বুধবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

দুই খুনের পরও নির্বিকার!

ধানমন্ডিতে জোড়া খুনে সুরভী ছাড়াও চারজন গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর ধানমন্ডিতে দুটি খুনের পরও গৃহকর্মী সুরভী আক্তার নাহিদা ছিলেন নির্বিকার। জোড়া খুনের এ ঘটনায় তিনি বিচলিতও হননি। বরং গ্রেফতারের পর হাসতে হাসতে খুনের বর্ণনা দিয়েছেন। জোড়া খুনের ঘটনায় সুরভী ছাড়াও চারজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ধানমন্ডি থানায় দায়ের করা মামলায় গতকাল ওই পাঁচজনকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরে আদালত তাদের প্রত্যেকের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে বলে জানিয়েছেন ডিবি দক্ষিণের এসি আহসান খান। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হত্যাকান্ডে র সময়কালে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে সুরভীকে সন্দেহ করা হয়েছিল। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি দায় স্বীকার করেছেন। বাসা থেকে বের হতে বাধা দেওয়ায় দুজনকে খুন করে। তবে সামান্য বিষয়ে দুজনকে হত্যার বিষয়টি অস্বাভাবিক। সুরভী ছাড়া গ্রেফতার অন্য চারজন হলেন- কাজী মনির উদ্দিন তারিমের পিএস আতিকুল হক বাচ্চু, বাড়ির সিকিউরিটি গার্ড নুরুজ্জামান, কেয়ারটেকার বেলাল ও প্রিন্স। এর আগে, শুক্রবার রাতে ধানমন্ডির রোড-২৮, বাড়ি-২১ এর পঞ্চম তলা থেকে গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠান টিমটেক্স গ্রুপের এমডি ও ক্রিয়েটিভ গ্রুপের ডিএমডি কাজী মনির উদ্দিন তারিমের শাশুড়ি আফরোজা বেগম (৬৫) এবং তার গৃহকর্মী দিতির (১৮) রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাদের দুজনকেই গলা কেটে হত্যা করা হয়। পরে নিহত আফরোজার মেয়ে দিলরুবা সুলতানা রুবা বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৩ বছর আগে নিহত আফরোজার বাসার পাশের পানের দোকানদার সুমনের সঙ্গে সুরভীর পরিচয় ঘটে। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। শেরেবাংলা নগর উচ্চ বিদ্যালয়ে ক্লাস নাইন পর্যন্ত পড়ার পর তার আর পড়াশোনা হয়নি। বেকার থাকায় ঢাকার একটি শপিংমলে ক্লিনার হিসেবে কাজ শুরু করেন। এমনকি মিরপুরের একটি গার্মেন্টে তিনি কাজ নেন। কিন্তু তিনি ওই চাকরি করেননি।

সুরভী তার বড় বোনকে নিয়ে আগারগাঁও বিএনপি বস্তিতে ভাড়া থাকতেন। সংসারে টানাপড়েনের কারণে একদিন পান দোকানি সুমনকে সুরভী জানান, যে কোনো বাসায় গৃহকর্মীর কাজ করতে তিনি রাজি আছেন। পান দোকানির কাছে পান খেতেন নিহতের জামাতা তারিমের পিএস বাচ্চু। বাচ্চু তার মালিকের বাসায় একজন কাজের মেয়ে লাগবে সুমনকে বিষয়টি জানালে সুমনের মাধ্যমে গৃহকর্মী হিসেবে তিনি যোগ দেন। সুরভী শুক্রবার দুপুরে আফরোজা বেগমের বাড়িতে কাজের জন্য যায়। সে সময় তিনি পাঁচতলায় তার মেয়ে দিলরুবার ফ্ল্যাটে ছিলেন। বাচ্চু সুরভীকে পাঁচতলায় নিয়ে যান। এরপর আফরোজা, গৃহকর্মী দিতি, সুরভী এবং বাচ্চু একসঙ্গে চারতলার ফ্ল্যাটে আসেন। প্রথম দিনের কাজ হিসেবে সুরভী কাপড় ধুয়ে রাখেন। একপর্যায়ে সুরভী বাইরে যেতে চায়। তবে আফরোজা বেগম বের হতে না দিয়ে বলে তোকে যে এনেছে (বাচ্চু), সে আসলে যেতে পারবি। একপর্যায়ে দিতি গেটে তালা মেরে দেন, যেন সুরভী বের না হতে পারেন। সে ফ্ল্যাট বাসায় ভয় পাচ্ছিল, তাকে পাচার কিংবা অন্য কোনো অনৈতিক কাজে জড়ানো হয় কি না। সন্ধ্যায় গৃহকর্মী দিতি যখন একটি বেডরুম ঝাড়ু দিচ্ছিল তখন ছুরি দিয়ে পেছন থেকে দিতির গলা কেটে দেয়। আরেক বেডরুমে আফরোজা বেগমের গলাও কেটে দিয়ে গেটের তালা খুলে পালিয়ে যায়। ডিবির ধানমন্ডি জোনের এসি আহসান খান জানান, গতকাল সুরভীসহ পাঁচজনের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। তবে এই জোড়া খুন কেন, কী কারণে বা অন্য কেউ জড়িত আছে কিনা তা জানার চেষ্টা চলছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর