শনিবার, ২ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে ভারত

পিয়াজের দাম কমার আভাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

পিয়াজের দাম কমার আভাস

সারা দেশে পিয়াজের চড়া দামে এখনো ক্রেতাদের মাঝে নাভিশ্বাস চলছে। তবে এমন সময়েই পিয়াজের দাম কমার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। কারণ কৃষকদের দাবির মুখে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে ভারত। চার দিন আগে ভারতের এই উদ্যোগে বাংলাদেশে পিয়াজের দাম কমে আসতে পারে বলে মনে করছে সরকার। গতকাল রাজধানীর বাজারগুলোতে আগের মতোই চড়া দামে বিক্রি হয়েছে সব ধরনের পিয়াজ। দেশি পিয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়, ভারতীয় পিয়াজ (মোটা) ১৩০ টাকায় এবং মিসরীয় পিয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৩০ টাকায়।

পিয়াজের দাম কমার আভাস দিয়ে বাণিজ্যসচিব ড. জাফর উদ্দিন গতকাল গণমাধ্যমকে বলেছেন, ভারত গত ২৮ অক্টোবর থেকে আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত পিয়াজ রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। এই পদক্ষেপে পিয়াজের দাম কমে আসতে পারে। ফলে সীমিতভাবে হলেও একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তিনি বলেন,  ভারতের কর্নাটকে, বিশেষ করে বেঙ্গালুরুতে পিয়াজের ভালো আবাদ হয়েছে, তা এখন পচে নষ্ট হচ্ছে। তবে ভারতের শর্তারোপের কারণে এই পিয়াজ শুধু চেন্নাই সমুদ্রবন্দর দিয়ে রপ্তানি হবে। এ প্রসঙ্গে রাজধানীর শ্যামবাজারের আমদানিকারক হাজী  মোহাম্মদ মাজেদ বলেন, সমুদ্রপথে পিয়াজ আনা আমাদের জন্য কোনোভাবেই লাভজনক হবে না, অনেক খরচ হবে। এ ছাড়া নভেম্বরের মাঝামাঝি থেকে নতুন পিয়াজ উঠতে শুরু করলে হয়তো এমনিতেই ভারতের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে। জানা গেছে, কৃষকদের দাবির মুখে গত ২৮ অক্টোবর ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈদেশিক শাখা এক আদেশে সীমিতভাবে পিয়াজ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। এই আদেশ চলতি মাসের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। এর আগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর অনির্দিষ্টকালের জন্য পিয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত। এদিকে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে বাজারে ইলিশের আগমনে কমেছে অন্য মাছের দাম। শীতের বার্তা নিয়ে আসা নতুন সবজিতেও স্বস্তি পাওয়া শুরু করেছেন ক্রেতারা।

এদিকে গত বুধবার ২২ দিনের ইলিশ আহরণের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর রাজধানীর বাজারগুলোতে দীর্ঘ সময় পর সাধ্যের মধ্যেই এসেছে দাম। রাজধানীর কারওয়ান বাজার (খুচরা বাজার), রামপুরা কাঁচাবাজার, মালিবাগ কাঁচাবাজার, মালিবাগ রেলগেট কাঁচাবাজার এবং খিলগাঁও কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, এসব বাজারে প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে, ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে, ৫০০ গ্রামের বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। অন্যদিকে তিন পিছে কেজি এমন ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৪০০  থেকে ৪৫০ টাকা কেজি দরে।

 অন্যান্য মাছের মধ্যে প্রতি কেজি রুই (বার্মিজ) ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা, দেশি রুই ২৪০ থেকে ৩০০, মৃগেল ২০০ থেকে ২৫০, তেলাপিয়া ১৩০ থেকে ১৫০, পাঙ্গাশ ১২০ থেকে ১৪০, কই ১৫০ থেকে ১৮০, শিং ৩০০ থেকে ৪৫০, দেশি মাগুর ৪০০ থেকে ৬৫০, বাইনমাছ (দেশি) ৩০০ থেকে ৪০০, বাইনমাছ (নদী) ৪৫০ থেকে ৬৫০, বাইলা ৩০০ থেকে ৫০০, কাচকি ২৫০ থেকে ৩০০, মলা ২২০ থেকে ২৮০, পুঁটি (দেশি) ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীর বাজারগুলোতে কমতে শুরু করেছে সবজি-মুরগি-ডিমের দামও। প্রতি কেজি ১৫ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত কমেছে মুরগির দাম। ডজনপ্রতি ডিমের দাম কমেছে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত। তবে অপরিবর্তিত আছে গরু, মহিষ ও খাসির মাংসের দাম। বাড়তি দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে বিভিন্ন আদা ও রসুন। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, প্রতি কেজি শিম ৬০ থেকে ৭০ টাকা, গাজর ৫০ থেকে ৬০, পটোল ৩০ থেকে ৩৫, ঝিঙা-ধুন্দল ৩৫ থেকে ৪০, করলা ৪০ থেকে ৫০, কাঁকরোল ৪০ থেকে ৪৫, বেগুন ৩০ থেকে ৫০, ঢেঁড়স ২৫ থেকে ৩০, পেঁপে ১৫ থেকে ২০, শসা (প্রকারভেদে) ৩০ থেকে ৪০, ক্ষিরা (শসা) ৪০ থেকে ৫০, কচুর ছড়া ৪০ থেকে ৫০, কচুর লতি ৪০ থেকে ৫০, কাঁচামরিচ ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আকারভেদে প্রতি পিস বাঁধাকপি ২০ থেকে ২৫ টাকা, ফুলকপি ১৫ থেকে ২০, লাউ ৩০ থেকে ৪০, জালি কুমড়া ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মালিবাগ রেলগেট কাঁচাবাজারের বিক্রেতা রহমান তালুকদার বলেন, কাঁচাবাজারের দাম সব সময় এক থাকে না। বাজারে মালামাল বেশি হলে দাম কমে, আবার ঘাটতি থাকলে দাম বেড়ে যায়। এখন দাম কমার কারণটা হলো শীতের সব সবজি বাজারে আসতে শুরু করেছে।

 পুরোদমে বাজারে সবজি এলে দাম আরও কমে যাবে। এদিকে বাজারগুলোতে কমেছে সব ধরনের মুরগি ও ডিমের দাম। এসব বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১২৫ টাকায়, লেয়ার (লাল) মুরগি ২০০ থেকে ২১০, লেয়ার (সাদা) মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকায়। অপরবর্তিত আছে গরু, মহিষ ও খাসির মাংসের দাম। গরু ও মহিষের মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা দরে। আর খাসি বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা। কমেছে ডিমের দামও। ডজনে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত কমে ব্রয়লার (লাল) ডিম বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকা, সাদা ডিম ১০০ টাকা এবং হাঁসের ডিম ২৪০ থেকে ২৫০ টাকায়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর