বুধবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

আইনজীবীদের বিরুদ্ধে রাজপথে দিল্লি পুলিশ

নয়াদিল্লি প্রতিনিধি

ভারতের রাজধানী নগরী নয়াদিল্লিতে গতকাল উর্দি পরা এবং সাদা পোশাকের হাজার হাজার পুলিশ সদস্য বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। তারা নগর পুলিশ  সদর দফতর ঘেরাও করে ‘আইনজীবীদের হাতে পর পর আক্রান্ত হওয়ার’ প্রতিবাদ এবং দোষী আইনজীবীদের বিচারের দাবি জানান। তাদের বিক্ষোভের ফলে ব্যস্ততম আইটিও সড়ক অচল হয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীদের হাতে ছিল নানা ধরনের প্লাকার্ড। একটিতে লেখা- ‘রক্ষাকারীদের রক্ষা কর’। তারা স্লোগান দেয়- ‘কমিশনার সাহেব সামনে আও, সামনে আও’। একপর্যায়ে নিজের কামরা থেকে বেরিয়ে আসেন পুলিশ কমিশনার অমূল্য পট্টনায়ক। বিক্ষুব্ধদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, এটা পুলিশের পরীক্ষার সময়। সরকার ও জনগণের প্রত্যাশা সুশৃঙ্খল বাহিনী হিসেবে আমরা আইন সমুন্নত রাখব। তিনি বলেন, ‘ঘটনা বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আপনারা ধৈর্য ধারণ করুন। কর্তব্য কাজে ফিরে যান।’

ঘটনার সূত্রপাত গত শনিবার দিল্লির তিসহাজারি আদালতের পার্কিং এরিয়ায় এক আইনজীবীর গাড়ির সঙ্গে পুলিশের একটি গাড়ির ধাক্কাকে কেন্দ্র করে। ওই সময় ব্যাপক হিংসা ছড়িয়ে পড়ে আদালত ও আশপাশের এলাকায়। পুলিশ বলছে, আইনজীবীদের আক্রমণে কমপক্ষে ২০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়। উত্তেজিত আইনজীবীরা ভাঙচুর চালান একের পর এক পুলিশের গাড়িতে। আগুন পর্যন্ত ধরিয়ে দেন। আইনজীবীদের পাল্টা অভিযোগ : পুলিশের পিটুনিতে ৮ আইনজীবী জখম হয়েছেন। কয়েকজন পুলিশকর্মী এক নিরস্ত্র আইনজীবীকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়, পুলিশের গাড়িতে তুলে বেধড়ক পিটুনি দেয়। কিন্তু পুলিশ বলছে, বিচারাধীন আসামিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়েছিল। ওই সময় কী অবস্থায় একজন আইনজীবীর গায়ে বুলেট লাগল তার তদন্ত চলছে। ‘পুলিশের জুলুম’-এর প্রতিবাদে দিল্লির বিভিন্ন আদালতে শনিবার কর্মবিরতি শুরু করেন আইনজীবীরা। তার পরে, দিল্লির সাকেত এবং করকরডুমা আদালতে আইনজীবীদের হাতে পুলিশের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটে। সোমবার একটি ভিডিও প্রকাশ্যে আসে, এতে দেখা যায় বাইকে বসা এক পুলিশকে রাস্তায় আটকাচ্ছেন আইনজীবীরা। তার পর শুরু হয় এলোপাতাড়ি মারধর। কোনোমতে বাইক ঘুরিয়ে পালিয়ে যান ওই পুলিশ। পুলিশের ওপর একই রকম হামলার ঘটনা ঘটে করকরডুমা আদালতেও। এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ্যে আসতে থাকে তিসহাজারি আদালতের একের পর এক ভিডিও ফুটেজ। যেখানে দেখা যাচ্ছে আইনজীবীরা কীভাবে আদালতের লক আপের ভিতরে জোর করে ঢোকার  চেষ্টা করছেন। বাধা দেওয়ায় মাটিতে ফেলে মারা হচ্ছে পুলিশ কর্মীদের। সোশ্যাল মিডিয়ায় পর পর এ ধরনের ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পরই, সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদের ডাক দেওয়া হয়। প্রতিবাদী পুলিশ সদস্যদের পাশে দাঁড়িয়েছেন দিল্লি পুলিশের প্রাক্তন শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনেকেই। দিল্লির সাবেক পুলিশ কমিশনার নীরজ কুমার টুইট করে বলেন, ‘বাহিনীর কোনো নেতা নেই। বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে একতা নেই। একজন সহকর্মী আক্রান্ত হলে বাকিরা তাকে বাঁচাতে যাচ্ছেন না।’ শনিবারের সংঘর্ষের পরই বার কাউন্সিলের পক্ষে আদালতে দাঁড়িয়ে মহিত মাথুর নামে এক আইনজীবী বলেন, আদালতাঙ্গনে অস্ত্রসজ্জিত পুলিশ আসা বারণ। তবু কীভাবে পুলিশ এল? একজন আইনজীবীকে ১৪ জন পুলিশ টানাহেঁচড়া করছেন, সিসিটিভিতে এর প্রমাণ রয়েছে। ওই ঘটনায় দিল্লি হাই কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে কয়েকটি নির্দেশ দেন। এতে বলা হয়, দুজন সিনিয়র অফিসারকে বদলি, দুজনকে সাসপেন্ড এবং আহত একজন আইনজীবীকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। বিক্ষুব্ধ পুলিশ সমাবেশে গতকাল এক মহিলা কনস্টেবল বলেন, আদালতের একপেশে সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করতে হবে। তিনি বলেন, সংঘর্ষে দুই পক্ষের লোক আহত হলো কিন্তু রাজনৈতিক নেতারা দেখতে গেলেন শুধু আইনজীবীদের এ ধরনের আচরণ খুবই দুঃখজনক। তবে কংগ্রেস নেতা রণদীপ সূর্যেওয়ালা প্রতিবাদী পুলিশের পক্ষ নিয়ে বিজেপি সরকারের সমালোচনা করে বলেন, বিজেপি দেশকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে!

সর্বশেষ খবর