রবিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতির অভিনব কৌশল

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও মানা হচ্ছে না । দরপত্রের শর্ত ছলচাতুরী, পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে ৫০ কোটি টাকার কাজ দেওয়ার পাঁয়তারা

রুহুল আমিন রাসেল

প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতিবিরোধী ও স্বচ্ছ টেন্ডার বা দরপত্রের নির্দেশনা মানছে না জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। জানা গেছে, মাস্টার সিমেক্স পেপার লিমিটেড নামের পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে ৫০ কোটি টাকার কাজ পাইয়ে দিতে দরপত্রের শর্তাবলিতে ছলচাতুরীর আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। অভিনব কৌশল ও অবাস্তব শর্ত যুক্ত করে বাদ দেওয়া হয়েছে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে। পরীক্ষার উত্তরপত্রের কাগজ এবং অপটিক্যাল মার্ক রিডিং বা ওএমআর ফরম সরবরাহ কাজে কতিপয় কর্মকর্তা ৫ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন। ফলে কোটি কোটি টাকা বাড়তি খরচ হচ্ছে। গত বছরও একই প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়ে ৯ কোটি টাকা বাড়তি খরচ হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে এসব অনিয়মের তথ্য বেরিয়ে আসবে। এ তথ্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের।

এ প্রসঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও ওই দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির প্রধান অধ্যাপক নোমান-উর-রশীদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমি কিছু জানি না।’ এ কথা বলেই তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। এ ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন অর রশীদ, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল-হোসেন ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বদরুজ্জামানের বক্তব্য জানার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তাদের মুঠোফোনে বার্তা পাঠিয়েও উত্তর মেলেনি। দরপত্রের স্বচ্ছতা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন দরপত্র এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে নির্দিষ্ট কোনো ঠিকাদার বা বড় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বারবার কাজ না পায়। নতুন ঠিকাদার যাতে কাজ পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা মানছে না জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

সূত্র জানায়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার উত্তরপত্রের কাগজ এবং অপটিক্যাল মার্ক রিডিং বা ওএমআর ফরম সরবরাহ কাজে ৫০ কোটি টাকার দরপত্রে বেশ কিছু শর্ত ও কৌশল গ্রহণ করে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাদ দেওয়ার প্রচেষ্টা চলছে। এসব শর্তকে অবাস্তব চিহ্নিত করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান। দরপত্রে একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতে যেসব শর্ত আরোপ করা হয়েছে, এর মধ্যে রয়েছে- বিগত তিন বছরের মধ্যে ওএমআরসহ উত্তরপত্র সরবরাহ কাজের একক কার্যাদেশ কমপক্ষে ২০ কোটি টাকা এবং সংশ্লিষ্ট কাজে মোট কার্যাদেশ কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। বোর্ড বা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন বছরের মধ্যে একক কার্যাদেশ কমপক্ষে ১ কোটি ওএমআর ফরম সরবরাহের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে দুটি অনলাইন লিথোকোড মেশিন থাকতে হবে। অন্যান্য শিক্ষা বোর্ড যেখানে সাড়ে ৮ বাই ১১ ইঞ্চি উত্তরপত্র কেনে, সেখানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সাড়ে ৮ বাই পৌনে ১২ ইঞ্চির খাতা এবং সাড়ে ৮ বাই ১১ দশমিক ৬৯ ইঞ্চির ওএমআর ফরম কেনার কথা দরপত্রে বলেছে। দরপত্রের এসব শর্ত পূরণ করে শুধু একটি প্রতিষ্ঠান। মাস্টার সিমেক্স পেপার লিমিটেড নামের এই প্রতিষ্ঠানটি তিন বছর ধরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তরপত্র সরবরাহ করছে।

জানা গেছে, লিথোকোডের ওএমআর ফরমসহ কভার পেজ ছাপানো উত্তরপত্র সরবরাহের কাজ বাংলাদেশে ছয়টি প্রতিষ্ঠান করে। এগুলো হচ্ছে- এলিট প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, এশিয়া বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েটস, প্রিন্ট মাস্টার, বাংলাদেশ মনোস্পুল পেপার লিমিটেড, বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেড ও মাস্টার সিমেক্স পেপার লিমিটেড। এর মধ্যে এলিট প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং গত বছর সর্বনিম্ন দরদাতা হয়েও কাজ পায়নি।

নথি ঘেঁটে দেখা গেছে, ২০১৬ সালে একই কাজের জন্য এমএন মল্লিক ২৭ কোটি ২৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা দর দিয়েছিল, আর এলিট প্রিন্টিং দিয়েছিল ৩২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ওই বছর তৃতীয় সর্বোচ্চ দরদাতা ছিল মাস্টার সিমেক্স। তারা প্রায় সাড়ে ৩৩ কোটি টাকায় কাজটি পায়। ২০১৮ সালে একই ধরনের কেনাকাটায় এলিট প্রিন্টিং দর দিয়েছিল ৩২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। কিন্তু প্রায় ৪২ কোটি টাকায় সেই কাজটি পায় মাস্টার সিমেক্স। সে হিসাবে এ প্রতিষ্ঠানটিই এ বছর আরোপিত শর্তগুলো পূরণ করে।

এসব তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলো। ৫ নভেম্বর বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেড (বিপিএমএল), ৪ নভেম্বর এলিট প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড, ৩ নভেম্বর প্রিন্ট মাস্টার প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেড ও এশিয়া বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েটস এ অভিযোগ দেয়।

বসুন্ধরা গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত পত্রে বসুন্ধরা পেপার মিলস লিমিটেড (বিপিএমএল) বলেছে, দরপত্রের বেশ কিছু শর্ত দেখে মনে হয়েছে একটি গোষ্ঠী বিশেষ কোনো প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে সমস্ত প্রস্তুতি গ্রহণ করেই টেন্ডার শিডিউল প্রণয়ন করেছে, যা উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। দরপত্র শিডিউল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের বিগত তিন বছরের মধ্যে ৫০ কোটি টাকার কার্যাদেশ থাকার শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক সামর্থ্য প্রমাণ করার জন্য কার্যাদেশের যৌক্তিকতা বোধগম্য নয়। দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের কাজ করার মতো বেশ কিছু স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু দুটি অনলাইন লিথোকোড প্রিন্টিং মেশিন থাকার বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে কেবল একটি প্রতিষ্ঠানের এই সুবিধা রয়েছে। উল্লেখ্য, এনসিটিবিসহ বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড লটভিত্তিক টেন্ডার প্রক্রিয়া অনুসরণ করে। লটভিত্তিক দরপত্র আহ্বান করলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিপুল পরিমাণ আর্থিক সাশ্রয় হবে। তাই স্বচ্ছ টেন্ডার ও প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়া অনুসরণের লক্ষ্যে দরপত্রের শর্ত পুনর্বিবেচনা এবং লটভিত্তিক অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করে নতুনভাবে পুনঃ টেন্ডারের অনুরোধ জানাচ্ছি।

এলিট প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের পরিচালক মোহা. আশরাফ আলী স্বাক্ষরিত পত্রে বলা হয়, দরপত্রের শর্তে বলা আছে, দরদাতার কমপক্ষে দুটি অনলাইন লিথোকোড প্রিন্টিং মেশিন থাকতে হবে। এই শর্তটি বাতিলের অনুরোধ করছি। এই শর্ত বাতিল না হলে কারিগরি দর প্রস্তাবেই একটি প্রতিষ্ঠানের ছাড়া সব প্রতিষ্ঠানের দর প্রস্তাব বাতিল হয়ে যাবে। একক কার্যাদেশে ২০ কোটি টাকার কার্যাদেশ চাওয়া হয়েছে, এই শর্ত কোনো একটি বিশেষ সরবরাহকারীর অনুকূলে সুবিধা প্রদানের প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত বহন করছে। তাই এই শর্তটি বাতিলের অনুরোধ করছি। বর্তমানে শিক্ষা বোর্ডসহ অধিকাংশ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি রোধে ই-জিপি দরপত্র আহ্বান করছে। একমাত্র জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ই এখনো ম্যানুয়েল বা হস্তকৃত পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করেছে। এতে দুর্নীতি করার সুযোগ থাকে। এ ছাড়া গত বছর একক কার্যাদেশে ২০ কোটি টাকার কার্যাদেশ চাওয়া হয়। এ বছর কী কারণে একক কার্যাদেশে ২০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে, তা বোধগম্য নয়। তাই দুর্নীতি ও স্বচ্ছতার সঙ্গে দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে মালামাল কিনতে দরপত্রের শর্তাবলি সংশোধন সময়ের দাবি। প্রিন্ট মাস্টার প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত পত্রে বলা হয়, টেন্ডারে আরোপিত কয়েকটি শর্ত শিথিল করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করছি। এর মধ্যে রয়েছে- শিক্ষা বোর্ড বা বিশ্ববিদ্যালয়ে তিন বছরের মধ্যে একক কার্যাদেশে কমপক্ষে ১ কোটি ওএমআর ফরম সরবরাহের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কাজের একক কার্যাদেশে কমপক্ষে ২০ কোটি টাকা এবং মোট কার্যাদেশে কমপক্ষে ৫০ কোটি টাকার সংশ্লিষ্ট কাজে অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। দুটি অনলাইন লিথোকোড প্রিন্টিং মেশিন থাকতে হবে। কিন্তু জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া এ পর্যন্ত অন্য কোনো শিক্ষা বোর্ড ২০ কোটি টাকার একক কার্যাদেশ দেয়নি। ফলে উল্লিখিত শর্তের কারণে কোনো একটি প্রতিষ্ঠান মনোপলি বা একচেটিয়া অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে। প্রতিযোগিতামূলক অংশগ্রহণ না হওয়ায় সরকারি অর্থ অপচয়ের সুযোগ তৈরি হবে।

