সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

কাকের বাড়ি

নীলফামারী প্রতিনিধি

কাকের বাড়ি

বাঁশঝাড়ে কাক, গাছে কাক, মাটিতে কাক। সর্বত্র কাকের অবাধ বিচরণ। হাজার হাজার কাক। গাছ, বাঁশঝাড় আর মাটিতে। যেদিকে চোখ যায় কাক আর কাক। তাই এলাকার লোকজন এলাকাটিকে কাকের বাড়ি বলে চেনে। ভোরে ও সন্ধ্যার আগে এ কাকের বাড়ি দেখতে লোকজন আসেন শহর ও শহরের বাইরে থেকে। নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ি ইউনিয়নের কাঙ্গালপাড়ার গাছ ও বাঁশঝাড় যেন পুরোটাই কাকের বাড়ি। অনেকটা ছোটবেলার বইয়ে পড়া গল্পের মতো। সেখানে হবু চন্দ্র তার গবু চন্দ্র মন্ত্রীকে ডেকে বললেন, দিল্লি শহরে মোট কত কাক আছে? ৯ হাজার ৯৯৯টি। এর মধ্যে একটি কাক বেশি হলে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন আর কম হলে ধরে নিতে হবে বেড়াতে গেছেন। ওই এলাকায় কাক দেখে এমনটি মন্তব্য করেন রাজনীতিবিদ ও সমাজসেবী আবদুল খালেক।। তিনি বলেন, পাকিস্তান আমল থেকে জায়গাটি কাকের নিরাপদ বাস স্থান হিসেবে বিরাজ করছে। খুব ভোরে এসব কাক খাবারের সন্ধানে বেড়িয়ে যায়, আর আসে সন্ধ্যার আগে ঝাঁকে ঝাঁকে।

দেখা যায়, এলাকাটি কাকের নিরাপদ ও অভয়াশ্রম হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। সৈয়দপুর থানা পুলিশের সহযোগিতায় সামাজিক সংগঠন সেতুবন্ধন সেখানে সভা-সমাবেশ করে মানুষকে সচেতন করে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছে। এলাকার খবির আহম্মেদ বলেন, কেউ ইচ্ছে করে কাকের বাসায় ঢিল মারে না। তবে কাকের কারণে ফসলের কিছুটা হলেও ক্ষতি হচ্ছে।  সেতুবন্ধন সভাপতি আলমগীর হোসেন জানান, ২০১৩ সাল থেকে পাখি ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেতুবন্ধন। সদস্যরা এলাকাগুলো চিহ্নিত করে পাখির অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করেছেন। এছাড়া সার্বক্ষণিক নজর রাখছেন তারা। এরই মধ্যে আহত পাখিদের সুস্থ করে আকাশে উড়িয়েছেন। ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ছাইদুর সরকার জানান, মানুষের সঙ্গে কাকের সখ্যতা গড়ে উঠেছে। কাক ফসলের ক্ষতি করলেও কোনো সময় তাড়ান না। ফলে এখানকার উঁচু গাছের মগডালে, বাঁশ বাগানে ও মাটিতে শুয়ে রাত যাপন করে কাকগুলো। কাকগুলো দলবেঁধে বা একা এসে গাছ ও বাঁশঝাড়ে পড়ার কারণে কোনো গাছেই মাথা নেই। সন্ধ্যার আগে যখন ফিরে আসে তখন এক অপরুপ দৃশ্যে মন ভরে যায়। কাকের কা কা শব্দে ভরে ওঠে এলাকা। কালো কুচকুচে এসব কাক ঐক্যবদ্ধভাবে থাকতে পছন্দ করে বলে এই জায়গাটিতে নিরাপদ বাসস্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে। সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম গোলাম কিবরিয়া বলেন, কাঙ্গালপাড়ায় কাক, বাঙালিপুরের ভগতপাড়ায় বাদুর ও বোতলাগাড়িতে শামুকখোল অভয়াশ্রম গড়ে তোলা হয়েছে। শহরের খুব কাছে হওয়ায় লোকজনের আনাগোনাও বেড়েছে কাক বাড়িতে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর