বুধবার, ২০ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

দুর্ঘটনার পর তোড়জোড় আগে খবর রাখেনি কেউ

চট্টগ্রামে ভয়াবহ গ্যাস বিস্ফোরণ

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

দুর্ঘটনায় প্রাণহানির পর কুম্ভকর্ণের মতো ঘুম ভাঙে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। টনক নড়ে সংস্থাগুলোর। এর আগে রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে কারও কোনো তৎপরতা থাকে না। ফলে ধারাবাহিকভাবে দুর্ঘটনা ঘটছে। হচ্ছে প্রাণহানি। এমনিভাবে চট্টগ্রামের পাথরঘাটা ব্রিকফিল্ড রোডের গ্যাস বিস্ফোরণে সাতজনের প্রাণহানির পর কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) উদ্যোগ নিয়েছে বাসাবাড়ির গ্যাস-সংযোগের রাইজার পরীক্ষার। তাছাড়া চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষও (সিডিএ) কর্মসূচি নিয়েছে পাথরঘাটার ভবনগুলো ইমারত বিধিমালা মেনে নির্মিত হয়েছিল কিনা তা তদারকির। নগরবাসীর অভিযোগ, নগরে গ্যাসের লাইন ও রাইজার সঠিক আছে কিনা কিংবা ভবন নকশা মেনে নির্মাণ হয়েছে কিনা- এসব সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর নিয়মিত কাজ। কিন্তু সেবা সংস্থাগুলো এ বিধিবদ্ধ কাজগুলো করে না। ফলে কিছুদিন পর পর দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। কিন্তু এর কি শেষ নেই? কেজিডিসিএল সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম নগরে বর্তমানে ৫ লাখ ৯৭ হাজার ৯৮৫টি আবাসিক সংযোগ আছে। রয়েছে ২ হাজার ৮০০ কিলোমিটার সরবরাহ লাইন। তাছাড়া গ্যাস সংযোগের জন্য রাইজার আছে প্রায় দেড় লাখ। কিন্তু গ্যাসলাইন এবং রাইজারগুলো পুরনো। ফলে এগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। মূল লাইন পরীক্ষা করা হলেও বাসাবাড়ির সংযোগ লাইন পরীক্ষা করা হয় না। তবে এ দুর্ঘটনার পর রাইজার পরীক্ষা-নিরীক্ষার উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক (প্রকৌশল ও সেবা) মো. সারোয়ার হোসেন বলেন, ‘গ্যাসলাইন ও রাইজার নিয়মিত পরীক্ষার মতো জনবল নেই। তবুও নিয়মিতই গ্যাসলাইন পরীক্ষা করে থাকি। তবে দুর্ঘটনার পর রাইজার পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে মনে হয়েছে, গ্যাস নিঃসরণে এ ঘটনা ঘটেনি। কারণ ওই বাসার গ্যাসের রাইজার, পাইপলাইন ও রান্নাঘরের চুলা অক্ষত ছিল।’ সিডিএ সূত্রে জানা যায়, নগরে সিডিএ প্রতি মাসে প্রায় আড়াই হাজার নকশা অনুমোদন দিয়ে থাকে। বৈধ-অবৈধ ভবন আছে প্রায় আড়াই লাখ। তবে নকশাবহির্ভূত কতটি ভবন রয়েছে তার কোনো তালিকা নেই। অথচ চট্টগ্রাম মহানগর ইমারত (নির্মাণ, উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও অপসারণ) বিধিমালা-২০০৮ মতে, ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র, নির্মাণ অনুমোদনপত্র, নির্মাণ কাজ শুরু অবহিতকরণ, ভূমি ব্যবহার সনদ ও পাঁচ বছর পর তা নবায়ন করতে হয়। কিন্তু চট্টগ্রামে গড়ে ওঠা বেশির ভাগ ভবনই এসব নিয়ম তোয়াক্কা করে না বলে অভিযোগ আছে। সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী হাসান বিন শামস বলেন, ‘জনবল সংকটসহ নানা কারণে কঠোর মনিটরিং করা হয় না। তবে এখন সব ভবনের নকশা যাচাই-বাছাই করা হবে। তাছাড়া বিস্ফোরণস্থলের আশপাশের ভবনগুলো বসবাসের উপযোগী কিনা, তাও যাচাই করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে এখন গণপূর্ত মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছে।’

চলছে তদন্ত : গ্যাস বিস্ফোরণে সাতজনের প্রাণহানির ঘটনা তদন্তে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির কাজ চলছে। গতকাল দুপুরে তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ জেড এম শরীফ হোসেন সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন এবং প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। অন্যান্য তদন্তও চলছে। যথা সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।’ প্রসঙ্গত, রবিবার পাথরঘাটা ব্রিকফিল্ড রোডের একটি বাড়ির নিচতলায় গ্যাস বিস্ফোরণে নারী ও কিশোরসহ সাতজনের মৃত্যু ও আহত হয়েছেন ১০ জন।

সর্বশেষ খবর