বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
সগিরা মোর্শেদ হত্যা

তিন দশক পর চিকিৎসক দম্পতির স্বীকারোক্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

তিন দশক আগে রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সামনে ছিনতাইয়ের সময় সগিরা মোর্শেদ সালাম হত্যাকান্ডে নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন নিহতের ভাসুর ডা. হাসান ও তার স্ত্রী শাহীন চৌধুরী।

গতকাল তারা ঢাকা মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেনের খাস কামরায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন বলে সংশ্লিষ্ট আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই নিজাম উদ্দিন জানিয়েছেন।

এর আগে, মামলার তদন্তকারী পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদারের নেতৃত্বে পিবিআই সদস্যরা এই দম্পতিকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করেন। জবানবন্দি শেষে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। পুলিশের অপরাধ, তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগ থেকে জানা গেছে, ডা. হাসান এর আগে বিদেশে ছিলেন। সম্প্রতি তিনি দেশে আসেন। দেশে আসার পর পিবিআইয়ের একটি দল তাদের গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করে।

আদালতের স্থগিতাদেশে ২৮ বছর ধরে আটকে থাকা এই মামলা গত ২৬ জুন হাই কোর্টের রায়ে পুনরায় জীবন পায়। মামলাটিতে অধিকতর তদন্তের আদেশের বিরুদ্ধে করা আবেদন ওই দিন খারিজ করে দেয় হাই  কোর্ট।

মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, ১৯৮৯ সালের ২৫ জুলাই সগিরা মোর্শেদ সালাম ভিকারুননিসা নূন স্কুল  থেকে মেয়েকে আনতে যাচ্ছিলেন। বিকাল ৫টার দিকে সিদ্ধেশ্বরী রোডে পৌঁছামাত্র মোটরবাইকে আসা ছিনতাইকারীরা তার হাতের সোনার চুড়ি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তিনি দৌড় দিলে তাকে গুলি করা হয়। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই সগিরা মোর্শেদ সালাম মারা যান।

ওই দিনই রমনা থানায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন সগিরা মোর্শেদ সালামের স্বামী সালাম  চৌধুরী। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রিকশাচালক জড়িত দুজনকে শনাক্ত করলেও অজ্ঞাত কারণে মিন্টু ওরফে মন্টু ওরফে মরণ নামে একজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় গোয়েন্দা পুলিশ।

১৯৯১ সালের ১৭ জানুয়ারি আসামি মন্টুর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক আবু বকর সিদ্দীক। সাক্ষ্য নেওয়া হয় সাতজনের। সাক্ষ্যে বাদীপক্ষ থেকে বলা হয়, তদন্তকালে আসামি মন্টু এবং তৎকালীন (১৯৮৯) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসানের নিকটাত্মীয় মারুফ রেজা গ্রেফতার হন। কিন্তু মারুফ রেজার নাম বাদ দিয়েই অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।

সাক্ষ্যগ্রহণ চলাকালে মারুফ রেজার নাম আসায় রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে ১৯৯১ সালের ২৩ মে মামলার অধিকতর তদন্তের আদেশ দেয় ঢাকার বিচারিক আদালত। ওই আদেশের বিরুদ্ধে মারুফ রেজার রিভিশন আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯১ সালের ২ জুলাই হাই কোর্ট মামলাটির অধিকতর তদন্তের আদেশ ও বিচারকাজ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করার পাশাপাশি অধিকতর তদন্তের আদেশ কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে।

পরের বছর ২৭ আগস্ট জারি করা রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই মামলার বিচারকাজ স্থগিত থাকবে বলে আরেকটি আদেশ দেয় হাই কোর্ট। এ মামলার সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা সম্প্রতি বিষয়টি অ্যাটর্নি  জেনারেল কার্যালয়ের নজরে আনলে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয় রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর বিষয়টি বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো.  মোস্তাফিজুর রহমানের বেঞ্চে তোলা হয়।

সর্বশেষ খবর