সোমবার, ২ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

সিমেন্টশিল্পে ৫% অগ্রিম কর বাতিল চান মালিকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

সিমেন্ট শিল্পে ৫ শতাংশ অগ্রিম কর (এআইটি) বাতিলের দাবি জানিয়েছে এই খাতের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমএ)। সংগঠনটি বলেছে, প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে গড়ে ওঠা সিমেন্ট শিল্প এখন পর্যায়ক্রমে রুগ্্ণ শিল্পে পরিণত হচ্ছে। প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন মালিকরা। গত অর্থবছর এ খাত থেকে ৫ হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব এলেও চলতি বাজেটে ৫ শতাংশ অগ্রিম কর বসানো হয়েছে, যা অন্য কোনো খাতে নেই। দেশের ধারাবাহিক উন্নয়ন ধরে রাখতে অবকাঠামো নির্মাণের প্রধান এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে আয়কর আইনের মূল ধারণার পরিপন্থী ৫ শতাংশ অগ্রিম কর চূড়ান্ত কর দায় থেকে বাতিল জরুরি।

গতকাল রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমএ) আয়োজিত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন সংগঠনটির সভাপতি মোহাম্মদ আলমগীর কবির। এতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন বিসিএমএর প্রথম সহ-সভাপতি মো. শহিদুল্লাহ।

বিসিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলমগীর কবির বলেন, ‘সিমেন্টশিল্প বাঁচাতে আমরা অগ্রিম কর সম্পূর্ণভাবে মওকুফ চাই। তীব্র প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকাই অনেক কঠিন হচ্ছে। একটা অসম তীব্র প্রতিযোগিতার পরিবেশ-পরিস্থিতি তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, এ শিল্পে প্রতিযোগিতা বেড়েছে। কিন্তু বিক্রি কমেছে। কিছু সিমেন্ট ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে রপ্তানি করে ৮ থেকে ১০টি কোম্পানি। আবার সাদা সিমেন্টও আমদানি হয়। মতবিনিময় সভায় বিসিএমএ জানিয়েছে, গত এক দশকে দেশীয় শিল্পে সরকারের বাস্তবধর্মী পৃষ্ঠপোষকতা ও সময়োচিত সিদ্ধান্তের কারণে সামগ্রিক শিল্প খাতে বিস্ময়কর অগ্রগতি সাধিত হয়েছে, যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ সিমেন্ট উৎপাদন খাত। বেশ কিছু সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অত্যাধুনিক পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি স্থাপনের মাধ্যমে উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধির কাজ এগিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছে। এ খাতের সামগ্রিক উৎপাদন ক্ষমতা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৬ দশমিক ২ কোটি টন। কিন্তু চাহিদা প্রায় ৩ দশমিক ৪ কোটি টন। ভৌত অবকাঠামো নির্মাণে বর্তমান সরকার ব্যয়বহুল, দীর্ঘমেয়াদি ও যুগান্তকারী বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে, যা তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে। বেসরকারি উদ্যোগে আবাসন খাতে প্রতি বছর বহু প্রকল্প গ্রহণ করা হয়ে থাকে। সার্বিকভাবে এ খাতে গত কয়েক বছরে গড়ে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এই যে, সম্পূর্ণ সিমেন্টের চাহিদা দেশীয়ভাবেই পূরণ করা হচ্ছে। কিন্তু ২০১৯-২০ অর্থবছরে জাতীয় বাজেটে অর্থ আইনের কতিপয় সংশোধনীর মাধ্যমে সিমেন্ট উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানি পর্যায়ে আদায়কৃত ৫ শতাংশ অগ্রিম কর হিসাবে ন্যূনতম কর দায় নিরূপণ করা হয়েছে। আগে অগ্রিম কর ৫ শতাংশ থাকলেও তা ন্যূনতম কর দায় হিসেবে ছিল না। বিসিএমএ বলেছে, দেশের ক্রমবর্ধমান অবকাঠামো উন্নয়নে সিমেন্ট খাতকে যেখানে অগ্রাধিকার দেওয়া প্রয়োজন, সেখানে অযৌক্তিকভাবে অগ্রিম আয়কর ৫ শতাংশ ‘ন্যূনতম কর’ হিসেবে অতিরিক্ত করের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে এই বিপুল সম্ভাবনাময় অবকাঠামো উন্নয়নের প্রধান শিল্প খাতকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত অগ্রিম কর সমন্বয় করার আইন না থাকায় সিমেন্টশিল্প আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। ফলে সিমেন্টশিল্প ভবিষ্যতে রুগ্্ণ শিল্পে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সর্বশেষ খবর