গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কোচাশহর ইউনিয়নে জগন্নাথপুর গ্রামে ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে পাওনা সুদের টাকা আদায় করতে না পেরে দাদন ব্যবসায়ীচক্র পানিতে ডুবিয়ে কবরের স্বাদ পাইয়ে দিতে অমানবিক নির্যাতন করেছে বুদু সরকার নামের এক দৃষ্টি প্রতিবন্ধীকে। ঘটনায় গোবিন্দগঞ্জ থানায় ২৫ নভেম্বর অভিযোগ দিলেও অনেক তদবিরের পর পুলিশ এটিকে চাঁদাবাজির মামলা হিসেবে রেকর্ড করেছে। তবে ঘটনার ১১ দিনেও কোনো আসামিকে গ্রেফতার করতে পারেনি বলে নির্যাতিত যুবক অভিযোগ করেছেন। জগন্নাথপুর গ্রামের মধ্যপাড়ায় নিজ বাড়িতে শয্যাশায়ী আহত বুদু সরকার গতকাল এই প্রতিবেদককে বলেন, তার ছোট ভাই তুষার সরকার দুই বছর আগে গ্রামের আবদুল হান্নানের ছেলে দাদন ব্যবসায়ী নূর সালাফির কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নেয়। কিন্তু গত দুই বছরে সালাফি সুদ বাবদই ৭৫ হাজার টাকা আদায় করে নেয়। তবে টাকা পরিশোধ হয়নি বলে তুষারকে সালাফি চাপ দিতে থাকে। এদিকে গত ছয় মাস আগে তুষার চাকরির জন্য ঢাকায় চলে যান। তুষারকে না পেয়ে সালাফি কয়েকবার বুদু সরকারের বাড়িতে গিয়ে তাকেই টাকা শোধ করতে হবে বলে হুমকি দিয়ে আসে। একপর্যায়ে গত ২১ নভেম্বর চাঁদপাড়া বাজারে খড় কিনতে গেলে সালাফি তার তিন সঙ্গী আবু জাফর সরকার, তুহিন মিয়া ও শাহিন মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে বুদু সরকারকে তুলে নিয়ে যায়। প্রথমে চাঁদপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে নিয়ে টাকা চাইলে বুদু সরকার তাদের বলে তিনি পেশায় অনিয়মিত নির্মাণ শ্রমিক হওয়ার কারণে তার আর্থিক সামর্থ্য নেই। এতে সালাফিরা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে বেধড়ক মারপিট করে। পরে সেখান থেকে রশি দিয়ে হাত বেঁধে মোটরসাইকেলে করে জগন্নাথপুরের রামচন্দ্র দীঘিতে নেয় তারা। সেখানে উলঙ্গ করে বুদু সরকারের ভাষায় ‘তোকে কবরের স্বাদ দিব’ বলে সালাফিরা তাকে পুকুরের পানিতে চুবিয়ে রাখে। দীর্ঘ সময় পরে পানি থেকে উঠিয়ে বাঁ পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলের নখ প্লাস দিয়ে তুলে ফেলে। একপর্যায়ে রড দিয়ে কোমর ও পায়ে আঘাত করে। রাত গভীর হলে তাকে মোটরসাইকেলে তুলে বুদুর বাড়ির সামনের রাস্তায় ফেলে রেখে যায় নির্যাতনকারীরা। তার গোঙানির শব্দে পরিবারের সদস্যরা এসে তাকে উদ্ধার করে। পরে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বুদুকে ভর্তি করা হয়। কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. মইদুল ইসলাম বলেন, বুদু সরকারের বুকের বা পাশ ও বাঁ পায়ে আঘাতের কারণে কিছু অংশ ফোলা ছিল কিন্তু নখ তুলে ফেলা বা অন্য কোনো ইনজুরি দৃশ্যমান ছিল না। বুদু সরকারের মা কোহিনুর বেওয়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, তার তিন ছেলের মধ্যে প্রতিবন্ধী বুদুর এক চোখ নষ্ট। সে নিঃসন্তান তাই তার কাছেই তিনি থাকেন। গত ১২ দিন থেকে বুদু শয্যাশায়ী থাকায় তাদের খাওয়া-পরা প্রায় বন্ধ। রাজমিস্ত্রির জোগানদারির কাজ করে বুদু যে সামান্য টাকা পায় তাই দিয়েই তাদের খাওয়া-পরা চলে। গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি এ কে এম মেহেদী হাসান বলেন, এই ঘটনায় একটি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের হয়েছে সেখানে অবৈধভাবে আটকে রাখা এবং নির্যাতনের ধারাও আছে। ঘটনাটির তদন্ত চলছে। আসামিরা পালিয়ে যাওয়ায় তাদের এখনো গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে পুলিশি তৎপরতা অব্যাহত আছে। এদিকে জগন্নাথপুর উত্তরপাড়ায় নূর সালাফির বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি এবং পরিবারের কেউ এ বিষয়ে কথা বলতেও রাজি হননি। জগন্নাথপুর গ্রামের প্রবীণ ব্যবসায়ী ফয়জুল ইসলাম বলেন, সালাফি ও তার সঙ্গী-সাথীরা এলাকায় দাপটের সঙ্গে চলাফেরা করে। সুদে টাকা খাটানো ও নানা বিষয়ে মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ আছে তাদের বিরুদ্ধে। তবে এই ঘটনায় মামলা হওয়ার পর তাদের আর এলাকায় দেখা যাচ্ছে না বলে তিনি জানান।