বুধবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

মাদক মামলার বিচারে জটিলতা কেটেছে

আরাফাত মুন্না

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা মামলার বিচারে জটিলতা কেটে গেছে। প্রায় চার মাস বন্ধ থাকা এসব মামলার বিচারকাজ এখন থেকে আগের নিয়মেই চলবে। অর্থাৎ মামলার ধারা অনুযায়ী মহানগরীর মধ্যে দায়েরকৃত মামলা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বা মহানগর দায়রা জজ আদালতে বিচার  হবে। এ ছাড়া মহানগরীর বাইরের এলাকায় দায়েরকৃত মামলার বিচারকাজ চলবে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা জেলা দায়রা জজ আদালতে। সম্প্রতি হাই কোর্টের এ-সংক্রান্ত রায় কার্যকরে নিম্ন আদালতের বিচারকদের প্রতি সার্কুলার জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। সার্কুলারের সঙ্গে হাই কোর্টের রায়ের অনুলিপিও সংযুক্ত করা হয়েছে। রায়ে সংশোধিত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের অধীনে ট্রাইব্যুনাল গঠন বা সরকার গেজেটের মাধ্যমে বিচারিক ক্ষমতা নির্ধারণ না করা পর্যন্ত অধস্তন আদালতগুলোকে ফৌজদারি কার্যবিধির (সিআরপিসি) ৫(২) ধারা অনুসরণের নির্দেশনা দিয়েছে হাই কোর্ট। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নির্দেশক্রমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. আলী আকবর স্বাক্ষরিত এই সার্কুলারে বলা হয়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮-এর বিধান প্রতিপালন-সংক্রান্তে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের ফৌজদারি বিবিধ ৪০৩৮৮/২০১৯ মামলায় উল্লিখিত আদেশ যথাযথভাবে অনুসরণ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নিমিত্ত সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ প্রদান করা হলো। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও হাই কোর্ট বিভাগের স্পেশাল অফিসার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, হাই কোর্টের রায়টি কার্যকরের জন্য এই সার্কুলার জারি করা হয়েছে। রায় অনুযায়ী এখন থেকে মাদক মামলার বিচার হবে আগের নিয়মে। সুপ্রিম কোর্টের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী (গত ৩০ জুন পর্যন্ত), সারা দেশে ১ লাখ ৭০ হাজার ২৪২টি মাদক মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে বিচারাধীন রয়েছে ৩১ হাজার ১৫৩টি মামলা। ঢাকার আদালতে নিয়মিত ফৌজদারি মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী মঞ্জুর আলম মঞ্জু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ২০১৮ সালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের আগ পর্যন্ত মহানগরীর মধ্যে দায়ের করা মাদকের মামলাগুলো বিচারের জন্য আসত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে। সিএমএম সাত বছরের কম সাজাযোগ্য ধারাযুক্ত মামলাগুলো বিচারের জন্য রাখতেন। এর বেশি হলে মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠাতেন। তিনি বলেন, জেলা এলাকায়ও একইভাবে সাত বছরের কম সাজাযোগ্য ধারাযুক্ত মামলার বিচার হতো চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এবং অন্যগুলো জেলা দায়রা জজ আদালতে। এখন হাই কোর্টের আদেশের ফলে আগের নিয়মেই চলবে মাদক মামলার বিচারকাজ। জানা গেছে, ১৯৯০ সালে করা ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন’ গত বছর ডিসেম্বরে সংশোধন করা হয়। সংশোধিত আইনে মাদক মামলার বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল স্থাপন বা গেজেটের মাধ্যমে অতিরিক্ত দায়রা জজ বা দায়রা জজ আদালতে দায়িত্ব দেওয়ার বিষয়ে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল স্থাপন বা গেজেট নোটিফিকেশন কোনোটিই না হওয়ায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলার বিচারে কার্যত কোনো আদালত থাকে না। ফলে সৃষ্টি হয় জটিলতা। পরে ৮ জুলাই বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চর অন্তর্বর্তীকালীন এক আদেশে অধস্তন আদালতে মাদক মামলার বিচার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের সঙ্গে রুলও জারি করেছিল হাই কোর্ট। রুলের শুনানি শেষে ২০ অক্টোবর বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ ওই ট্রাইব্যুনাল স্থাপন বা আইন সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত অধস্তন আদালতগুলোকে ফৌজদারি কার্যবিধির (সিআরপিসি) ৫(২) ধারা অনুসরণের নির্দেশনা দিয়ে রায় দেয়। রায়ে হাই কোর্ট বলে, ‘এটা বাস্তবতা যে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৮ সালের ১০ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হলেও ওই আইনের বিধান, অর্থাৎ ৪৪ ধারা অনুযায়ী মাদক-সংক্রান্ত অপরাধের বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল স্থাপিত না হওয়া পর্যন্ত সরকারি গেজেট দ্বারা অতিরিক্ত জেলা বা দায়রা জজকে নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত ট্রাইব্যুনালের দায়িত্ব আজ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। নিম্ন আদালতগুলোয় মাদক-সংক্রান্ত মামলার জামিন ও বিচারকাজ স্থবির হয়ে পড়েছে এবং বিভিন্ন আইনি জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মামলার বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে। বিভিন্ন ফৌজদারি মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে আমাদের প্রতিনিয়ত এই সৃষ্ট অচলাবস্থা লক্ষ্য করতে হচ্ছে। সৃষ্ট এ পরিস্থিতি অনভিপ্রেত, দুঃখ ও হতাশাজনক। আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, বিচার কার্যক্রমে কোনো স্থবিরতা বা শূন্যতা থাকতে পারে না।’ সামগ্রিক বিবেচনার কথা উল্লেখ করে রায়ে বলা হয়েছে, যেহেতু মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮-এর ৪৪ ধারা এখনো কার্যকর হয়নি, তাই বিচার প্রক্রিয়ায় শূন্যতা পূরণে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫(২) ধারা এ ক্ষেত্রে প্রয়োগযোগ্য এবং কার্যকারিতা পাবে।

সর্বশেষ খবর