বুধবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ডি-রেডিক্যালাইজেশন প্রক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগ

শেষ হলো উগ্রবাদ বিরোধী জাতীয় সম্মেলন-২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক

উগ্রবাদীদের ডি-রেডিক্যালাইজেশনের (উগ্রবাদের বীজ ঝেড়ে ফেলে দেওয়া) জন্য যথাযথ উদ্যোগ নেই। এসব অপরাধী চিহ্নিত হচ্ছে, গ্রেফতার হচ্ছে, কারাগারে যাচ্ছে, তবে তাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে কিংবা পুনর্বাসনে পদক্ষেপ নেই। এমন উদ্বেগজনক বার্তা দিয়েই শেষ হলো ‘উগ্রবাদবিরোধী জাতীয় সম্মেলন-২০১৯’। পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি), ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারসহ অনেকের বক্তব্যেই উঠে এসেছে ডি-রেডিক্যালাইজেশনের উদ্যোগের অভাবের কথা। তারা বললেন, সঠিক প্রক্রিয়ায় ডি-রেডিক্যালাইজেশন না হলে জঙ্গিবাদ কখনো শেষ হবে না। অন্যদিকে সন্তানরা যাতে কোনোভাবেই হতাশাজনক অবস্থানে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে অভিভাবকদের পরামর্শ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। একই সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় আসা বিভিন্ন তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পর বিশ্বাস করাতে আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘জঙ্গিবাদকে বাংলাদেশ আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়নি। আমাদের জঙ্গিবাদ দমন আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। ইসলামসহ সব ধর্ম মানব হত্যা ও জঙ্গি মতাদর্শ সমর্থন  করে না।’ অভিভাবকদের উদ্দেশে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সচেতন অভিভাবকরাই সন্তানদের প্রকৃত শিক্ষক। সন্তান যেন হতাশাজনক অবস্থানে না যায় সেদিকে অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে। একই সঙ্গে সন্তানরা কাদের সঙ্গে মেশে, কোথায় যায় এ বিষয়টির ওপরও নজর দিতে হবে অভিভাবকদের। এ ছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় আসা বিভিন্ন তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পর মানুষকে বিশ্বাস করার আহ্বান জানান তিনি। আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘২০১৬ সালের পরে দেশে বেশ কিছু অভিযান হয়েছে। আমরা জঙ্গিদের এনকাউন্টার করেছি, ধ্বংস করেছি বলেই এর সুফল এখন ভোগ করছি। কিন্তু বাইরে থেকে আমরা উগ্রবাদীদের চিহ্নিত করি, মামলা দিই, গ্রেফতার করে জেলে দিই। কিন্তু সেখানে তাদের সংশোধন হচ্ছে না। এ জায়গায় আমাদের কিছু কাজ করতে হবে। আমি এখানে (সম্মেলনে) এ ধরনের কোনো এনজিও দেখলাম না, যারা কারাগারে আসামিদের সংশোধনের বা ডি-রেডিক্যালাইজেশনে কাজ করে।’ কারাগারে এ আসামিদের ডি-রেডিক্যালাইজ করতে উপস্থিত বিভিন্ন সংস্থাকে উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। ‘প্রিভেনশন ইজ অলওয়েজ বেটার দ্যান কিওর’ উল্লেখ করে আইজিপি বলেন, ‘এ লক্ষ্যে জঙ্গিবাদ বিস্তার বন্ধে অ্যান্টিটেররিজম ইউনিট, কাউন্টার টেররিজম ইউনিট জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছে। আপনারা দেখেছেন তারা লিফলেট বিতরণ করছে। তবে যারা জঙ্গিবাদের অভিযোগে কারাগারে যাচ্ছে এবং জামিনে ফিরে আসছে, তাদের পুনর্বাসনে পরিকল্পনা করতে হবে। তারা আমাদের সমাজেরই সন্তান। তাদের মূল সমাজে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা থাকতে হবে। এ ছাড়া জঙ্গিবাদ নির্মূলে মোটিভেশনাল কাজটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশে এ কাজটি সবচেয়ে বেশি কার্যকরভাবে করেন ধর্মীয় নেতারা। তাদের বাণী মানুষ খুব সহজে গ্রহণ করেন। আমরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন মসজিদের ইমামদের মাদক, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রচার চালাতে বলেছি। এর ফলে যাদের জঙ্গিবাদে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, তারা ধর্মের সুষ্ঠু ব্যাখ্যা পেয়ে বিপথগামী হওয়া থেকে বিরত থাকবেন।’ ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘দেশে যদি আরেকটি হোলি আর্টিজানের মতো ঘটনা ঘটত, তাহলে সব উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ হয়ে যেত। মেট্রোরেল, পদ্মা সেতু, রূপপুর প্রজেক্টের বিদেশি এক্সপার্টদের ধরে রাখা যেত না। তবে আমরা এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটতে দিইনি। কিন্তু আমরা একটা জায়গায় ব্যর্থ হয়েছি, আমরা জঙ্গিদের ডি-রেডিক্যালাইজেশন করতে পারিনি। এ প্রক্রিয়ায় আমরা পিছিয়ে রয়েছি। তারা জেলে গিয়েও সংশোধন হতে পারছে না। তবে এটাও সত্য যে জেলে সে সুযোগ সীমিত।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর