বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

আউয়ালের অবৈধ সম্পদের তদন্তে দুদক

নিজামুল হক বিপুল

পিরোজপুরের জাতীয় সংসদের সাবেক সদস্য এ কে এম এ আউয়ালের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রাথমিক  অনুসন্ধানে অবৈধ সম্পদ অর্জনের সত্যতা পাওয়ায় দুদক মাঠে নেমেছে। ইতিমধ্যে দুদক নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে আউয়ালের হলফনামা এবং আয়কর বিভাগের আয়কর রিটার্নের সত্যায়িত কপি সংগ্রহ করে বর্ণিত তথ্যের সত্যতা খতিয়ে দেখছে। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আউয়াল ২০০৮ সালে পিরোজপুর-১ আসনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালেও তিনি এই আসনে নির্বাচিত হন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ১০ বছর এমপি থাকাকালে অনিয়ম, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, টেন্ডারবাজি, চাকরি বাণিজ্য করেছেন। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ নিজের স্ত্রীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পাইয়ে দিয়েছেন। প্রকল্পের কাজ শেষ না হলেও বিল তুলে নিয়েছেন। ঠিকাদারদের কাছ থেকে কমিশন নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভুয়া ও জাল দলিলের মাধ্যমে হিন্দু দেবোত্তর সম্পত্তি ও সরকারি জমি নিজের দখলে নিয়ে যাওয়ারও অভিযোগ ওঠে। তার এসব অপকর্ম নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ অনেক জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। সাংবাদিকদের প্রাণনাশের হুমকি দিতেও তিনি কার্পণ্য করেননি। তিনি নিজ এলাকা পিরোজপুরের নিজের ইচ্ছামতো দল পরিচালনা করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের পরিবর্তে নিজের পছন্দের এবং অনুগত লোকজন নিয়ে ‘আউয়াল লীগ’ গড়ে তুলেন। এসব কারণে অসংখ্যবার তিনি সংবাদের শিরোনাম হন। শেষ পর্যন্ত ২০১৮-এর সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তাকে আর মনোনয়ন দেয়নি। দুদক সূত্রে জানা গেছে, এম এ আউয়ালের বিরুদ্ধে পিরোজপুরের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে পিয়ন, নাইট গার্ড, দফতরি, স্বাস্থ্যকর্মীসহ জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন ছোটখাটো নিয়োগেও তৎকালীন এমপি আউয়াল নিজের প্রভাব বিস্তার করে অর্থের বিনিময়ে চাকরি দিতেন। তার এসব অপকর্মের সঙ্গে তার স্ত্রী বেগম লায়লা ইরাদও সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। চাকরি ছাড়াও তিনি টিআর, জিআর, কাবিখা, ৪০ দিনের কর্মসূচি প্রকল্প থেকে বিভিন্ন কায়দায় অর্থ আদায় করতেন। কোথাও কোথাও প্রকল্পের টাকা পুরোটাই আত্মসাৎ করার অভিযোগ আছে এই সাবেক এমপির বিরুদ্ধে। তার দুর্নীতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল যে, তার আপন ভাই পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান, মালেক, উপজেলা চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান খালেক ও ছোট ভাই মশিউর রহমান মহারাজ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তোলেন। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৯ মে দুর্নীতি দমন কমিশন তাকে নোটিস দেয়। ২৩ মে তিনি কমিশনে হাজির হয়ে তার বক্তব্য তুলে ধরেন। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে ২৪ অক্টোবর লেখা চিঠিতে দুদক সাবেক এমপি আউয়ালের নির্বাচনী হলফনামার সঙ্গে দেওয়া স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের যে হিসাব বিবরণী দিয়েছেন তার ফটোকপি ৪ নভেম্বরের মধ্যে জরুরি ভিত্তিতে দুদকের উপপরিচালক (বি. অনু. ও তদন্ত) মো. আলী আকবরের কাছে পাঠানোর অনুরোধ করা হয়। সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে সেটিও তদন্ত কর্মকর্তার কাছে পৌঁছেছে। অভিযোগ আছে, আউয়াল তার হলফনামায় নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতার তথ্যও গোপন করেছিলেন।

সর্বশেষ খবর