সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

পতেঙ্গা পাচ্ছে না ভারতের আদানি

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

পতেঙ্গা পাচ্ছে না ভারতের আদানি

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনা করার আগ্রহ দেখিয়েছিল ভারতের আদানি পোর্টস এবং স্পেশাল ইকোনমিক জোন লি. ইন্ডিয়া। তবে এই মুহূর্তে ওই টার্মিনালটি পরিচালনার ভার কাউকে দিতে চাইছে না নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় এক মতামতে জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরের প্রস্তাবিত টার্মিনাল নির্মাণ ও অপারেশনের জন্য বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠান থেকে প্রস্তাব পাওয়া গেছে। সুতরাং প্রস্তাবিত টার্মিনালটির অপারেশনাল কার্যক্রম উন্মুক্ত পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করাই যৌক্তিক হবে।  গত ১৭ নভেম্বর নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত মতামত পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে।  বিজেপি নেতৃত্বাধীন ভারত সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত গৌতম আদানির নেতৃত্বাধীন আদানি গোষ্ঠী বাংলাদেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতেও বড় বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছে। ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে বৃহৎ এই শিল্প গোষ্ঠীটির কাছ থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্য এমওইউ করে বাংলাদেশ। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে একটি বিশেষায়িত ইকোনমিক জোন গড়ে তোলার জন্য চুক্তি করেছে ভারতের এই শিল্প গ্রুপটি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, এই টার্মিনালটি নির্মাণ এবং পরিচালনার জন্য চীন ও ভারতের আদানিসহ অন্তত ৭টি দেশের প্রতিষ্ঠান ও সরকার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কোনো প্রস্তাব যাচাই-বাছাই না করেই কোনো একটি নির্দিষ্ট কোম্পানির পক্ষে মতামত দেওয়া সম্ভব নয়। প্রকল্পটির বিষয়ে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বানের পর যারা প্রস্তাব জমা দেবে তাদের ভিতর থেকে যাচাই-বাছাই শেষে যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে বেছে নেওয়াই যুক্তিযুক্ত হবে বলে মন্ত্রণালয় মনে করছে। জানা গেছে, পতেঙ্গা টার্মিনাল নির্মাণ ও অপারেশনের জন্য সিঙ্গাপুরের পিএসএ, কোরিয়ার সমুদ্র ও মৎস্য মন্ত্রণালয়, সংযুক্ত আরব আমিরাতের ডিপি ওয়ার্ল্ড, সৌদি আরবের রেড সি গেটওয়ে টার্মিনাল, চীনের সিএম পোর্ট হোল্ডিংস, ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনাল এবং ভারতের আদানি গ্রুপের কাছ থেকে প্রস্তাব পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্র্তৃপক্ষ (চবক) জানায়, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালে মাত্র তিনটি কনটেইনার জেটি রয়েছে। পতেঙ্গা টার্মিনাল ও নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের জেটির ধরন ও অবস্থান একই হওয়ায় প্রতিষ্ঠিত দেশীয় অপারেটর দিয়েও সেগুলো পরিচালনা করা সম্ভব। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো মতামতে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় বলেছে, স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল ও নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালসহ সম্পূর্ণ চট্টগ্রাম বন্দর দেশীয় অপারেটর দিয়েই পরিচালিত হচ্ছে। দেশীয় অপারেটর দিয়ে পরিচালনা করেই লয়েডস লিস্ট অনুযায়ী বিশ্বে ১০০টি বন্দরের মধ্যে ছয় ধাপ এগিয়ে বন্দরটি সক্ষমতার দিক থেকে ২০১৮ সালে ৬৪তম স্থানে উন্নীত হয়েছে। ২০০৭ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল। এরপর কোনো নতুন টার্মিনাল ও জেটি নির্মাণ না হওয়ায় আমদানি-রপ্তানি পণ্য বোঝাই ও খালাসে হিমশিম খাচ্ছে দেশের প্রধান এই সমুদ্রবন্দর। বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে তিনটি টার্মিনাল নির্মাণের মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বে-টার্মিনাল, লালদিয়া টার্মিনাল ও পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল। এর মধ্যে বে-টার্মিনালের ভূমি অধিগ্রহণ চলছে। লালদিয়া টার্মিনাল প্রকল্পটি এখনো প্রস্তাবনার মধ্যে রয়ে গেছে। এ দুটি প্রকল্প ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ হওয়ায় পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এ বছরের শুরুর দিকে বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনালের স্থাপনা নির্মাণ কাজ ১৬ শতাংশ শেষ হয়েছে এবং বাকি কাজ শেষ করার প্রক্রিয়া চলছে। নতুন এ টার্মিনাল পুরোদমে চালু হলে বন্দরের সক্ষমতা বাড়বে। প্রতিবছর চার লাখ ৪৫ হাজার টিইইউএস (টোয়েন্টি ফুট ইকুইভেলেন্ট ইউনিটস) কনটেইনার বেশি হ্যান্ডলিং করা যাবে। ২০১৭ সালে সেপ্টেম্বরে প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এতে তিনটি কনটেইনার ও একটি ডলফিন (তেল খালাসের) জেটি থাকবে। একসঙ্গে ভিড়তে পারবে তিনটি কনটেইনারবাহী জাহাজ। টার্মিনালটি সাগরের কাছাকাছি হওয়ায় বন্দরের বর্তমান জেটির  চেয়ে কম সময়ে জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে। বার্থিং করা যাবে সাড়ে ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ।

সর্বশেষ খবর