনো বিকল্প ছিল না। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই এলাকার মানুষের আয়-উপার্জন বেড়েছে। প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রবেশের আগেই বানানো হয়েছে চওড়া সড়ক। সেই সড়কের দুই পাশে এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির জেটিসংলগ্ন বাজারে গড়ে উঠেছে সারি সারি দোকানপাট। নতুন টিনের চকচকে দোকানগুলোয় সাজানো আছে খাদ্যদ্রব্য, তরিতরকারি, গ্যাস সিলিন্ডার, মোবাইল ফোন, ইলেকট্রনিক্স পণ্য, কাপড়সহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিক্রি ভালো হওয়ায় স্থানীয় লোকজন ছাড়াও দূরদূরান্ত থেকে মানুষজন এসে এখানে দোকান দিয়েছেন। স্থানীয় শ্রমিক ছাড়াও প্রকল্পের চীনা শ্রমিকরা এসব পণ্যের ক্রেতা। চীনা ক্রেতাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠায় বিক্রেতাদের অনেকে আবার কাজ চালানোর মতো চীনা ভাষা রপ্ত করে নিয়েছেন। সকালের দিকে বাজার হয়ে প্রকল্পের মূল ফটক পেরিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখা যায় দেশি-বিদেশি শ্রমিকরা দল বেঁধে কাজে যাচ্ছেন। দ্রুত পায়ে হেঁটে যাওয়া এই শ্রমিকদের কাজে যাওয়ার ব্যস্ততাই বলে দেয়, নষ্ট করার মতো সময় তাদের নেই। শ্রমিকদের কেউ জেটিতে, কেউ চিমনি নির্মাণের কাজে আবার কেউ বয়লার নির্মাণের কাজে নিযুক্ত। জানা যায়, প্রকল্প এলাকায় মোট ৯ হাজার শ্রমিকের মধ্যে আড়াই হাজার চীনা আর সাড়ে ৬ হাজার দেশি।

তবে এ প্রকল্প এলাকায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও দৃষ্টিনন্দন অংশ হচ্ছে এর জেটি। ইস্পাতের বিশাল অবকাঠামোয় তৈরি সেই জেটিতে নোঙর করেছে কয়লাবাহী ‘এরনা ওলড্রেনড্রফস’। গত ২৮ অক্টোবর ১২ দিনের যাত্রা শেষ করে ২০ হাজার টন কয়লা নিয়ে ইন্দোনেশিয়া থেকে বাংলাদেশে পৌঁছায় এই মাদার ভ্যাসেলটি। সেই জাহাজ থেকে কয়লা তুলে তা আবার বেল্টে করে অন্যত্র পাঠানো হচ্ছিল। এত বড় জাহাজের চলাচল স্বাভাবিক রাখতে নদী ড্রেজিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. আহমদ কায়কাউস বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এ প্রকল্পটি হওয়ার পর গোটা এলাকার মানুষের আত্মবিশ্বাস অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু প্রকল্পের সঙ্গেই নয়, প্রকল্প এলাকা ও তার কাছে বাজার দিয়ে অনেকেই এখন জীবিকা নির্বাহ করছেন। বলা যায়, এ প্রকল্পের বিশাল কর্মযজ্ঞে গোটা এলাকার দৃশ্যপট বদলে যাচ্ছে।’

সর্বশেষ খবর