সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

লাশ কাটা ঘর

মির্জা মেহেদী তমাল

লাশ কাটা ঘর

২০১৫ সালের ১৯ জুন গাজীপুরের শ্রীপুরে সুমাইয়া আক্তার ফারহানা নামের এক গৃহকর্মীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সুরতহালে শরীরে বিভিন্ন আঘাতের কথা উল্লেখ ছিল। তবে ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে মতামত দেওয়া হয়, সুমাইয়া আত্মহত্যা করেছিলেন। থানা-পুলিশও সে অনুযায়ী ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে আদালতে প্রতিবেদন দেয়। ঘটনার এক বছর পর তদন্তে ভিন্ন তথ্য বেরিয়ে আসে। দাম্পত্য কলহের জেরে তার স্বামী শরিফুল তাকে গলা টিপে শ্বাসরোধে হত্যা করে বলে পুলিশের তদন্তে জানা যায়। ২০১৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে শ্বশুরবাড়িতে  তিন সন্তানের জননী নিলুফা আখতার বাখারার (২৫) ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। নিলুফার ময়নাতদন্ত এবং ভিসেরা ও হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্যার সলিমুল্লাহ  মেডিকেল কলেজের এক চিকিৎসক মতামত দেন, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। পুলিশ ও সিআইডি তাদের তদন্তে আত্মহত্যার কথা উল্লেখ করে। পরে পিবিআইর তদন্তে আসে ধর্ষণ করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে নিলুফার দেবর তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে। পুরান ঢাকার চকবাজারের একটি বাসা থেকে ২০১০ সালের ২৩ জুন আনিসুর রহমান নামের এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঢামেক মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে চিকিৎসক মতামত দেন আনিস আত্মহত্যা করেছেন। থানা-পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তদন্ত শেষে একই মতামত দেয়। কিন্তু মামলার বাদী আনিসের ভাই জাহাঙ্গীর মিয়া তৃতীয়বারের মতো নারাজি দিলে আদালত পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেয়। পাঁচ বছর পর তদন্তে বেরিয়ে আসে প্রেমের সম্পর্কের জেরে আনিসুর রহমান খুন হয়েছিলেন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত দুই আসামি গ্রেফতারের পর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেয়। এমন বহু খুনের ঘটনা লাশ কাটা ঘরে হয়ে যাচ্ছে আত্মহত্যা।  কোনো কোনো ঘটনা পরবর্তী তদন্তে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে এলেও অধিকাংশ থেকে যায় আড়ালে। স্বজনরা জানতেও পারেন না, তাদের প্রিয়জনের মৃত্যুর নেপথ্যের প্রকৃত কারণ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোনো কোনো লাশের সুরতহাল প্রতিবেদনে স্পষ্ট আঘাতের কথা বলা হয়। কোথাও কোথাও ঘটনার পারিপার্শ্বিকতায় খুনের ইঙ্গিতও তুলে ধরা হয়। এসবের কোনো কিছুকে আমলে না নিয়ে শুধু ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের ওপরই নির্ভর করেন তদন্ত কর্মকর্তারা। আর ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন তারা। জানিয়ে দেন আত্মহত্যাই মৃত্যুর কারণ। অথচ পরে জানা যায়, লাশের ময়নাতদন্তই ছিল ভুল। পুনরায় তদন্তে ওই আত্মহত্যায় বেরিয়ে আসে হত্যার রহস্য। গত বছর জুলাই থেকে চলতি বছর জুলাই পর্যন্ত এমন অন্তত ৩০টি ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশের তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। তবে সংস্থাটি খুনের এ রকম ১৩টি ঘটনার কথা উল্লেখ করে ১৯ মার্চ একটি গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করে। একই সঙ্গে নির্ভুল ময়নাতদন্তের জন্য ১১টি সুপারিশ দিয়েছে। পিবিআইর প্রধান পুলিশের ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার জানান, লাশের ময়নাতদন্তে প্রযুক্তিগত কিছু ভুলত্রুটি রয়েছে। এজন্য মৃত্যুর কারণ সঠিকভাবে বের হয় না। এগুলোর মান উন্নয়নের জন্য তারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশও দিয়েছেন। সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের আশ্বাসও দিয়েছে মন্ত্রণালয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর