শুক্রবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

স্বামীর নৃশংস হত্যার শিকার ধর্মান্তরিত শাহনাজ

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

খ্রিস্টান থেকে মুসলমান হয়েছিলেন সন্ধ্যা। ধর্মান্তরিত হওয়ার পর তার নাম রাখা হয় শাহনাজ। বাড়ি থেকে ত্যাজ্য হয়ে আশ্রয় নেন এক মুসলমানের বাড়িতে।

সেখানে পরিচয় হয় আশ্রয়দাতার ভাগ্নের সঙ্গে। গত ঈদুল আজহার পর আশ্রয়দাতা নূরুল ইসলামের ভাগ্নে মোজাম্মেল মিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় তার। কিন্তু সংসার খুব সুখের হয়নি। দাম্পত্যকলহ আর সন্দেহে স্বামীর হাতে নির্মমভাবে খুন হতে হয়েছে সন্ধ্যা ওরফে শাহনাজকে। তার এ খুনের ঘটনা যেন সব বর্বরতাকেও হার মানিয়েছে। ঘাতক স্বামীর বরাত দিয়ে গতকাল এ খুনের ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন সিলেটের পুলিশ সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন। ঘাতক স্বামী সিলেটের ওসমানীনগর থানার বুরুঙ্গা ইউনিয়নের দক্ষিণ কলারাই গ্রামের মৃত জিলু মিয়ার ছেলে মোজাম্মেল মিয়া সেই নির্মম হত্যাকাে র বর্ণনা দিয়েছেন আদালতে।

গত ২ ডিসেম্বর রাত ৮টায় বুরুঙ্গার যুগনীঘর বিল থেকে মস্তকবিহীন এক তরুণীর বিবস্ত্র লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এর এক সপ্তাহ পর ওই বিল থেকেই উদ্ধার করা হয় মাথার খুলি। এ ঘটনায় পুলিশ ১৬ ডিসেম্বর গ্রেফতার করে মোজাম্মেলকে। পরে তিনি লাশ শনাক্ত করে পুলিশ ও আদালতের কাছে হত্যাকাে র বর্ণনা দেন। মোজাম্মেলের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে সিলেট জেলা পুলিশ সুপার মো. ফরিদ উদ্দিন আরও জানান, বিয়ের কিছুদিন পরই শাহনাজ পরকীয়ায় আসক্ত হন। এ নিয়ে স্বামীর সঙ্গে তার প্রায়ই ঝগড়া হতো। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় শাহনাজকে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে থাকতেন মোজাম্মেল। গত ৩০ নভেম্বর সিলেট নগরের চ ীপুল থেকে সিএনজি অটোরিকশাযোগে গোয়ালাবাজার যান মোজাম্মেল ও শাহনাজ। সেখান থেকে শাটকিলা হয়ে ধানি জমির ভিতর দিয়ে উনিশমাইল নামক এলাকায় মোজাম্মেলের বড় খালা ফুলমতির বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন দুজন। অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় মোজাম্মেলের হাতে থাকা গ্যাস লাইটের আলোয় তারা পথ চলছিলেন। পথিমধ্যে অন্ধকারে ধানি জমির মধ্যে শাহনাজ দৈহিক মিলনের জন্য মোজাম্মেলকে চাপাচাপি শুরু করেন। এ সময় মোজাম্মেল শাহনাজকে ধমক দেন। এ নিয়ে দুজনের ঝগড়া শুরু হলে শাহনাজ বাড়ি ফিরে জনৈক মোহনকে বিয়ে করার হুমকি দেন। মোহনকে বিয়ের পর তাকে ‘মা’ ডাকতে হবে বলেও কটূক্তি করেন শাহনাজ। এ সময় মোজাম্মেল গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ^াসরুদ্ধ করে হত্যা করেন তাকে। এরপর লাশ গুমের জন্য মোজাম্মেল শাহনাজের পরনের সব কাপড় খুলে বিবস্ত্র করে পাশের উনিশমাইল বাজারে যান। সেখান থেকে একটি চিকন স্টিলের পাত ও সিমেন্টের প্লাস্টারের দুটি টুকরো নিয়ে ফের লাশের পাশে আসেন। সিমেন্টের প্লাস্টারে স্টিলের পাতটি ঘষে ছোরার মতো তৈরি করে শাহনাজের শরীর থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করেন। এরপর শরীর থেকে মাথা, নাক, কান ও স্তন দুটি বিচ্ছিন্ন করে দূরে ছুড়ে ফেলে দেন। তবে মাথাটি বিলের কাদার মধ্যে পুঁতে এসে ফের শাহনাজের ঊরু ও পেটে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে লাশ আবর্জনা ও কাদামাটি দিয়ে ঢেকে রেখে পালিয়ে যান। ফেরার পথে নাটকিলা নদীর পাশের একটি ইটভাটায় শাহনাজের কাপড়-চোপড় পুড়িয়ে দেন।

সর্বশেষ খবর