এশিয়া বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েটসের স্বত্বাধিকারী আবদুল মান্নান স্বাক্ষরিত পত্রে বলা হয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দরপত্রের শর্তাবলি দেখে বোঝা যাচ্ছে, মাস্টার সিমেক্স পেপার লিমিটেডকে চতুর্থবারের মতো কাজ পাইয়ে দিতে সব শর্ত আরোপ করা হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অংশগ্রহণমূলক টেন্ডারের চিন্তা না করে একটি প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে এ ধরনের শর্ত আরোপ করেছে। যেখানে সব শিক্ষা বোর্ড এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ই-জিপিতে ই-টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে, সেখানে মাস্টার সিমেক্স পেপার লিমিটেডকে দরপত্রের কাজ দিতে কৌশলে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়।

জানা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বাদে উত্তরপত্র এবং ওএমআর ফরম কেনাকাটার কাজ করে বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় কেনাকাটা করছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। এই বোর্ডের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের একক কার্যাদেশ কখনোই ২০ কোটি টাকার বেশি হয় না। আমরা বছরে তিনটি পরীক্ষার জন্য তিনবারে সর্বোচ্চ ১৬ থেকে ১৭ কোটি টাকার কেনাকাটা করি।’

সংশ্লিষ্টদের মতে, দুর্নীতি ঠেকাতে সরকার ই-টেন্ডারিং প্রবর্তন করেছে। কিন্তু সেখানে এই প্রতিষ্ঠানটি ‘দুই খাম’ পদ্ধতি চালু রেখেছে। এ পদ্ধতিই দুর্নীতির হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। এ পদ্ধতিতে প্রথম খামে থাকে দরপত্রে অংশগ্রহণকারীর নথিপত্র। এগুলোর ভিত্তিতে একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজের জন্য মনোনীত বা বাতিল করা হয়। এরপর কাজের দরসংক্রান্ত খাম খোলা হয়। এ প্রক্রিয়ায় চাইলে আগে থেকে ঠিক করে রাখা প্রতিষ্ঠানকে বাছাই করা যায়। ফলে সর্বনিম্ন দরদাতা আর কাজটি পায় না।

এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে ৫ নভেম্বর পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান একনেক বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে বলেছেন, দরপত্র এমনভাবে তৈরি করতে হবে, যাতে নির্দিষ্ট কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিংবা বড় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বারবার কাজ না পায়। নতুন ঠিকাদার যাতে কাজ পান, তা নিশ্চিত করতে হবে। কাজের মান ঠিক রেখে সবাই যাতে সরকারের উন্নয়নকাজে অংশ নিতে পারেন।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ) সূত্র জানায়, সরকারি কেনাকাটা আইনে ২০১৬ সালে একটি সংশোধনী আনা হয়। সেই আইনের ৩১ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, দরপত্র জমা দেওয়ার সময় ১০ শতাংশ ভেরিয়েশন করা যাবে। অর্থাৎ ১০০ টাকার দরপত্রে কোনো ঠিকাদার চাইলে ৯০ টাকা আবার ১১০ টাকা প্রস্তাব করতে পারবেন। এই ধারা সংযোজনের কারণে বড় বড় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেওয়ার সময় ১০ শতাংশ কমবেশি দেখায়। দরপত্র মূল্যায়নের সময় বড় কোম্পানির বেশি কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকায় তারা কাজটি বাগিয়ে নেয়। পরে সেই কাজ কমিশনের মাধ্যমে অন্য কারও কাছে বিক্রি করে দেয়। এতে একদিকে যেমন ছোট ছোট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোনো কাজ পায় না, অন্যদিকে কমিশন নিয়ে অযোগ্য ঠিকাদারকে কাজ দেওয়ার কারণে মান ঠিক থাকে না। ১০ শতাংশ ভেরিয়েশনের ধারাটি বাদ দিলে স্বাভাবিকভাবেই বড় কোম্পানির কাজ পাওয়ার পথ বন্ধ হবে এবং ছোট কোম্পানির কাজ পাওয়ার পথ সুগম হবে বলে মনে করে সিপিটিইউ।

সর্বশেষ খবর