শুক্রবার, ১ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

আশ্রয়হারা হবে না আমবাগানের পাখি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

আশ্রয়হারা হবে না আমবাগানের পাখি

অবশেষে আমবাগানে থাকা পাখির বাসা রক্ষায় ব্যবস্থা নিয়েছে রাজশাহী জেলা প্রশাসন। বিষয়টি জানাজানির পর গত বুধবার দুপুরে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল বাঘা উপজেলার খোর্দ্দ বাউসা গ্রামে গিয়ে সেই আমবাগানটি পরিদর্শন করেছে।

এ সময় জেলা প্রশাসন ছাড়াও পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। গতকালও পুলিশের পক্ষ থেকে ওই এলাকায় সচেতনতা চালানো হয়। রাজশাহী জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা আমবাগানের ইজারাদার, ব্যবসায়ী ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় উল্লেখ করা হয়, কোনোভাবেই আমবাগানে থাকা পাখির বাসা নষ্ট করা যাবে না। প্রয়োজনে এর ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে। হাই কোর্টের নির্দেশনার পর রাজশাহী জেলা প্রশাসক হামিদুল হক এ তথ্য জানান।

জেলা প্রশাসক বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা এখনো তাদের কাছে এসে পৌঁছায়নি। নির্দেশনা এলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এই বিষয়টি নজরে  আসার পর বুধবার দুপুরে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ প্রতিনিধি দল ওই আমবাগান পরিদর্শন করেছে। আমবাগানের গাছে বাঁধা শামুকখোল পাখির বাসা রক্ষায় তারা সেখানে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। গতকালও বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম সেখানে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করেন। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের আমবাগান নিয়ে হাই কোর্ট বলেছে, ‘কখনোই পাখির বাসা ভাঙা যাবে না।’ প্রসঙ্গত, গ্রামের আমবাগানে কয়েক হাজার শামুকখোল পাখিকে ১৫ দিনের মধ্যে তাড়িয়ে দেওয়া সংক্রান্ত পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে আনার পর আদালত এ মন্তব্য করে। প্রকাশিত প্রতিবেদনটি আদালতের নজরে আনেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী প্রজ্ঞা পারুমিতা রায়। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সামীউল আলম সরকার। এরপর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাই কোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে রুল জারি করে আদেশ দেয়। খোর্দ্দ বাউসা গ্রামকে কেন অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট। পাশাপাশি অভয়ারণ্য ঘোষণা করলে ওই আমবাগান ইজারাদারদের কী পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে- তা ৪০ দিনের মধ্যে জানাতে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক ও বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় পাখিপ্রেমী রফিকুল ইসলাম বলেন, বাগানে কয়েক হাজার পাখির বাসা রয়েছে। সব বাসাতেই বাচ্চা আছে। বাচ্চাগুলো উড়তে শিখতে অন্তত আরও এক মাস সময় লাগবে। এর আগে বন অধিদফতর থেকে এই আমগাছের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার জন্য একটি প্রকল্প করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ ব্যাপারে বন অধিদফতরের আর কোনো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এখন পাখিগুলোর বাসা ভেঙে দিলে হাজার হাজার পাখির বাচ্চা মারা পড়বে। এরই মধ্যে বাসা ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় স্থানীয় লোকজন ১০০ পাখির বাচ্চা ধরে নিয়ে গেছে। বুধবার তিনিসহ কয়েকজন গিয়ে আতাউর রহমানের কাছে আপত্তি জানান। পরে তিনি ১৫ দিন সময় দেন। খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের ২৫টি আমগাছে শামুকখোল পাখিরা বাসা বেঁধেছে। গত চার বছর ধরে এরা এই বাগানে বাচ্চা ফোটায়। বর্ষার শেষে এসে বাচ্চা ফুটিয়ে শীতের শুরুতে এরা আবার চলে যায়। র‌্যাব-৫ অধিনায়ক মাহফুজুর রহমান জানান, পাখিরা যাতে সেখানে নিরাপদে থাকতে পারে, সে জন্য বাঘা থানার ওসিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। হাই কোর্টের নির্দেশনা যাতে সবাই পালন করে সে জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আর বাগান মালিকের লোকসানের বিষয়টি প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেখভাল করা হচ্ছে। গতকাল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মালিক আতাউর রহমানকে ডেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী, যতদিন পাখিরা সেখানে অবস্থান করবে, ততদিন তিনি গাছের কোনো ডালও ভাঙবেন না।

সর্বশেষ খবর