শনিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
কুমিল্লা-লাকসাম-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কে দুর্ভোগ

চার লেনে চলছে ধীরগতি

ফারুক আল শারাহ, লাকসাম (কুমিল্লা)

চার লেনে চলছে ধীরগতি

দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের লাইফলাইন খ্যাত কুমিল্লা-লাকসাম-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কটি চলাচলে ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় দুঃসহ দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। জনগুরুত্বপূর্ণ সড়কটি ২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ চললেও দুর্ভোগ লাঘবে শিগগিরই সুখবর পাচ্ছেন না এ অঞ্চলের মানুষ। নির্মাণকাজের ধীরগতির কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

কুমিল্লা-লাকসাম-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কটি দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক। কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলার লাখ লাখ মানুষ এ সড়ক দিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে থাকেন। এ সড়কে প্রতিদিন বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, কাভার্ড ভ্যান, সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেলসহ প্রায় সব ধরনের যান চলাচল করে। বছরের পর বছর এ সড়কটির বেহাল দশা বিরাজ করছে। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যাতায়াত সুবিধার কথা বিবেচনায় নিয়ে বর্তমান সরকার সড়কটিকে চার লেনে উন্নীতকরণের পরিকল্পনা নেয়। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেকে কুমিল্লা-লাকসাম-নোয়াখালী সড়কের কুমিল্লার টমছমব্রিজ থেকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়কের চার লেন প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। ৫৯ কিলোমিটার সড়কের প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় ২ হাজার ১৭০ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। সড়কের কুমিল্লার অংশে রয়েছে ৪৫ কিলোমিটার এবং নোয়াখালী অংশে রয়েছে ১৪ কিলোমিটার। সড়কটির বর্তমান প্রশস্ততা ৪০ থেকে ৪৫ ফুট। চার লেনে তা ৯০ ফুটে উন্নীত হবে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সময় বেঁধে দেওয়া হয়। কুমিল্লা-লাকসাম-নোয়াখালী চার লেনে উন্নীতকরণের প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স তাহের ব্রাদার্স, রানা বিল্ডার্স ও হাছান টেকনো বিল্ডার্স লিমিটেড যৌথভাবে সড়কের আধুনিকায়নের কাজ করছে। চুক্তি মোতাবেক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শুরু করলেও ধীরগতির কারণে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চার লেনের কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। বর্তমানে এ সড়কে কাজের অগ্রগতি মাত্র ৩৫ শতাংশ। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, কুমিল্লা-লাকসাম-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কের কিছু অংশ চার লেনে উন্নীত হলেও সড়কের অধিকাংশই ঝুঁকিপূর্ণ। বিশেষ করে পদুয়ার বাজার, শ্রীমন্তপুর, উত্তর রামপুর, বিজয়পুর, লালমাই, বাগমারা, জয়নগর, আলীশ্বর, হরিশ্চর, ফয়েজগঞ্জ, মিশ্রি, জংশন, লাকসাম বাইপাস, চাঁদপুর রেলগেট, দক্ষিণ বাইপাস, ফতেপুর, বাটিয়াভিটা, চন্দনা বাজার, খিলা, নাথেরপেটুয়া, বিপুলাসার, সোনাইমুড়ি ও বেগমগঞ্জের কিছু এলাকায় পিচঢালাই সড়কের খোয়া উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এসব গর্তে যানবাহনের চাকা পড়ে আটকে গিয়ে নষ্ট হচ্ছে গাড়ির মূল্যবান যন্ত্রাংশ, সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। দীর্ঘদিন সড়কটির প্রত্যাশিত সংস্কার না হওয়ায় কুমিল্লা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর জেলার লাখ লাখ মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। মাঝেমধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মীরা গর্তগুলোতে ইটের সুরকি ও বালু দিয়ে রোলার মেশিনে চাপা দিয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ করলেও কিছুদিন পর আবার সমস্যা দেখা যায়। সড়কটিতে অন্তঃসত্ত্বা নারী, বয়স্ক মানুষ ও শিশুদের চলাচল একেবারেই অনিরাপদ। অতিরিক্ত ঝাঁকুনির কারণে যাত্রীদের অনেকের শরীর ব্যথা হয়ে যায়। কুমিল্লার পদুয়ার বাজার থেকে লাকসাম পর্যন্ত যাতায়াতে আধঘণ্টা সময় লাগলেও এখন দেড় থেকে দুই ঘণ্টা ব্যয় হচ্ছে। এতে যাত্রীদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। কুমিল্লা-লাকসাম-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়কটি ঝূঁকিপূর্ণ হওয়ায় এ সড়কে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনায়। গত পাঁচ বছরে এ সড়কে ছোট-বড় দুর্ঘটনায় দেড় শতাধিক মানুষের প্রাণহানি এবং শত শত মানুষ আহত হয়েছে। চলতি বছরের ১৮ আগস্ট লালমাই এলাকার জামতলি নামক স্থানে তিশা পরিবহনের একটি বাস যাত্রীবাহী সিএনজি অটোরিকশাকে চাপা দিলে নাঙ্গলকোটের একই পরিবারের ছয়জনসহ আটজন নিহত হন।

কুমিল্লা সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. মোহাম্মদ আহাদ উল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কুমিল্লা-লাকসাম-নোয়াখালী মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলছে। এ জন্য মেরামত কাজে বড় বরাদ্দ পাওয়া যাচ্ছে না। এর পরও মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনায় নিয়ে আমরা বিভাগীয় পর্যায়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো সংস্কার করছি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর