সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

বাজারে কারসাজির বিরুদ্ধে কঠোর হবে সরকার

♦ সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগে বাজার মনিটরিংয়ের সিদ্ধান্ত ♦ ব্যবসায়ীরা অহেতুক দাম বাড়ালে অ্যাকশন নেবে এফবিসিসিআই

নিজস্ব প্রতিবেদক

সারা দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের বাজারে কারসাজির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে সরকার। কারসাজিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিও দেওয়া হবে। আর ব্যবসায়ীরা অহেতুক কোনো পণ্যের দাম বাড়িয়ে বাজারে সংকট সৃষ্টি করলে এর বিরুদ্ধেও অ্যাকশন নেবে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। এই দুই পক্ষই সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগে সারা বছর বাজার মনিটরিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে পিয়াজ, লবণ, তেল, চিনি, ডাল এসব নিত্যপণ্যের ভবিষ্যতে আর কোনো সংকট হবে না। সরকার ও ব্যবসায়ীরা মিলে ভবিষ্যতে ভোগ্যপণ্যের বাজারে সুষম সরবরাহের মাধ্যমে সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার যৌথ ঘোষণা দিয়েছেন। সরকারের প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ীরা গতকাল প্রায় দুই ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে যাতে দেশকে আর পিয়াজ সংকটের মতো অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়। পিয়াজ মজুদ করে যারা সংকট তৈরি করেছে তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়া হবে। কোনো ব্যবসায়ী বা ব্যবসায়িক সংগঠন অহেতুক কোনো পণ্যের দাম বাড়িয়ে সংকট সৃষ্টির চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সারা বছর বাজারের এই স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে একযোগে কাজ করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। গতকাল রাজধানীর মতিঝিলের ফেডারেশন ভবনে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) আয়োজিত রুদ্ধদ্বার গোলটেবিল বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। এতে বক্তব্য দেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, শিল্প সচিব আবদুল হালিম, খাদ্য সচিব শাহাবুদ্দিন আহমেদ, প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারপারসন মো. মফিজুল ইসলামসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের চালের মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, সরু চালে বেশি চাপ পড়ায় দাম কিছুটা বাড়লেও এখন তা নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে পাইকারি বাজারে যে দাম, এর তুলনায় খুচরা বাজারে কেজিতে ৭-৮ টাকা দামের পার্থক্য থাকার বিষয়ে তিনি ভোক্তা অধিকার অধিদফতরকে কঠোর তদারকির পরামর্শ দেন। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ভারত পিয়াজ রপ্তানি না করায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এর সুযোগ নিয়েছেন। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকার বড় ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বিমানে ও জাহাজে করে আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। আগামী মাসের ১০ তারিখের মধ্যে এ সংকট কেটে যাবে। এনবিআর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া পিয়াজ মজুদদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, ‘যদি কেউ পণ্যের মজুদ করে বাজারে অহেতুক চাপ সৃষ্টি করে, তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়া হবে। কে সরকারপক্ষ আর কে বিরোধীপক্ষ তা দেখছি না। আমরা ব্যবসায়ীদের সরকারের পক্ষ থেকে সোজাসাপটা মেসেজ দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘পিয়াজ কারা কখন আমদানি করেছে, কখন কত টাকায় বিক্রি করেছে তা এনবিআর খতিয়ে দেখছে। আর ভোক্তাদের জানাতে চাই, লবণ, তেল, চিনি, ডালজাতীয় নিত্যপণ্যে ভবিষ্যতে কোনো সমস্যা হবে না।’ এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, ‘আমরা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি কোনো ব্যবসায়ী বা সংগঠন অহেতুক কোনো পণ্যের দাম বাড়িয়ে সংকট সৃষ্টি করলে কঠোর ব্যবস্থা নেবে এফবিসিসিআই।’ তিনি বলেন, পণ্যের সরবরাহ ঠিক রেখে বাজারে মূল্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা হবে, যাতে ভবিষ্যতে কোনো অবস্থাতেই পিয়াজের মতো কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়। এজন্য ভোক্তা পর্যায়ে সুলভ মূল্যে পণ্য পৌঁছাতে সরকার ও ব্যবসায়ীরা সমন্বিতভাবে কাজ করবেন। ইতিমধ্যে যেসব সমস্যা দেখা দিয়েছে তার দ্রুত উত্তরণ ঘটানো হবে।’ বৈঠকে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, ‘যদি অনৈতিক ব্যবসা হয়ে যায় তাহলে দেশ টিকবে না। দেশ না টিকলে আপনিও ব্যবসা করতে পারবেন না। তাই বলব, আপনার ব্যবসা পরিচালনায় যেটুকু খরচ পড়বে, সেই খরচের মধ্যেই পরিমিত মুনাফা করবেন।’ চালের দাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সরু চালে কেন ৩-৪ টাকা করে বাড়ল আমরা চাল ব্যবসায়ীদের প্রশ্ন করেছিলাম। তাদের বলেছিলাম, সরু চালের দাম যেহেতু বেড়েছে, তার মানে চালের সংকট আছে। তাহলে সরকার কিছু সরু চাল আমদানি করুক। উপস্থিত চাল ব্যবসায়ীরা সঙ্গে সঙ্গে বলেন, না, না, এ কাজ করবেন না। তখন আমি বলেছি, তাহলে চালের দাম কমাতে হবে। দাম কমে গেছে।’

সর্বশেষ খবর