বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ড্রামবন্দী স্ত্রী ও ঝুলন্ত স্বামীর লাশ

বনানীতে চীনা নাগরিক খুন

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীতে বাড়ির ছাদে ড্রামবন্দী অবস্থায় এক নারী ও ফাঁস নিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় এক পুরুষের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল গভীর রাতে ফকিরাপুলের কোমরগলির ৫৫ নম্বর বাড়ির (রতনদের বাড়ি)  ৫ম তলায় এ লাশ পাওয়া যায়।  পুলিশ জানিয়েছে, মহিলার লাশ একটি ড্রামের ভিতরে ছিল। ড্রামের উপরিভাগ সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই করা ছিল। আর পুরুষের লাশ উদ্ধার করা হয় ছাদের চিলেকোঠায় গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ওই বাসার কেয়ারটেকার ছিলেন ওই পুরুষ। নিহত আরেকজন তার স্ত্রী। পুলিশের ধারণা- কেয়ারটেকার তার স্ত্রীকে হত্যার পর লাশ লুকানোর জন্য ড্রামে ভরে ওপর দিয়ে ঢালাই করে দেয়। পরে সে নিজেও আত্মহত্যা করে। স্থানীয়রা বলছেন, কেয়ারটেকার আর তার স্ত্রীর কোনো খোঁজখবর না পেয়ে বাসার লোকজন ছাদে খুঁজতে গিয়ে প্রকট গন্ধ পান।

বনানীতে চীনা নাগরিক খুন, উধাও ফুটেজ : রাজধানীর বনানীর একটি আবাসিক ভবনে জো জিয়াং হু (৪৮) নামে এক চীনা নাগরিক খুন হয়েছেন। গতকাল দুপুরে বনানীর ২৩ নম্বর সড়কের ৮২ নম্বর বাসার দেয়াল ও সীমানাপ্রাচীরের মাঝখানে মাটিচাপা দেওয়া অবস্থায় লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খুনিরা নিজেদের আড়াল করতে সিসিটিভি ক্যামেরার সংযোগ এবং আগের ফুটেজ মুছে ফেলে। খুনের রহস্য উদ্্ঘাটনে গাড়িচালক সুলতান, নিরাপত্তারক্ষী জয় নন্দী, আবদুর রউফ, সুপারভাইজার লাভলু আহমেদ ও গৃহকর্মী ফরিদাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। বনানী ২৩ নম্বর সড়কের ৮২ নম্বর আট তলা ‘সুবাস্তু মাহবুবা হাইটস’ ভবন। এ ভবনেরই ৫/বি ও ৬/বি ডুপ্লেক্স ফ্ল্যাটে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর থেকে মাসিক ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা ভাড়ায় পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন জো জিয়াং হু। গতকাল সরেজমিনে ওই ভবনে গিয়ে দেখা যায়, খবর পেয়ে থানা পুলিশ, র‌্যাব ও বিভিন্ন সংস্থার লোকজন ভবনটি ঘিরে রেখেছেন। ছয় তলার ৬/বি নম্বর ফ্ল্যাটের ভিতরে আলামত সংগ্রহ করছেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) ক্রাইম সিন ইউনিটের সদস্যরা। জো জিয়াং হু খুন হয়েছেন এমন খবরে ঘটনাস্থলে ছুটে এসেছেন বাংলাদেশে বসবাসরত তার পরিচিত চীনা নাগরিকরা। জানা গেল, জো জিয়াং হু বিভিন্ন প্রজেক্টে পাথর সরবরাহ করতেন। পদ্মা সেতু প্রকল্পেও তিনি ১ লাখ পিস পাথর সরবরাহ করেছেন বলে ঘটনাস্থলে আগত অনেকেই জানিয়েছেন।

বনানীতে ওঠার আগে তিনি দীর্ঘদিন উত্তরায় বসবাস করেছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ওই ভবনের পেছনের দিকে মাটিচাপা দিয়ে রাখা হয় জো জিয়াং হুকে। ওইখানে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরা সংযোগ আগে থেকেই বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল খুনিরা। একই সঙ্গে সিসিটিভি সিস্টেমের ডিভিআর অ্যাডাপ্টারের সংযোগ বিচ্ছিন্ন। ২২ অক্টোবর থেকে গতকাল পর্যন্ত সব মেমোরিও মুছে ফেলা হয়েছে। এর আগে ডিভিআর অ্যাডাপ্টারে প্রবেশ করতে পাসওয়ার্ড ভাঙতে ছয়বার চেষ্টা করেছেন বলে এরই মধ্যে নিশ্চিত হয়েছেন ডেভেলপার কোম্পানি সুবাস্তুর আইটি বিশেষজ্ঞরা। স্ত্রী লুই সি সি ও দুই সন্তান মাঝেমধ্যে বাংলাদেশে আসেন। নিহতের স্ত্রী ও দুই সন্তান বেশ কিছুদিন বাংলাদেশে থাকার পর ২০ দিন আগে চীন চলে যান। গৃহকর্মী ফরিদা আক্তার এই প্রতিবেদককে বলেন, তিনি দুই বছর ধরে জোর বাসায় কাজ করেন। গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গৃহস্থালির কাজের জন্য ফ্ল্যাটে গিয়ে কল বেল টিপলেও কেউ খুলছিল না।

পরে তার কাছে থাকা চাবি দিয়ে দরজা খুলতেই বুঝতে পারেন দরজা খোলা। ফ্ল্যাটে ঢুকে কোথাও গৃহকর্তাকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তবে জোর জুতায় রক্ত দেখে বিষয়টি নিরাপত্তারক্ষী ও গাড়িচালক সুলতানকে অবহিত করেন। এর পরই পুলিশ আসে।

গুলশান বিভাগের উপকমিশনার সুদীপ চক্রবর্তী সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তেই মনে হয়েছে চীনা নাগরিককে পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে। নিহতের গলায় আঘাতের কালো দাগ রয়েছে। আমরা পুরো বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। সব সম্ভাব্য কারণ আমলে নিয়েই খুনের রহস্য উন্মোচনের চেষ্টা করছি। আশা করি শিগগিরই খুনিদের চিহ্নিত করতে পারব।’

সর্বশেষ খবর