শনিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

প্রতারকের অনলাইন শপ

মির্জা মেহেদী তমাল

প্রতারকের অনলাইন শপ

‘হ্যালো, আপনি বিকাশে টাকা পাঠান।’ ইসলাম সাহেব ফোন ধরেই একজন মহিলার কণ্ঠে এমন কথা শুনতে পান। ঘাবড়ে যান তিনি। জানতে চান বিষয়টি। সেই মহিলা আবারও বলতে থাকেন, অর্ডার দিয়েছেন। টাকা পাঠান তাড়াতাড়ি। ইসলাম সাহেব আবারও তাকে বলতে থাকেন, আমি তো কোনো কিছু অর্ডার করিনি। কোথাও আপনাদের ভুল হচ্ছে। এবার সেই মহিলা ক্ষুব্ধ। চিৎকার শুরু করলেন, বলেন, যদি টাকা না পাঠান আপনার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে। ইসলাম সাহেব এবার সেই মহিলার কাছে জানতে চান, কিসের অফিস তাদের। কী ধরনের পণ্য তারা সরবরাহ করেন। সেই মহিলা বলেন, তাদের কোম্পানির নাম পিয়র প্রোডাক্টস। এ কথা বলেই ফোনের লাইন কেটে দেন মহিলাটি। পিয়র প্রোডাক্টস নামে কোনো অনলাইনে পণ্য বিক্রির প্রতিষ্ঠান রয়েছে কিনা তার খোঁজ করা হয়। কিন্তু এ নামের কোনো প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ইসলাম বলেন, শুক্রবার বিকাল ৪টা ৩৮ মিনিটে তার কাছে ০১৮৮৯৭০২১০৬ নাম্বার থেকে একটি ফোন আসে। আমি হ্যালো বলতেই এক মহিলা বিকাশে টাকা পাঠানোর জন্য চাপ দিতে থাকেন। একপর্যায়ে তিনি আমাকে মামলার ভয় দেখান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলো জানায়, অনলাইন শপিংয়ের নামে প্রতারণার চক্র গড়ে উঠেছে। তারা নানা কায়দায় বিভিন্নভাবে প্রতারণা করে আসছে।  ফোন করে অনলাইন শপের নামে চাপপ্রয়োগে টাকা আদায় করাও এই চক্রের কাজ। ফোনে অর্ডারের নাম করে টাকা আদায় ছাড়াও অনলাইন শপিংয়ের আরও নানা ফাঁদ আবিষ্কার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সম্প্রতি ফেসবুকে কিছু প্রতারক চক্র বিভিন্ন ব্যবসায়িক নামে অনলাইন শপিংয়ের পেজ খুলে স্মার্টফোন বিশেষ মূল্য ছাড়ে বিক্রি করার বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। এসব অনলাইন শপ থেকে পণ্য অর্ডার করে কেউ পাচ্ছেন নষ্ট পুরনো মোবাইল, আবার কেউ পাচ্ছেন খালি প্যাকেট।

এসব অনলাইন শপের বাহারি অফার সহজেই মন কেড়ে  নেয় যে কোনো অজ্ঞ ক্রেতার। বাজার থেকে কম মূল্যে ব্র্যান্ড নিউ মোবাইল ফোন বিক্রির প্রলোভনমূলক এসব বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পা দিচ্ছেন অনেকেই। কয়েক সপ্তাহ আগের ঘটনা। স্কুলছাত্র শাহাদাৎ হোসেন আলভী (১৪) কোরিয়ান ফোন মার্ট নামক ফেসবুকের একটি অনলাইন শপ থেকে ৪,৫০০ টাকা দিয়ে একটি আইফোন এক্স এর মাস্টার কপি অর্ডার করে পায় শুধু খালি প্যাকেট। পরবর্তীতে ক্রেতা আলভী তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আশানুরূপ কোনো তথ্য পায়নি। এসব অনলাইন শপ বিশেষ ডিসকাউন্ট দিয়ে আপনাকে যে কোনো স্মার্টফোন দিতে চাইবে, বলবে কোরিয়ান এক  কোম্পানি এই ডিসকাউন্ট দিচ্ছে। এখান থেকে মোবাইল অর্ডার করলে আগেই ডেলিভারি খরচ ১০০/১৫০ টাকা বিকাশ করতে হবে, বাকি টাকা পার্সেল পৌঁছানোর পর দিতে হবে। বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পার্সেল পাঠায় এসব প্রতারক চক্র। সাধারণত কুরিয়ার থেকে পার্সেল নেওয়ার আগে টাকা জমা দিতে হয়, কারণ এ ধরনের ঝামেলা এড়াতে কুরিয়ার সেবার প্রতিষ্ঠানগুলোর এটি একটি প্রক্রিয়া। সম্প্রতি ঠাকুরগাঁওয়ে দারাজের সাইট থেকে স্যামসং ফোন অর্ডার করে হুইল সাবান পাওয়ার বিষয়টি ভাইরাল হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়।

এসব ফাঁদে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কিশোর-কিশোরী, অনলাইন প্রতারণার ক্ষেত্রে অজ্ঞ এমন মানুষই বেশি পতিত হয়ে আসছে। প্রতিদিন সারা দেশ থেকে কত মানুষ নিয়মিত এভাবে প্রতারিত হচ্ছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই।

সাইবার ক্রাইমের বিশেষ টিম নিয়মিত এরকম প্রতারক চক্র গ্রেফতার করছে, তারপরও এদের দৌরাত্ম্য যেন কমছেই না। বিশেষ করে জাতীয় কিছু উৎসবের সময় যখন মানুষ কেনাকাটার দিকে একটু বেশি ঝুঁকে, ঠিক এমন সময় এসব অনলাইনের প্রতারক চক্রগুলো আরও  বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। নানারকম লোভনীয় অফার দিয়ে অনলাইন প্রতারণার ফাঁদে ফেলছে সাধারণ মানুষকে। কাজেই এসব অনলাইন শপ থেকে সাবধান!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর