রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের নিরাপত্তাঝুঁকি খতিয়ে দেখতে আসছে মার্কিন টিম

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরের নিরাপত্তাঝুঁকি খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশে আসছে মার্কিন কোস্টগার্ডের একটি প্রতিনিধি দল। বন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে এর আগে বাংলাদেশকে যে ১৬ দফা নির্দেশনা দিয়েছে মার্কিন কোস্টগার্ড, মূলত তার অগ্রগতি খতিয়ে দেখতে আসছে প্রতিনিধি দলটি।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় জানায়, দুই সদস্যের এই প্রতিনিধি দলে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ডের ইন্টারন্যাশনাল পোর্ট সিকিউরিটি লিয়াজোঁ অফিসার ওয়েড থমসন ও একই সংস্থার বন্দর নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ স্কট ওল্যান্ড। আগামীকাল ১৬ ডিসেম্বর প্রতিনিধি দলটির ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রয়েছে। ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা সরেজমিন পরিদর্শন করে চট্টগ্রাম বন্দরের আইএসপিএস কোড বাস্তবায়নের প্রাথমিক প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ করবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী হামলার পর জাতিসংঘের অধীন আন্তর্জাতিক নৌ সংস্থা বিভিন্ন বন্দরের নিরাপত্তা-সংক্রান্ত ব্যবস্থা বা আইএসপিএস কোড (জাহাজ ও বন্দর স্থাপনার নিরাপত্তাঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম) প্রণয়ন করে। জাহাজ বা কনটেইনারে বিপজ্জনক পণ্য পরিবহন করে কেউ যাতে তা সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে ব্যবহার করতে না পারে সে জন্যই এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৪৮টি দেশের বন্দরে তা বাস্তবায়িত হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরে এ উদ্যোগ প্রথম নেওয়া হয় ২০০৪ সালের ১ জুলাই। এরপর মার্কিন কোস্টগার্ড কয়েক দফা পরিদর্শন করে বন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা পর্যালোচনা করে ঝুঁকি মোকাবিলায় ১৬টি নির্দেশনা দেয়। বন্দর কর্তৃপক্ষ সেগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করেছে কি না সেটিই দেখবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলটি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (নিরাপত্তা) লে. কর্নেল আহমেদ জুনাইদ আলম খান, পিবিজিএম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইন্টারন্যাশনাল শিপ অ্যান্ড পোর্ট ফ্যাসিলিটি সিকিউরিটি কোড মেনে বন্দরের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলোতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো এরই মধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। পণ্য পরীক্ষার জন্য দুটি স্ক্যানার আনা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গেটগুলোতে বসানো হয়েছে এক্সেস কন্ট্রোল সিস্টেম। স্থাপন করা হয়েছে আর্চওয়ে ও মেটাল ডিটেক্টর। অনাহূত ব্যক্তির প্রবেশাধিকার ঠেকাতে ডিজিটাল পোর্ট এন্ট্রি পাস দেওয়া হয়েছে লক্ষাধিক ব্যক্তিকে। বন্দর ব্যবহারকারীদের বায়োমেট্রিক ডাটাবেজ সম্পন্ন হয়েছে। বন্দরে পণ্য আনা-নেওয়া করতে যেসব ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও ট্রেইলার চালক এবং সহকারী রয়েছেন, তাদেরও আনা হয়েছে ডাটাবেজের আওতায়। এ ছাড়া বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোকে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। সূত্রগুলো জানায়, এর আগে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে আইএসপিএস কোডের শর্ত অনুযায়ী বন্দরের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি পরিদর্শনে এসেছিল মার্কিন প্রতিনিধি দল। সেই সময় বন্দরের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নয়নে ১৬ দফা নির্দেশনার মধ্যে মোটাদাগে যেসব বিষয় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো হচ্ছে- বন্দর এলাকাকে সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনা, বন্দরের অভ্যন্তরে পণ্য খালাস না করে সেটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া, বন্দরের ভিতরে যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে পণ্য ডেলিভারির নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। কারণ প্রতিদিন কয়েক হাজার ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, ট্রেইলারের চালক, সহকারী ছাড়াও লোড-আনলোডে কর্মরত শ্রমিকরা সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশ করেন। যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছিল বন্দরের অভ্যন্তরে কোনো পণ্য ডেলিভারি না দিয়ে তা অন্যত্র খালাস করার জায়গা খুঁজতে। তবে ৩৭ ধরনের আমদানি পণ্য ১৮টি বেসরকারি আইসিডিতে খালাস করলেও পণ্য ডেলিভারির বিকল্প ব্যবস্থা এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রস্তাবিত বে-টার্মিনাল প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বন্দরের অভ্যন্তরে সংরক্ষিত এলাকা থেকে পণ্য খালাস কার্যক্রম শুরু হবে। তখন চট্টগ্রাম বন্দরের সংরক্ষিত এলাকা আরও সুরক্ষিত হবে। গাড়ি আসা-যাওয়া কমে গেলে বাড়ানো যাবে সংরক্ষিত এলাকার নজরদারিও।

সর্বশেষ খবর