মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

রোকেয়া পদক নিলেন পাঁচ নারী

নারী-পুরুষের সমন্বিত কাজে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

প্রতিদিন ডেস্ক

রোকেয়া পদক নিলেন পাঁচ নারী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পুরুষ-নারীর সম্মিলিত প্রয়াসে নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে দেশকে আরও এগিয়ে নিতে তাঁর সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গতকাল সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘বেগম রোকেয়া দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে তিনি রোকেয়া পদক-২০১৯ বিতরণ করেন। নারী পুনর্জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ১৩৯তম জন্ম ও ৮৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল সারা দেশে বেগম রোকেয়া দিবস পালিত হয়। খবর বাসস। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা। মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন নাহার স্বাগত বক্তৃতা ও অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। রোকেয়া পদক গ্রহণকারীদের পক্ষে বেগম সেলিনা খালেক অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নারী ও সামাজিক উন্নয়নে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিতে পাঁচজন নারীকে রোকেয়া পদক-২০১৯ প্রদান করেন। পদকপ্রাপ্তরা হলেন বেগম সেলিনা খালেক, অধ্যক্ষ শামসুন নাহার, ড. নূরুন নাহার ফয়জুন্নেছা (মরণোত্তর), মিস পাপড়ি বসু ও বেগম আখতার জাহান। বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কেবল আমাদের দেশে নয়, আমরা উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও দেখেছি যে, শিশু ও নারীদের ওপর নির্যাতন মানসিক রোগের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। তাই নারী-পুরুষ প্রত্যেককেই সচেতন থাকতে হবে, যাতে কোনো শিশু ও নারী নির্যাতিত না হয়।’ তিনি বলেন, ‘মূলত পুরুষরাই নারীদের ওপর নির্যাতন চালায়। তাই তাদের চিন্তা করা উচিত, তাদেরও মেয়েশিশু রয়েছে এবং তাদের সন্তান যদি অন্য কারও দ্বারা নির্যাতিত হয় তাহলে তারা কী করবে। সে কারণেই এ ব্যাপারে সচেতনতা খুব জরুরি।’ শিশু ও নারী নির্যাতন রোধে সরকারের বিভিন্ন আইন প্রণয়নের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের নির্যাতন বন্ধে আইন প্রণয়নই যথেষ্ট নয়, এজন্য সচেতনতা আবশ্যক। আমরা আইন করেছি। কিন্তু আইন করলেই সবকিছু হয়ে যায় না। এজন্য শিশু ও নারী নির্যাতন বন্ধে সচেতনতাও প্রয়োজন।

শেখ হাসিনা বলেন, শিশু ও নারী সমাজের কল্যাণে পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ আইন, যৌতুক প্রতিরোধ আইন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আইন এবং নারী উন্নয়ন নীতিমালা ও জাতীয় শিশু উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। তিনি বলেন, আইন প্রণয়নের ফলে সাধারণ মানুষ ও মেয়েদের মাঝে সচেতনতা গড়ে উঠছে। শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সবকিছুই করছে। তিনি বলেন, বেগম রোকেয়া চেয়েছিলেন একজন নারী যে কোনো রাষ্ট্রের প্রধান হবেন এবং তিনি পুরুষ ও পরিবার ও সমাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাবেন এবং সমান অধিকার ভোগ করবেন। আমরা অন্তত এটা বাস্তবায়ন করেছি এবং আমাদের নারীসমাজ এখন বিজয়িনীর বেশে অন্ধকার থেকে আলোর পথে এগিয়ে চলছে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আজ নারী উন্নয়নে বেগম রোকেয়ার সারথি হয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে- এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ অগ্রগতি আমাদের ধরে রাখতে হবে। শিক্ষায় নারীদের সাফল্যের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, মেয়েরা এখন পরীক্ষায় ছেলেদের তুলনায় ভালো করছে। কারণ, তারা (মেয়েরা) লেখাপড়ায় মনোযোগী। তিনি বলেন, মেয়েদের মাঝে সৃষ্ট আত্মবিশ্বাস এবং তাদের অভিভাবকরা তাদেরকে আরও লেখাপড়ায় উৎসাহ জোগাচ্ছে। এটা সমাজের বিবর্তন ও পরিবর্তনের জন্য হয়েছে। এটা দেশের জন্য একটা খুব ভালো দিক। শেখ হাসিনা বলেন, ক্রীড়াঙ্গনেও মেয়েরা কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখছে। এ প্রসঙ্গে তিনি নেপালে সাউথ এশিয়ান গেমসে ক্রিকেট ও ভারোত্তোলনে মেয়েদের স্বর্ণপদক জয়ের কথা উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। আমরা সবার সম্মিলিত প্রয়াসে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলব।

রংপুরে রোকেয়া দিবস পালিত : রংপুর প্রতিনিধি জানান, রোকেয়া দিবস উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী মেলা ও বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে রংপুর জেলা প্রশাসন। এর অংশ হিসেবে গতকাল সকালে রোকেয়ার জন্মস্থান মিঠাপুকুরের পায়রাবন্দে স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। পরে এক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য এইচ এন আশিকুর রহমান ও আরমা দত্ত, রংপুর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ছাফিয়া খানম প্রমুখ।

তিন দিনব্যাপী মেলায় প্রতিদিন সকাল ১০টায় স্বেচ্ছায় রক্তদান ও রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা কার্যক্রম থাকবে।

সর্বশেষ খবর