সোমবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

পেট্রলপাম্পে ধর্মঘটে তিন বিভাগে চরম দুর্ভোগ

তেল দেওয়া হয়নি ঠাকুরগাঁও-১ আসনের এমপিকেও

নিজস্ব প্রতিবেদক

পেট্রলপাম্পে ধর্মঘটে তিন বিভাগে চরম দুর্ভোগ

গাড়িশূন্য বগুড়ায় একটি পেট্রলপাম্প -বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঠাকুরগাঁওয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন এমপিকে বহনকারী গাড়িতে জ¦ালানি (ডিজেল) না দিয়েই ফিরিয়ে দিয়েছেন পাম্প শ্রমিকরা। গতকাল সকাল ১০টার দিকে শহরের চৌধুরী ফিলিং স্টেশনে এ ঘটনা ঘটে। সারা দেশে গতকাল ভোর ৬টা থেকে ১৫ দফা দাবি আদায়ে পেট্রল ও ট্যাংক-লরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের শুরু হওয়া ধর্মঘটের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা এই তিন বিভাগে এই ধর্মঘট চলছে।

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি জানান, সকালে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঠাকুরগাঁও-১ আসনের এমপি রমেশ চন্দ্র সেন ঠাকুরগাঁও সফর শেষে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। তাকে বহনকারী দুটি গাড়ি শহরের চৌধুরী ফিলিং স্টেশনে জ্বালানি নেওয়ার জন্য গেলে সেখানে কর্মরত শ্রমিকরা জ্বালানি সরবরাহ না করেই গাড়ি দুটি ফিরিয়ে দেয়। এ সময় গাড়িতেই বসা ছিলেন এমপি রমেশ চন্দ্র্র সেন। পাম্পে কর্মরত শ্রমিক অটল রায় বলেন, ‘আমাদের মালিকের নির্দেশে আমরা সব ধরনের জ¦ালানি সরবরাহ বন্ধ রেখেছি। কত দিন বন্ধ থাকবে তা জানি না।’

বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিনিধিরা জানান, রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগে প্রায় দুই হাজার পেট্রলপাম্প রয়েছে। ধর্মঘটের আওতায় এই সব পাম্প বন্ধের পাশাপাশি ডিপো থেকে তেল উত্তোলন ও পরিবহন বন্ধ রয়েছে। প্রতিনিধিরা জানান, গতকাল সকাল থেকে বগুড়া শহর ও মহাসড়কের পাশের বিভিন্ন পেট্রলপাম্প কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। কোনো পাম্পই জ্বালানি বিক্রি করেনি। তবে শহরের সিএনজি পাম্পগুলো চালু ছিল। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পেট্রলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এম এ মোমিন দুলাল বলেন, ‘আমাদের ১৫ দফা দাবি ন্যায়সংগত। এসব দাবি নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আলোচনা করলেও আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই মেলেনি। তাই ধর্মঘট শুরু করা হয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে।’ চাঁপাইনবাবগঞ্জে গতকাল ভোর সাড়ে ৬টা পর্যন্ত পেট্রলপাম্পগুলোতে জ্বালানি তেল দেওয়া হলেও এরপর থেকে শুরু হয় ধর্মঘট। এরপর একে একে বন্ধ করে দেওয়া হয় জেলার সবগুলো পেট্রলপাম্প। ভোর সাড়ে ৬টার পর বিভিন্ন পেট্রলপাম্পে জ্বালানি নিতে এসে ঘুরে যেতে দেখা যায় অনেককেই। এই ধর্মঘটে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন যাত্রীবাহী ছোট যানবাহনের চালকরা। তারা বলছেন, জ্বালানি না পেলে তাদের আয় বন্ধ হয়ে যাবে।

ধর্মঘটে গতকাল সকাল থেকে বাগেরহাট শহর ও মহাসড়কের পাশের বিভিন্ন পেট্রলপাম্প কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে দেখা যায়। অনির্দিষ্টকালের এই ধর্মঘটে সকাল থেকে সব পাম্পে তেল বিক্রি বন্ধ রাখা হয়। হঠাৎ করে ধর্মঘটের কারণে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন। তবে অনেক খুচরা তেলদোকানি গোপনে বেশি দামে তেল বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আবার অনেকে পাশর্^বর্তী জেলা পিরোজপুর ও গোপালগঞ্জ থেকে ছোট-বড় যানবাহনের জন্য তেল সংগ্রহ করেন।

১৫ দফা দাবিতে খুলনায় অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু করেছে পেট্রলপাম্প ও ট্যাংক-লরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। এতে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা তিনটি তেল ডিপোর তেল উত্তোলন ও বিপণন বন্ধ রয়েছে। খুলনা বিভাগীয় ট্যাংক-লরি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন বলেন, জ্বালানি তেল বিক্রির কমিশন কমপক্ষে সাড়ে ৭ শতাংশ প্রদান, ট্যাংক-লরি শ্রমিকদের পাঁচ লাখ টাকা দুর্ঘটনা বীমা, বিভিন্ন দফতরের লাইসেন্স গ্রহণে শিথিলতা, বিভিন্ন জেলায় ট্যাংক-লরি থেকে জোরপূর্বক পৌরসভার চাঁদা গ্রহণ বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে ধর্মঘট শুরু হয়েছে। এতে খুলনার তেল ডিপো থেকে তেল উত্তোলন ও বিপণন বন্ধ রয়েছে।

অনির্দিষ্টকালের জন্য শুরু হওয়া ধর্মঘটে বন্ধ ছিল নওগাঁর সব ফিলিং স্টেশন। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন গ্রাহকরা। জেলা শহরের বিভিন্ন ফিলিং স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, স্টেশনগুলোর প্রবেশপথ বন্ধ করে রাখা হয়েছে। গ্রাহকরা জানান, বিষয়টি তাদের অজানা। যদি আগে থেকে বিষয়টি জানতেন তাহলে আগেই তারা প্রয়োজনমতো যানবাহনে তেল তুলে রাখতেন। যশোরে গতকাল ভোর থেকেই পাম্পগুলোতে তেল আনতে যাওয়া গাড়ির চালকদের ফিরিয়ে দেন পেট্রলপাম্প মালিক ও শ্রমিকরা। তেল না পাওয়ায় শিগগিরই দূরপাল্লারসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে বলে চালকরা আশঙ্কা করছেন। ধর্মঘটের কারণে যশোরের ৭৪টি পেট্রলপাম্পে পেট্রল, অকটেন, ডিজেলসহ সব ধরনের জ্বালানি তেল বিক্রি বন্ধ রয়েছে। পেট্রলপাম্প ও ট্যাংক-লরি মালিক-শ্রমিকদের ডাকা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ফলে অচল হয়ে পড়েছে বাঘাবাড়ী তেল ডিপো। গতকাল ভোর থেকে উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় বাঘাবাড়ী তেল ডিপো থেকে তেল উত্তোলন বন্ধ রয়েছে। ডিপো থেকে ছেড়ে যায়নি কোনো ট্যাংক-লরি। এতে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলায় সম্পূর্ণরূপে তেল সরবরাহ এবং বিপণন বন্ধ রয়েছে। একই সঙ্গে বন্ধ রয়েছে জেলার সব পেট্রলপাম্প। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে হাজার হাজার যানবাহন ও গ্রাহক। তবে আগের দিন রাতে যানবাহন চালকরা তেল সংগ্রহ করে রাখায় তেমন প্রভাব না পড়লেও ধর্মঘট অব্যাহত থাকলে আজ থেকে চরম প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন চালকরা। ইতিমধ্যে তেলের অভাবে অনেক যানবাহন, বিশেষ করে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া ১৫ দফা দাবিতে নাটোরের ২৬টি পেট্রলপা¤ন্ডেপ শুরু হয়েছে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট। ভোর থেকে পা¤পগুলোতে তেল বিক্রি বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা। এর ফলে ফিলিংস্টেশনগুলোতে গিয়ে ফিরে যেতে হয় অনেক যানবাহনকে।

 একইভাবে সকাল থেকে কোনো ধরনের তেল সরবরাহ না করায় দুর্ভোগে পড়েছেন মাগুরার সাধারণ মানুষ। মাগুরা ভায়না ভিটাশাইর এলাকার ফাতেমা ফিলিংস্টেশনে সরকারি গাড়িতে তেল দিলেও সাধারণ যাত্রীদের তেল না দেওয়ার অভিযোগ করেছে কিছু মোটরসাইকেল চালক। ধর্মঘটে গতকাল সকাল থেকে রংপুর মহানগরীর পেট্রলপাম্পগুলো বন্ধ থাকতে দেখা যায়। কিছু পাম্প খোলা থাকলেও জ্বালানি তেল বিক্রিসেবা বন্ধ থাকে। ধর্মঘটের কারণে পাম্পগুলোতে জ্বালানি তেল বিপণন বন্ধ থাকায় মোটরসাইকেল চালকসহ বিভিন্ন পরিবহনের শ্রমিকরা ভোগান্তিতে পড়েছেন। সুরমা ফিলিংস্টেশনের মালিক মো. আতিকুর রহমান জানান, প্রতি মাসে পেট্রল, ডিজেল, অকটেন ও কেরোসিন মিলে মোট জ্বালানি তেলের চাহিদা চার লাখ পাঁচ হাজার লিটার। অথচ তিনি শতকরা ২৫ ভাগ জ্বালানি তেলও পাচ্ছেন না। এতে তিনি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। এমন বিভিন্ন সমস্যা ও সংকটের কারণে তারা ১৫ দফা দাবি সরকারের কাছে তুলে ধরেছেন। উল্লেখ্য, ২৬ নভেম্বর পেট্রলপাম্প ও ট্যাংক-লরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ বগুড়ায় সংবাদ সম্মেলনে ধর্মঘটের এ ঘোষণা দেয়। তারা ধর্মঘট শুরুর আগে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ১৫ দফা দাবি মেনে নেওয়ার জন্য সরকারকে আলটিমেটাম দেয়। কিন্তু এর পরও সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে তারা ধর্মঘটে যায়।

সর্বশেষ খবর