রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

কান্তার শেষ পরিণতি এক বছরেও অজানা

মাহবুব মমতাজী

কান্তার শেষ পরিণতি এক বছরেও অজানা

মার্জিয়া সুলতানা কান্তা (২৬)। পেশায় বিউটিশিয়ান। থাকতেন ঢাকার আশুলিয়ায়। দুই বছর আগে শহিদুল ইসলাম সাগরের (৩৮) সঙ্গে তার বিয়ে হয়। এক বছর আগে সাগর তাকে নিয়ে বেড়ানোর কথা বলে শরীয়তপুরে যান। সেখানে একটি আবাসিক হোটেলে রাতযাপন করেন। এর পর থেকে কান্তা উধাও। কান্তা এখন কোথায়? প্রশ্নটির কিনারা এক বছরেও হলো না। তার কী হয়েছে? শেষ পরিণতি কী? সবই অজানা। তার সেই কথিত স্বামীও এ বিষয়ে মুখ খুলছেন না। তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনও (পিবিআই) গত এক বছরে কান্তার অন্তর্ধানের রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি। মেয়ের কোনো খোঁজ না পেয়ে ঘটনার প্রায় তিন মাস পর আদালতের শরণাপন্ন হন কান্তার বাবা সোহরাব হোসেন রতন। তিনি গত ২০ জানুয়ারি নরসিংদীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে অভিযোগ করেন। আদালত ২৪ জানুয়ারি তার অভিযোগটি এফআইআর হিসেবে গণ্য করতে নরসিংদীর বেলাব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেয়। ওসি জাবেদ মাহমুদ ৩১ জানুয়ারি মামলাটি গ্রহণ করেন। আদালতে দাখিল করা অভিযোগে দেখা যায়, সাগর ২০১৭ সালের ১৮ আগস্ট কান্তাকে বিয়ে করেন। গত বছরের ২২ আগস্ট নির্যাতনের পর যৌতুক হিসেবে ২ লাখ টাকা জোগাড় করে আনার জন্য কান্তাকে তার বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেন। এর মাসখানেক পর সাগর নরসিংদীতে শ্বশুরবাড়ি গিয়ে কান্তাকে আশুলিয়ার জামগড়ায় তাদের ভাড়া বাসায় নিয়ে আসেন। এখানে আসার পর সস্ত্রীক যশোর বেড়াতে যাচ্ছেন জানিয়ে কান্তাকে নিয়ে ২১ সেপ্টেম্বর শরীয়তপুরে যান। এর পর থেকে সাগরের ফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। প্রায় তিন মাস মেয়ের কোনো খোঁজ না পেয়ে ১০ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার চরবামনের চরে (খলিগঞ্জ) সাগরের গ্রামের বাড়িতে যান সোহরাব হোসেন রতন। সেখানে সাগরের কাছে তার মেয়ের বিষয়ে জানতে চান। জবাবে সাগর তাকে বলেন, কান্তা সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। এ কথা বলে উল্টো তাকে আরও গালিগালাজ করেন এবং নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে তাড়িয়ে দেন। পরে ফোন করে তার মেয়েকে জীবিত ফেরত পেতে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, গ্রেফতারের পর ১৭ নভেম্বর সাগরকে আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে জেলহাজতে পাঠান। ১৯ নভেম্বর তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ডে থাকাকালে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, শরীয়তপুর পৌরসভায় পাঁচ তলাবিশিষ্ট হোটেল নুর ইন্টারন্যাশনালে তার এক বন্ধুর পরিচয়ে অবস্থান করেন। ওই হোটেলে স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে ১ হাজার টাকা ভাড়ায় ৩০৭ নম্বর রুমে তারা ছিলেন। ওই হোটেলে অবস্থানকালে সাগর নিজের ফোন বন্ধ করে রেখে কান্তার ফোন নম্বর ব্যবহার করে বিভিন্ন স্থানে কথা বলেন। ওই রাতে কান্তার কাছে তার বাবা ফোন করলে সাগর রিসিভ করে তাকে জানান কান্তা ঘুমাচ্ছেন। এরপর কান্তার আর কোনো খোঁজ নেই। স্বজনদের ধারণা, সাগর হয়তো কান্তাকে হত্যা করে লাশ গুম করেছেন অথবা মুক্তিপণ আদায়ের জন্য কোথাও আটকে রেখেছেন। কিংবা তাকে দেশের বাইরে পাচার করেছেন।

কান্তার বড়বোন রিতা এই প্রতিবেদককে জানান, তার বোন প্রেম করে সাগরকে বিয়ে করেন। কান্তা নিখোঁজ হওয়ার পর বিভিন্ন স্থানে সন্ধানের সময় তারা জানতে পারেন সাগরের একাধিক বিয়ে ছিল। সাগর যেখানেই গেছেন সেখানেই একটি করে বিয়ে করেছেন। হয়তো টাকার জন্য কান্তাকেও তিনি বিয়ে করে দেশের বাইরে কোথাও বিক্রি করে দিয়েছেন বলে আশঙ্কা করেন তিনি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইর পরিদর্শক সফিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, সাগর ভদ্রবেশী প্রতারক। আর্থিকভাবে সচ্ছল মেয়েদের টার্গেট করে মিথ্যা পরিচয়ে তাদের আকৃষ্ট করতেন, পরে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করতেন। কখনো নিজের নামে কোনো মোবাইল সিম ব্যবহার করতেন না। আশুলিয়ায় কান্তার দুটি বিউটি পারলারের জমজমাট ব্যবসা ছিল। এই লোভে কান্তাকেও প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করেন। সর্বশেষ রিমান্ডে তার কাছ থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। কান্তার নিখোঁজের রহস্য উদ্ঘাটনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চলছে।

সর্বশেষ খবর