মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

আনসার চায় মাদক তল্লাশি মামলা তদন্তের দায়িত্ব

আনিস রহমান

মাদক আইনের ২৩ ধারা সংশোধন করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও পুলিশের মতো আনসার বাহিনীও চায় মাদক মামলা তদন্ত করতে। গত ১৭ নভেম্বর দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে ৪২টি সংস্থার প্রতিনিধির ওই বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে বিস্তর আলোচনা হলেও এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে বৈঠক শেষে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, বৈঠকে বিষয়টি আলোচনায় থাকলেও অনেকেই এর বিরোধিতা করেছেন। তারা যুক্তি দিয়ে বলেছেন, চাইলেই কোনো বাহিনীকে এমন বিষয়ে তদন্ত করার দায়িত্ব দেওয়া ঠিক হবে না। মাদক আইনের ২৩ ধারায় পরোয়ানা ছাড়া তল্লাশির ক্ষমতায় উল্লেখ রয়েছে- মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক অথবা তার কাছ থেকে এতদুদ্দেশ্যে সাধারণ অথবা বিশেষভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তা অথবা পুলিশের উপপরিদর্শক অথবা কাস্টমসের পরিদর্শক অথবা বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের ল্যান্স নায়েক, কোস্টগার্ডের পেটি অফিসার মাদক তল্লশি করতে পারবেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলেন, র‌্যাব যেহেতু পুলিশের অংশ তাই তারা কোনো কোনো মামলা আদালত ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে তদন্ত করতে পারলেও আনসার কাঠামোয় এ ধরনের কোনো ক্ষমতা দেওয়া হয়নি। তারা বলেন, আনসার হলো একটি সহযোগী বাহিনী মাত্র। এদিকে ১৪ নভেম্বর আনসার ও গ্রামপ্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দফতর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮-এর সংশোধনী কার্যক্রমে মতামতসংবলিত এক পত্রে বলা হয়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ব্যাটালিয়ন আনসার ফোর্সকে প্রায়োগিক ক্ষমতার আওতায় নিয়ে আসার বিষয়ে আইনগত কোনো বাধা নেই। জননিরাপত্তামূলক দায়িত্ব পালনের ম্যান্ডেটের আওতায় সংগত কারণেই জাতির বৃহত্তর স্বার্থে মাদকদ্রব্য আইন, ২০১৮-এর ধারা-২৩-এ আনসার ব্যাটালিয়নের অধস্তন বা তদূর্ধ্ব পর্যায়ের কর্মকর্তার অংশগ্রহণের বিষয়টি সম্পৃক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় আইন সংশোধনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। আনসার বাহিনী ও ব্যাটালিয়ন আনসার ফোর্সগুলো রাষ্ট্রের অপরাপর জননিরাপত্তা বাহিনী বিধায় এ অধিদফতর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অধীনে আনা হয়েছে এবং আইনগতভাবে অন্যান্য বাহিনীর মতো সরকারকে সরাসরি সহায়তা করতে পারে। একটি আনসার ব্যাটালিয়নে পিস্তল, চাইনিজ রাইফেল, সাবমেশিনগান, লাইট মেশিনগান, হেভি মেশিনগান ও মর্টার থাকে। মিলিটারি ফরমেশনের আদলে গঠিত আনসার ব্যাটালিয়নে বিশেষ আদালত ও সংক্ষিপ্ত আদালত গঠনের বিধান আছে। ফলে আনসার ব্যাটালিয়নগুলো প্যারা মিলিটারি ফোর্স। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ব্যাটালিয়ন ফরমেশনে এ ধরনের প্যারা মিলিটারি ফোর্স থাকে এবং তারা জননিরাপত্তায় সক্রিয় দায়িত্ব পালন করে। সূত্র জানান, এর আগে পুলিশ ও র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) মতোই যে কানো মামলার তদন্ত করার ক্ষমতা চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠায় আনসার বাহিনী। তদন্তের পাশাপাশি তারা জঙ্গি, নাশকতাকারীসহ জননিরাপত্তার জন্য হুমকি যে কোনো অপরাধীকে তৎক্ষণাৎ গ্রেফতার করার ক্ষমতা চায়। আনসার সদর দফতর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো একটি প্রস্তাবে এ কথা বলা হয়েছে। মন্ত্রণালয় প্রস্তাবটি যাচাই-বাছাই করছে বলে এক সূত্র জানিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে আনসারের একাধিক পদ পরিবর্তন করা হবে। পুলিশের মতোই প্রতিটি রেঞ্জে আনসার ব্যাটালিয়নের সদর দফতর থাকবে। জনগণকে নিরাপত্তা দিতে আনসারের একাধিক ব্যাটালিয়ন তৈরি করা হবে। প্রত্যেক আনসার সদস্যের কাছে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র থাকবে। তখনো আনসারের এ প্রস্তাব নিয়ে পুলিশ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, থানায় মামলা হলে পুলিশ তদন্ত করে। যে কোনো অভিযানের সময় আনসার সদস্যরা পুলিশের সঙ্গেই থাকেন। পুলিশ ও র‌্যাব যে ধরনের কাজ করে হঠাৎ তারা কেন তা করতে চাচ্ছে, তা বোঝা যাচ্ছে না। আনসারের প্রস্তাব মন্ত্রণালয় পাস করলে পুলিশের সঙ্গে তাদের বিরোধ সৃষ্টি হবে। তবে আনসারের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেছেন, দেশের স্বার্থেই আনসার কাজ করবে। আনসার জনগণকে নিরাপত্তা দিলে পুলিশের সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

সর্বশেষ খবর