সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস আজ

দুদকে এখন অনেক অভিযোগ

আরাফাত মুন্না

রাষ্ট্র ও সমাজের নানা স্তরে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন গোষ্ঠীর দুর্নীতির শিকড় ছড়িয়ে পড়েছে। এসব দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে সোচ্চার রয়েছেন সচেতন নাগরিকরাও। কখনো নামে আবার কখনো নিজের পরিচয় গোপন রেখেই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতাসহ দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের নামে অভিযোগ জমা দিচ্ছেন রাষ্ট্রের একমাত্র দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। দুদক সূত্র জানায়, বছরে ১৬ থেকে ১৮ হাজার অভিযোগ জমা পড়ে। গত দুই বছরে দুদক হটলাইনে ফোন এসেছে ৩১ লাখ। অনেক ফোনেই ব্যবস্থা নিয়েছে দুদক। তবে সব অভিযোগই দুদকের তফসিলভুক্ত না হওয়ায় ব্যবস্থা নিতে পারে না সংস্থাটি। কখনো কখনো অভিযোগগুলো সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠিয়ে দেওয়া হয় দুদক থেকেই। আগের চেয়ে দুদকে এখন অনেক বেশি অভিযোগ জমা হয় বলেই দুদক সূত্রের তথ্য। এদিকে আজ সারা দেশে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস। দিবসটিকে কেন্দ্র করে দুর্নীতি দমন কমিশন ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)সহ বিভিন্ন সংগঠন। দুদকের তথ্য অনুযায়ী, গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কমিশনে অভিযোগ জমা পড়েছে ১৫ হাজার ৪৯৭টি। এর মধ্যে ১ হাজার ১৯৯টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গৃহীত হয়। বাকি অভিযোগ নথিভুক্ত কিংবা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বা প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। গত বছর কমিশনে ১৬ হাজার ৬০৬টি অভিযোগ আসে। এর মধ্যে ১ হাজার ২৬৫টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করা হয়। বাকি অভিযোগগুলো একইভাবে নথিভুক্ত করা হয়েছে কিংবা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় কিংবা প্রতিষ্ঠানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ২০১৭ সালে কমিশনে অভিযোগ আসে ১৭ হাজার ৯৫৩টি। এর মধ্যে ৯৩৭টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করে কমিশন। একইভাবে ২০১৬ সালে কমিশনে মোট অভিযোগ আসে ১২ হাজার ৯৯০টি। তার মধ্যে ১ হাজার ৭টি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গ্রহণ করে কমিশন। যাদের অভিযোগের বিষয়ে দুদক ব্যবস্থা গ্রহণ করে না, সেসব ভুক্তভোগী বা অভিযোগকারীর মধ্যে অনেক হতাশাও রয়েছে। দুদকের প্রতি তাদের জন্মে নেতিবাচক ধারণা। জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা দেখছি দুদক সরকারের এমপি, প্রভাবশালী নেতাসহ অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনছে। এটা ভালো দিক। এ জন্যই দুদকে অভিযোগও বাড়ছে। তিনি বলেন, দুদককে সাধারণ মানুষের আস্থা ধরে রেখে কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিবিরোধী জিরো টলারেন্স নীতিও সংস্থাটির জন্য বিশেষ সুযোগ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন তারা যে কোনো প্রকার প্রভাবমুক্ত হয়ে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাবে। অন্যদিকে কিছুটা চ্যালেঞ্জও রয়েছে, কারণ এই সুযোগের যথাযথ প্রয়োগ করা না হলে দুদকের আস্থার সংকট ঘনীভূত হবে।

হটলাইনে ৩১ লাখ ফোন : অন্যদিকে নাগরিকদের কাছ থেকে সরাসরি অভিযোগ শুনতে হটলাইন চালুর পর দুই বছরে (গত আগস্ট পর্যন্ত) ৩১ লাখ ফোন কল পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। তবে অধিকাংশ কলই ছিল দুর্নীতিবিরোধী এ সংস্থার আওতার বাইরে। কমিশনের অভিযোগ কেন্দ্রের কর্মকর্তারা তফসিলভুক্ত অপরাধের অভিযোগগুলো লিপিবদ্ধ করেছেন। এর মধ্যে দুর্নীতির স্পষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বিভিন্ন সরকারি দফতরে ৬২৬ বার অভিযান চালানো হয়েছে। ২০১৭ সালের ২৭ জুলাই ১০৬ নম্বরে ‘টোল ফ্রি’ এই হটলাইন চালু করে দুদক। সরকারি ছুটির দিন বাদে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত ওই নম্বরে ফোন করে অভিযোগ জানাতে পারেন নাগরিকরা। নাগরিকদের কাছ থেকে এই সাড়াকে আশাব্যঞ্জক হিসেবে বর্ণনা করে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে সচেতনতার মাত্রাও বেড়েছে। এটা দুদকের একটা অর্জন। মানুষের আস্থা রয়েছে বলেই তারা ফোন করে কথা বলছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর