শিরোনাম
শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

মেয়াদোত্তীর্ণ বিদেশি পণ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকি

অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ছে নকল সামগ্রী, লেখা হচ্ছে নতুন তারিখ

আলী রিয়াজ

মেয়াদোত্তীর্ণ বিদেশি পণ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকি

বিদেশি নামি প্রতিষ্ঠানের মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যে বাংলাদেশের বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার কিছুদিন আগে আমদানি করে নতুন তারিখ লিখে সেসব পণ্য ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিদেশি পণ্যটির দাম রাখা হচ্ছে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম। একটি চক্র মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য আমদানি ও বিক্রি করে ক্রেতাদের প্রতারণা করছে। সম্প্রতি অনলাইনে ব্যাপকভাবে বিক্রি হচ্ছে এ ধরনের বিদেশি পণ্য। শুধু অনলাইনেই নয় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শপিং মলেও বিক্রি করে সেসব। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য, কসমেটিকস, ব্যবহার্য নানা ধরনের সামগ্রী। মেয়াদোত্তীর্ণ এসব পণ্য ব্যবহারের ফলে বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য ব্যবহারের ফলে ক্যান্সারের মতো রোগও হতে পারে। এসব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারি বাড়ানো উচিত।

জানা গেছে, বাংলাদেশের বাজারে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, হংকং, চীন, পাকিস্তান, ভারতসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে নানা ধরনের খাদ্য পণ্য আমদানি করা হয়। খাদ্য পণ্যের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফলমূল, আচার, জুস, সামুদ্রিক মাছ, বেভারেজ, শিশুখাদ্য  ইত্যাদি। এ ছাড়া কসমেটিকস, নিত্যব্যবহার্য বিভিন্ন পণ্য, সাবান, শ্যাম্পু, লোশন, ফোম, বডি ¯ন্ডেপ্রসহ নানা ধরনের পণ্য। মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার কিছু আগে এসব পণ্য সংশ্লিষ্ট দেশের স্থানীয় অসাধু ব্যক্তিদের সহায়তায় নামমাত্র মূল্যে কিনে নিয়ে বাংলাদেশে আমদানি করা হয়ে থাকে। দেশে আনার পর পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবহারের মেয়াদ উল্লেখ করে নতুন করে তারিখ বসানো হয়। যে দেশ থেকে আমদানি করা হয় সে দেশের খুচরা মূল্যের চেয়ে বাংলাদেশে কম মূল্যে বিক্রি করা হয় এসব পণ্য।  বিভিন্ন দেশ থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ খেজুর আমদানি করে বাংলাদেশ কম দামে বিক্রির ঘটনা গত কয়েক বছরে ব্যাপকভাবে বেড়েছে। বাজারে প্যাকেট খেজুর ছাড়া বস্তাজাত কোনো খেজুরেই প্রক্রিয়াজাত ও ব্যবহারের মেয়াদকাল উল্লেখ থাকে না। খোলা বাজারে বিক্রি হওয়া খেজুরের মেয়াদকাল ঠিক কবে শেষ হয়েছে তা জানাই মুশকিল হয়ে পড়ে ভোক্তাদের। এসব পণ্যের সাধারণ মান সম্পর্কে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বিএসটিআই বা টিসিবির কাছেও কোনো তথ্য থাকে না। বিভিন্ন সময় পচা খেজুর বিক্রির দায়ে অসাধু ব্যবসায়ীদের জরিমানার ঘটনা ঘটেছে। এরপরেও বন্ধ হয়নি এসব পণ্য আমদানি। বাংলাদেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বৈধ আমদানির পাশাপাশি অবৈধভাবে দেশের বাজারে আসছে ইলেকট্রিক পণ্য, প্যাকেটজাত মসলা, হরলিকস, তেল, কসমেটিকস, ক্রিম, পাউডার, চা পাতা ও গুঁড়া দুধ ইত্যাদি। এসব মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বাংলাদেশে এনে নতুন তারিখ বসিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে একদিকে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ভোক্তা অধিকার বিষয়ক বেসরকারি সংস্থা কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিদেশ থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যের আমদানিকারক ও বিক্রেতাদের অনুকম্পা দেখানোর সুযোগ নেই। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ জরুরি। পাশাপাশি আমদানি পর্যায়ে পণ্য খালাসে কাস্টমস বিভাগকেও নজরদারি বাড়াতে হবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া এই জাতীয় পণ্য খালাস হতে দেওয়া যাবে না। ক্যাব সভাপতি অতি মুনফালোভীদের বিরুদ্ধে কঠোর শস্তিমূলক পদক্ষেপ দাবি করে আরও বলেন, মাঠে সরকারকে সারা বছর সজাগ থাকতে হবে। প্রয়োজনে আইন-প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সহায়তা নিতে হবে। নকল ও মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য প্রতিরোধে নজরদারির বিকল্প নেই।

সর্বশেষ খবর