শনিবার, ২ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ডাবল লাইনে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল

লাকসাম-আখাউড়ায় নির্মাণ কাজ চলছে দ্রুতগতিতে, প্রকল্প ব্যয় ৬ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা

ফারুক আল শারাহ, লাকসাম

ডাবল লাইনে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেল

লাকসাম থেকে আখাউড়া রেলের ডাবল লাইনের কাজ করছেন শ্রমিকরা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের লাকসাম-আখাউড়া ৭২ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ-ডাবল লাইনের নির্মাণ কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা। আগামী জুনে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের রেল সেক্টরে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হবে। রেল যাতায়াতে সূচিত হবে এক নতুন অধ্যায়। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়া যাবে সোয়া তিন ঘণ্টায়।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রেলপথের দূরত্ব ৩২৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে ডুয়েলগেজ ছিল ১১৮ কিলোমিটার। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পুরো রেলপথকে ডাবল লাইনে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে এ রেললাইনের (ঢাকা-চট্টগ্রাম) ২৫৩ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ লাইনে উন্নীত হয়েছে। অবশিষ্ট ছিল লাকসাম থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার। আগামী জুনের মধ্যে এ অংশটিও ডুয়েলগেজ-ডাবল লাইনে উন্নীত করার লক্ষ্যে

দ্রুতগতিতে নির্মাণ কাজ চলছে। লাকসাম-আখাউড়া রেলপথটি ডুয়েলগেজে উন্নীত করার প্রকল্পটি ২০১৪ সালে ডিসেম্বরে অনুমোদন পায়। ঠিকাদার নিয়োগে ২০১৫ সালের ৪ মে দরপত্র আহ্বান করা হয়। ২০১৬ সালের ১৫ জুন ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি সই হয়। লাকসাম-আখাউড়া ডুয়েলগেজ প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৬ হাজার ৫০৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে এডিবি ঋণ দিচ্ছে ৪ হাজার ১১৮ কোটি ১৪ লাখ ও ইউরোপিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (ইআইবি) দিচ্ছে এক হাজার ৩৫৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। বাকি এক হাজার ২৬ কোটি ৬৬ লাখ টাকা সরকারি তহবিল থেকে দেওয়া হচ্ছে। সূত্র জানায়, লাকসাম-আখাউড়া ডুয়েলগেজ রেললাইন প্রকল্পের আওতায় ১৪৪ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ মেইন লাইন ও ৪০ দশমিক ৬০ কিলোমিটার লুপ লাইন নির্মাণ করা হবে। মেইল লাইনে ১৩২ পাউন্ড ও লুপ লাইনে ৯০ পাউন্ড রেলপাত ব্যবহার হবে। এ ছাড়া ১১টি স্টেশনের সিগন্যালিং ব্যবস্থা আধুনিকায়ন, ১৩টি মেজর ও ৪৬টি মাইনর ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়া ১১টি স্টেশনের ভবন নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক কাজ করা হবে। ৬৮ হাজার ১৯০ বর্গমিটারের ইঞ্জিনিয়ার্স অফিস নির্মাণ করা হবে। লাকসাম-আখাউড়া রেললাইনে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে যৌথভাবে কাজ করছে চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন, বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন ও ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার (সিটিএম জয়েন্ট ভেঞ্চার)। ইতিমধ্যে লাকসাম-আখাউড়া রেলপথের ডুয়েলগেজ কাজের অগ্রগতি প্রায় ৬৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। লাকসাম-আখাউড়া ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. আরিফুজ্জামান বলেন, ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে লাকসাম-আখাউড়া প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। আগামী জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের কথা। ক্রমাগত কাজের গতি বৃদ্ধি পেলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব নাও হতে পারে। এক্ষেত্রে আরও কিছু সময় বাড়ানো হতে পারে। এদিকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লাকসাম-আখাউড়া রেলপথের ডুয়েলগেজ নির্মাণ কাজ শেষ হলে রেলসেক্টরে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জিত হবে। রেল যাতায়াতে সূচিত হবে এক নতুন অধ্যায়। ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রেন ভ্রমণে ২ ঘণ্টা কমে ৪ ঘণ্টায় নেমে আসবে। মাত্র সোয়া ৩ ঘণ্টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম ট্রেন ভ্রমণ সম্ভব হবে। একাধিক সরাসরি ট্রেনসহ আন্তঃনগর ট্রেন সার্ভিস চালু করা যাবে। এ রুটে উচ্চতর এ এক্সেল লোকোমোটিভ দিয়ে ট্রেন পরিচালনা করা যাবে। ট্রেন চলাচলের সংখ্যাও বাড়বে এবং লাইন ক্যাপাসিটি ২৩ জোড়া থেকে বেড়ে ৭২ জোড়ায় উন্নীত করা সম্ভব হবে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মালামাল (কনটেইনার) পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে। ট্রেন লাইনচ্যুতির কারণে একটি লাইন বন্ধ থাকলেও অপরটি চালু থাকবে এবং ট্রেন দুর্ঘটনাও কমে আসবে। সর্বোপরি সরকারের অলাভজনক রেল সেক্টর লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর