রবিবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ফেসবুক প্রেম অতঃপর

মির্জা মেহেদী তমাল

ফেসবুক প্রেম অতঃপর

মোশারফের সঙ্গে লাকির পরিচয় ফেসবুকে। পরিচয়ের পর থেকেই ম্যাসেঞ্জারে তাদের কথাবার্তা। লাকি তার জীবনের কথা বলে। মোশারফ তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে, নিজের কথাও শোনায়। কথা বলতে বলতে কখন যে রাত পার হয়ে সকাল হয়ে যেত, তারা বুঝতেও পারত না। এভাবেই চলে বেশ কিছুদিন। কথা বলতে বলতে একে অপরকে ভালোবেসে ফেলে। দেখা করতে চায় মোশারফ। লাকিও রাজি হয়। রাজধানীর দক্ষিণখানের দক্ষিণ পাড়ার মৃত বাবুল মিয়ার মেয়ে লাকি। আর মোশারফ হলো উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে। মোশারফের সঙ্গে লাকির সামনা-সামনি দেখা হওয়ার পর দুজনকেই দুজনের ভালো লাগে। ছোট বেলায় মাকে হারানোর পর থেকেই লাকির কষ্টের জীবন শুরু। বড় হয়েছে সৎ মায়ের কাছে। এসব কথা শুনে মোশারফ তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। বলে, সে তার পাশে আছে। তাকে বিয়ে করতে চায়। সব কষ্ট ভুলিয়ে দিয়ে সারা জীবন একসঙ্গে থাকতে চায়। মোশারফের এমন আবেগ ভরা কথায় চোখে পানি আসে লাকির। নতুন জীবনের স্বপ্নে বিভোর লাকি।

মোশারফ আর লাকি ঘুরে বেড়ায় এখানে সেখানে। একদিন মোশারফ উত্তরায় তার এক বন্ধুর বাসায় নিয়ে যায় লাকিকে। সেখানে লাকির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে চায়। কিন্তু লাকি তাকে জানায়, বিয়ের পর সব হবে। কিন্তু মোশারফ মানতে চায় নায়। বলে, বিয়েতো কদিন পরেই করে ফেলব। পারেনি লাকি নিজেকে ধরে রাখতে। মোশারফের আশ্বাসে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে। সেই থেকে শুরু। এরপর যখন তাদের দেখা হতো শারীরিক সম্পর্ক বাদ থাকত না। মোশারফকে নিয়ে লাকি তার বাসায় নিয়ে যায়। সৎ মা এবং বাবার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। কিন্তু মোশারফ বিয়ে করবে বললেও নানা অজুহাতে এড়িয়ে যেত। প্রায় দেড় বছর কেটে যায়। এরই মধ্যে আরও একটি ঝড় আসে লাকির জীবনে। তার বাবা মারা যান। মোশারফ সে সময়ে খুব একটা যোগাযোগ করত না। কিছুদিন পর আবারও দেখা সাক্ষাৎ। শারীরিক সম্পর্কের আগে বিয়ের আশ্বাস। এভাবে আরও কিছুদিন চলতে থাকে। লাকির মনে ভয় জাগে। মোশারফ কি তাহলে তার সঙ্গে প্রতারণা করছে? এমন প্রশ্ন নিজের মনে জাগতে থাকে। ছোট বেলায় মা হারানো এবং অল্প কিছুদিন আগে বাবাকে হারিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল লাকি। এরই মধ্যে মোশারফের আচরণের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন।

লাকি জানায়, মোশারফকে যতবার বিয়ের কথা বলা হয়, সে এড়িয়ে যেতে থাকে। সর্বশেষ মোশারফ তাদের বাসায় আসে গত ৮ নভেম্বর রাতে। বাসায় এসেই মোশারফ তার ঘরে ঢুকে পড়ে। কথাবার্তার একপর্যায়ে মোশারফ তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়তে চায়। কিন্তু লাকি রাজি হয় না। বলে বিয়ের আগে কিছু হবে না আর। কিন্তু মোশারফ জোর জবরদস্তি শুরু করে। একপর্যায়ে জোর করেই শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে মোশারফ। আমি তার সঙ্গে রাগারাগি করি। লাকি জানায়, এ সময় আশপাশের লোকজন বিষয়টি টের পেয়ে আমাদের বাসায় আসে। একটা মেয়ের ঘরে মোশারফকে দেখে তারা উত্তেজিত হয়। বলে, এখানে ছেলেটি কী করে। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও সেখানে আসে। আমরা তাদের আমাদের সম্পর্কের কথা বলি। তারা মোশারফকে বলে, যেহেতু সম্পর্ক আপনাদের আছে, বিয়ে করে ফেলুন। এ সময় মোশারফ প্রথমে রাজি হয় না। তখন লোকজন বলে, তবে আমরা পুলিশকে খবর দিব।

লাকি মোশারফকে বলে, আমরা যেহেতু বিয়ে করব সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তবে আমরা এখনই করে ফেলি। তখন মোশারফ প্রথমে রাজি হয় না। একপর্যায়ে সে রাজি হয়। কাজী ডেকে নিয়ে আসা হয়। এসব করতে করতেই ফজরের আজান পড়ে। মোশারফ ফোনে তার লোকজনকে ডাকতে থাকে। তার বেশ কয়েকজন বন্ধু-বান্ধব আসে। যারা উত্তরায় সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। আকার ইঙ্গিতে নানাভাবে লাকিকে ভয়ভীতি দেখায়। তারা আসার পরই মোশারফ তার মত পাল্টে ফেলে। বলে, সে বিয়ে করবে না। এ কথা শুনে লাকির মাথায় যেন বাজ পড়ল। কান্নাকাটি করতে থাকে মোশারফের হাত ধরে। কিন্তু মত পাল্টায় না মোশারফ। বলে, পুলিশ আসুক। থানায় যেয়েই ফয়সালা করব। এ সময় পুলিশ আসে। সবাই দক্ষিণখান থানায় যায়। লাকি দক্ষিণখান থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১৯। ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়। পুলিশ ওই মামলায় মোশারফকে গ্রেফতার করে। লাকি জানায়, তাকে থানা থেকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানো হয়। কিন্তু লাকিকে সেখানে বিকাল পর্যন্ত বসিয়ে রাখা হয়। এরপর চলে ধর্ষণের পরীক্ষা-নিরীক্ষা। লাকি জানায়, আমি মোশারফকে প্রাণের চেয়েও ভালোবেসেছি। কিন্তু আমার সঙ্গে সে প্রতারণা করেছে। বিয়ের আশ্বাস দিয়ে দিনের পর দিন আমাকে ব্যবহার করেছে। শেষমেশ সে আমাকে ধর্ষণ করে। আমি বিচার চাই। আমার ভুল হয়েছে, আমি তার সম্পর্কে কোনো খোঁজখবর ভালোভাবে নেইনি। সে নিজেকে উত্তরা থানা ১ নম্বর ওয়ার্ডের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক বলে পরিচয় দেয়। যে কারণে আমিও ছিলাম। আর কেউ যেন এভাবে আমার মতো প্রতারণার শিকার না হয়। এ ধরনের প্রতারকদের কাছ থেকে সবাইকে সাবধান থাকা উচিত বলেও জানান অসহায় লাকি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর