মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
শাবি শিক্ষার্থী প্রতীকের মৃত্যুরহস্য

পিবিআইর তদন্ত দাবি পরিবারের

মাহবুব মমতাজী ও শাহ দিদার আলম নবেল

হযরত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) মেধাবী শিক্ষার্থী তাইফুর রহমান প্রতীকের মৃত্যুরহস্য এখনো উদঘাটন হয়নি। তদন্তে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ বলছে, তাদের তদন্তে প্রতীক আত্মহত্যা করেছে বলেই তারা জানতে পেরেছেন। তবে কেন আত্মহত্যা করলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী এই শিক্ষার্থী, প্ররোচনাকারী হিসাবে কেউ রয়েছে কি না, সে ব্যাপারে পুলিশের কোনো জবাব নেই। পরিবারের দাবি, প্রতীককে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এটি নিছক আত্মহত্যার কোনো ঘটনা নয়। তারা প্রতীক হত্যারহস্য উদঘাটনের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)-এর তদন্ত চায়। প্রতীকের স্বজনরা মনে করেন, পিবিআই এই মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনে সম্ভব হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি (জিইবি) বিভাগের ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন প্রতীক। গত ১৪ জানুয়ারিতে সিলেটের কোতোয়ালি থানার পশ্চিম কাজলশাহে ১১৭ নম্বর ভাড়া বাসা থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। পরদিন কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়। পরে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয় সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ মর্গে। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতীকের মৃত্যুর জন্য শাবির জিইবি বিভাগের শিক্ষকদের দায়ী করেন তার বড় বোন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন ডিসঅর্ডার বিভাগের শিক্ষক শান্তা তাওহিদা। অনার্সে ১ম শ্রেণিতে ১ম হওয়া সত্ত্বেও প্রতীককে মাস্টার্সে সুপারভাইজার না দেওয়া এবং বিভিন্ন কোর্সে কম নম্বর দেওয়ার অভিযোগ করেন তিনি। প্রতীক আত্মহত্যা করেছেন উল্লেখ করে গত ১২ মার্চ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের এসআই আকবর হোসাইন ভূঁইয়া। এর আগে গত ২২ জানুয়ারি ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ডা. রাহিমিন নওরোজ এ খোদা তার রিপোর্ট দিয়ে দেন।

চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ওপর গত ১১ সেপ্টেম্বর সিলেটের অতিরিক্ত জেলা হাকিম আদালতে নারাজি আবেদন দিয়েছেন প্রতীকের বাবা মো. তৌহিদুজ্জামান।

ওই আবেদনে তিনি তদন্ত কর্মকর্তার চূড়ান্ত প্রতিবেদনের একাধিক বিষয়ে আপত্তি তুলেন। এর মধ্যে একাধিক স্থানে সময়ের উল্লেখ সম্পর্কে বিভ্রান্তি, দরজা ভাঙার বিস্তারিত বর্ণনা না থাকা, প্রতীককে মৃত ঘোষণাকারী চিকিৎসকের কথা উল্লেখ না থাকা, প্রতীকের লাশ নামানোর বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। এ ছাড়া ঝুলন্ত লাশের তোলা ছবিতে আত্মহত্যার আলামত না থাকারও দাবি করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, ওই তদন্ত প্রতিবেদনে সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা উল্লেখ করা হয়নি, কল রেকর্ড পরীক্ষার ব্যবস্থা করেনি, কিছু কিছু বিষয়ে অসম্পূর্ণ ও মনগড়াভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রতীকের বাবা তৌহিদুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পুলিশ সঠিকভাবে তদন্ত করেনি। প্রতীক আত্মহত্যা করেনি, তাকে হত্যা করা হয়েছে। ছেলের মৃত্যুর ঘটনাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) মাধ্যমে পুনরায় তদন্তের দাবি করেছেন। তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আকবর হোসাইন ভূঁইয়া জানান, প্রতীক ছিল অত্যন্ত মেধাবী। ঘটনার দিন প্রতীকের বান্ধবী তাসনীম নূশা তার ড্রাইভারসহ ঘটনাস্থলে গিয়ে বাসার দরজা ধাক্কাধাক্কি করেন। ভিতর থেকে কোনো সাড়া-শব্দ না পেয়ে বাসার দারোয়ানসহ মইয়ের মাধ্যমে দরজার উপরের ভেন্টিলেটর দিয়ে দেখতে পান, প্রতীক সিলিং ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস নিয়ে ঝুলে আছেন। পরে তদন্তে আত্মহত্যার বিষয়টি বেরিয়ে এসেছে। তিনি বলেন, যখন সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করা হয় তখন প্রতীকের বান্ধবী নাফিসা তাসনীম নূশা এবং নূশার বাবা সিদ্দিকুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। যদি প্রতীকের আত্মহত্যারই প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে আত্মহত্যার প্ররোচনাকারীকে চিহ্নিত করতে পেরেছেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঘটনার দিন প্রতীকের পরিবার সে ধরনের কোনো অভিযোগ করেনি। তাই তদন্ত সেদিকে নেওয়া হয়নি। মোবাইলফোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং কললিস্টও যাচাই-বাছাই করা হয়নি। তবে প্রতীকের বান্ধবীকে বিভিন্নভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে, বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয়েছে। এদিকে প্রতীকের মৃত্যুর ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ঘটনার ১০ মাসেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি গঠিত কমিটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রিকালচার অ্যান্ড মিনারেল সায়েন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বেলাল উদ্দীনকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটির অপর সদস্যরা হলেন- গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম ও সহকারী প্রক্টর সামিউল ইসলাম।

সর্বশেষ খবর