মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

উৎসব আনন্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

উৎসব আনন্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন

অপরাজেয় বাংলার সামনে কালো গাউন পরা গ্র্যাজুয়েটের দল। একসঙ্গে মাথার লাল ঝালরওয়ালা টুপিটি ছুড়ে মারলেন আকাশে, সঙ্গে চিৎকার, হৈ-হল্লোড়। সামনের ক্যামেরায় এক ক্লিকে জমা হলো আরেকটি ছবি।

ঠিক এভাবেই স্নাতক আর স্নাতকোত্তরের পাঠ চুকিয়ে সমাবর্তনের দিনটিকে উপভোগ করলেন দেশের শীর্ষ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটরা। উৎসবমুখর পরিবেশে গতকাল হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২তম সমাবর্তন। সমাবর্তন উপলক্ষে শিক্ষার্থীদের পদচারণায় পুরো ক্যাম্পাস সাজে মনোরম সাজে। কালো গাউন পরে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসজুড়ে আনন্দ-উল্লাস প্রকাশ করেন। দিনভর ছবি তোলা, বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা, হইচই ও কোলাহলে মেতে থাকে সবাই। দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে শুরু হয় সমাবর্তনের মূল আনুষ্ঠানিকতা। অবশ্য এর আগেই গ্র্যাজুয়েটরা মাঠে সমবেত হয়। দুপুর ঠিক ১২টায় কার্জন হল থেকে ঐতিহাসিক শোভাযাত্রা নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে আসেন সমাবর্তনের সভাপতি আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এর আগে একে একে আসন গ্রহণ করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, সমাবর্তন বক্তা জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের কসমিক রে রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক নোবেল বিজয়ী ড. তাকাকি কাজিতা, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ড. মুহাম্মদ সামাদ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীন, রেজিস্ট্রার এনামউজ্জামান ও বিভিন্ন অনুষদের ডিনবৃন্দ।

রাষ্ট্রপতির উদ্বোধন ঘোষণার পর ধর্মীয় গ্রন্থগুলো থেকে পাঠ, স্বাগত সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করা হয়। এরপর সমাবর্তন বক্তা জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের কসমিক রে রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ও নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. তাকাকি কাজিতাকে সম্মানসূচক Doctor of Science (Honoris Causa) ডিগ্রি প্রদান করা হয়। এ সময় মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনের প্রধান, বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট-সিন্ডিকেট সদস্য ও একাডেমিক পরিষদের সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ৭৯ জন কৃতী শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীকে ৯৮টি স্বর্ণপদক, ৫৭ জনকে পিএইচডি, ৬ জনকে ডিবিএ এবং ১৪ জনকে এম ফিল ডিগ্রি প্রদান করা হয়। সমাবর্তনে ২০ হাজার ৭৯৬ জন গ্র্যাজুয়েটকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি প্রদান করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট অনুষদের ডিনগণ অনুষদভুক্ত বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের ডিগ্রিপ্রাপ্ত গ্র্যাজুয়েটদের নাম উপস্থাপন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. এনামউজ্জামান সমাবর্তন অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন। অনুষ্ঠানে গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন চ্যান্সেলর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এ সময় মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘ডক্টর অব লজ’ ডিগ্রি প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করায় রাষ্ট্রপতি কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, শতবর্ষের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। শতবর্ষকে সামনে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক গবেষণা ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নে বিশেষ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে ‘মাস্টার প্ল্যান’ প্রণয়নের কাজ প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে। যুগের চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও গবেষণা কার্যক্রমকে ঢেলে সাজানোর চেষ্টা চলছে। গ্র্যাজুয়েটদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, জীবনের সব ক্ষেত্রে মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে। সমাবর্তন বক্তা অধ্যাপক ড. তাকাকি কাজিতা বৈশ্বিক উষ্ণতাকে নতুন প্রজন্মের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলীদের ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, বিজ্ঞান হচ্ছে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চাবিকাঠি। তাই তরুণ প্রজন্মকে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় আরও বেশি সম্পৃক্ত ও মনোযোগী হতে হবে।

সর্বশেষ খবর