বুধবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
কর্মজীবী নারীর সরকারি আবাসন

মেয়াদ উত্তীর্ণদের দখলে সিট

এক সিটের বিপরীতে তিন গুণ বেশি আবেদন। কোনো কোনোটিতে মেয়াদ শেষ হলেও পুরনো বোর্ডাররা সহজে সিট খালি করতে চান না। এতে সিটপ্রত্যাশী আবেদনকারীরা সহজে এসব হোস্টেলে থাকার সুযোগ পান না।

জিন্নাতুন নূর

মেয়াদ উত্তীর্ণদের দখলে সিট

নারীর ক্ষমতায়নের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে কর্মজীবী নারীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আর কাক্সিক্ষত কাজের খোঁজে শিক্ষিত নারীদের উল্লেখযোগ্য সংখ্যকই ভিড় জমান রাজধানী ঢাকায়। তবে চাকরিপ্রত্যাশী অবিবাহিত নারীদের কেউ কেউ ভাগ্যক্রমে সরকারি আবাসন সুবিধা পেলেও উল্লেখযোগ্য অংশই নিজের আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে গিয়ে দুর্ভোগে পড়ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকার তিনটি সরকারি কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলে সহজে সিট পাওয়া যায় না। এসব হোস্টেলের কোনো কোনোটিতে একটি সিটের বিপরীতে তিনগুণের বেশি আবেদন জমা পড়ে। আবার কোনো কোনোটিতে মেয়াদ শেষ হলেও পুরনো বোর্ডাররা সহজে সিট খালি করতে চান না। এতে সিটপ্রত্যাশী আবেদনকারীরা সহজে এসব হোস্টেলে থাকার সুযোগ পান না।

জানা যায়, রাজধানীর খিলগাঁওয়ে বেগম রোকেয়া কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলে বর্তমানে ২০ থেকে ২৫ জন পুরনো বোর্ডার অবস্থান করছেন যাদের হোস্টেলে থাকার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে। মানবিক কারণে হোস্টেল কর্তৃপক্ষ তাদেরকে হোস্টেল থেকে উচ্ছেদ করছেন না। তবে নতুন বোর্ডারদের চাপ বাড়লে পুরনো বোর্ডারদের সিট খালি করাতে প্রয়োজনে কঠোর হবেন হোস্টেল কর্তৃপক্ষ। রোকেয়া মহিলা হোস্টেল কর্তৃপক্ষ জানান, নতুন সিট পাওয়ার জন্য কর্মজীবী নারীরা অনলাইনে আবেদন করেন। এরপর হোস্টেল কর্তৃপক্ষ যাচাই-বাছাই শেষে সিট বরাদ্দ দেন। বর্তমানে চারতলা হোস্টেল ভবনে মোট ২০০টি সিটে কর্মজীবী নারীরা অবস্থান করছেন। এই ভবনটি দশতলা করা হচ্ছে। হোস্টেল সম্প্রসারণ হলে সিট বেড়ে ৫০০ হবে। হোস্টেলের প্রধান রাহেনুর বেগম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বর্তমানে নতুন বোর্ডারের চাপ কিছুটা কম। এ জন্য মানবিক কারণে মেয়াদ শেষ হলেও ২০ থেকে ২৫ জন পুরনো বোর্ডারকে অবস্থান করতে দেওয়া হয়েছে।

একই অবস্থা মিরপুরের নওয়াব ফয়জুন্নেসা কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলেরও। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একটি খালি সিটের বিপরীতে এখানে তিনগুণের বেশি আবেদনকারী রয়েছেন। কিন্তু এরপরও এই হোস্টেলে যেসব বোর্ডারের মেয়াদ শেষ হয়ে যায় তাদের সহজে উঠানো সম্ভব হয় না। হোস্টেল কর্তৃপক্ষ জানান, সর্বশেষ ২০১৭ সালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় মোট পাঁচজন মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া বোর্ডারকে সিট খালি করতে বাধ্য করানো হয়। বর্তমানেও কয়েকজন বোর্ডার রয়েছেন যাদের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এই হোস্টেলের প্রোগ্রাম অফিসার (অতি. দায়িত্ব) ছামিনা হাফিজ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মানবিক কারণে এখনো দু-একজনের মেয়াদ শেষ হলেও তাদের তুলে দিতে পারছি না। তিনি জানান, বর্তমানে হোস্টেলের সম্প্রসারণ কাজ চলছে। আশা করা হচ্ছে ২০২০ সালের মে মাসে ভবন সম্প্রসারণের কাজ শেষ হবে। আর সম্প্রসারণ কাজ শেষে হোস্টেলের সিট সংখ্যা ১৫৪ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৮৭৪-এ দাঁড়াবে। তবে ঢাকার কর্মজীবী হোস্টেলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়ে নীলক্ষেত কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলে। দেখা যায়, কোনো মাসে এই হোস্টেলে ১০টি সিট খালি হলে এর বিপরীতে ১৫০টি পর্যন্ত আবেদনপত্র জমা পড়ে। মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার কাছে অবস্থান হওয়ায় এবং সুযোগ-সুবিধা বেশি হওয়ায় এ হোস্টেলে থাকার ব্যাপারে নারীদের আগ্রহ বেশি। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা নারীরা চাকরি পেয়েই বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার মধ্যে থাকার জন্য এখানে উঠতে ইচ্ছুক। প্রতিযোগিতা বেশি হওয়ায় সিট পেতে অনেক সময় প্রভাবশালীদের দিয়ে হোস্টেল কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ করতে দেখা যায়। নীলক্ষেত কর্মজীবী মহিলা হোস্টেলের সমন্বয়কারী সাবেকুন নাহারও খালি সিটের বিপরীতে আবেদনকারীর সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান। তিনি বলেন, বর্তমানে হোস্টেলের সম্প্রসারণ কাজ চলছে। আর কাজ শেষে এখানকার সিট বেড়ে হবে ৭০০টি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর